রমজান ও জুমা একইদিনে হলে স্বাভাবিকভাবেই দিনটির গুরুত্ব বেড়ে যায়। কেননা জুমার দিন হচ্ছে সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন আর রমজান মাসকে বলা হয় সাইয়িদুশ শুহুর বা সব মাসের সেরা মাস। পবিত্র রমজানে যেকোনো ইবাদতের মর্যাদা অনেক বেশি। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, ‘মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন, কিন্তু সিয়ামের বিষয়টি ভিন্ন। কেননা সিয়াম শুধুমাত্র আমার জন্য, আমিই এর প্রতিদান দেব। (মুসলিম: ১১৫১)
এই হাদিস থেকে বুঝা গেলো- রোজাদারের রোজার পুরস্কার যেমন বিস্ময়কর, তেমনি রোজার সময় অন্যান্য নেক আমলেরও মর্যাদা বেশি। কারণ রোজাদারের পুরস্কারের ঘোষণা স্বয়ং আল্লাহর। আর মহান আল্লাহ যে পুরস্কারকে নিজের জন্য আবশ্যক করে নিয়েছেন, সেখানে রোজাদারের কোনো দিকই বাদ যাবে না। আর নিশ্চয়ই সেই পুরস্কার হবে সীমাহীন, কল্পনাতীত।
সুতরাং রমজানে অন্যান্য নেক আমল যেমন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, তারাবি ইত্যাদির মতো জুমার দিনের গুরুত্বও অনেক বেশি। জুমার দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে জুমার নামাজ। খুতবার পরের এই দুই রাকাত নামাজ পড়তে হয়। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন— يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ ‘হে মুমিনগণ, জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর ইবাদতের জন্য দ্রুত বেরিয়ে যাও এবং বেচা-কেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝ।’ (সুরা জুমা: ০৯)
জুমার আজান হলে বেচাকেনা বন্ধ করা এবং নামাজের জন্য আগেভাগে মসজিদ যাওয়ার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে প্রথম মসজিদে হাজির হয়, সে যেন একটি উট কোরবানি করল; দ্বিতীয় যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে, সে যেন একটি গরু কোরবানি করল; তৃতীয় যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল এবং সে যেন একটি ছাগল কোরবানি করল। অতঃপর চতুর্থ যে ব্যক্তি মসজিদে গেল, সে যেন একটি মুরগি সদকা করল। আর পঞ্চম যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল, সে যেন একটি ডিম সদকা করল। এরপর ইমাম যখন বেরিয়ে এসে মিম্বরে বসে গেলেন খুতবার জন্য, তখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুতবা শুনতে বসে যায়।’ (বুখারি: ৮৮১)
জুমার দিনের গুরুত্ব বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, যে দিনগুলোতে সূর্য উদিত হয়, ওই দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। ওই দিন হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করা হয়েছে। ওই দিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং ওই দিনই তাকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়। আর ওই দিনই কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। (মুসলিম: ৮৫৪)
আলেমদের পরামর্শ- রমজান মাসের জুমার দিনগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। জুমার দিনের আদবগুলো যথাযথ মেনে চলা উচিত হবে। কোনোভাবেই যেন আদবের খেলাফ না হয় সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। জুমার দিনের বিশেষ আদবগুলোর মধ্যে রয়েছে- মেসওয়াক করা, ভালোভাবে গোসল করা, পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা, পারলে সুগন্ধি ব্যবহার করা, খুতবার সময় চুপ থাকা এবং মনোযোগের সঙ্গে খুতবা শোনা, সুরা কাহাফ পড়া, বেশি বেশি দরুদ পড়া, দোয়া কবুলের দিনে দোয়া করা বিশেষ করে আছরের সময়টি দোয়ায় অতিবাহিত করা।
জুমার দিন দোয়া কবুল হওয়ার প্রসঙ্গে নবী (স.)ইরশাদ করেছেন, জুমার দিন দোয়া কবুল হওয়ার একটি সময় আছে , কোনো মুসলিম যদি সেই সময়টা পায়, আর তখন যদি সে নামাজে থাকে, তাহলে তার যেকোনো কল্যাণ কামনা আল্লাহ পূরণ করেন। (বুখারি: ৬৪০০)
সালমান ফারসি (রা.) বলেন, মহানবী (স.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে ভালোরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, নিজের ঘরের তেল, সুগন্ধি ব্যবহার করে বের হয় এবং দু’জন লোকের মাঝে ফাঁকা জায়গা না রেখে তার নির্ধারিত নামাজ আদায় করে এবং ইমামের খুতবা দেয়ার সময় চুপ থাকে তাহলে তার জুমা থেকে আরেক জুমা পর্যন্ত সময়ের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (বুখারি: ৮৩৯)
কোনোভাবেই জুমার নামাজ মিস করা যাবে না। জুমা ত্যাগ করার বিষয়টি অন্য ফরজ নামাজের চেয়েও মারাত্মক। জুমা ত্যাগকারীদের অন্তর কঠিন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি, যার পরিণতিতে সে নেক আমল করার সুযোগ হারিয়ে ফেলবে। আবু ইয়ালা (রহ) বিশুদ্ধ সনদে ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি তিন জুমা লাগাতার বর্জন করল সে ইসলাম থেকে নিজেকে দূরে ঠেলে দিলো। (আবু ইয়ালা: ২৭১২, সহিহ তারগিব: ৭৩৩)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে পবিত্র রমজানে জুমার দিনের গুরুত্ব বোঝার তাওফিক দান করুন। জুমার নামাজ যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সবুজদেশ/এসইউ