মাহে রমাযান: মুমিনের পূণ্যেভরা বসন্ত
ফারুক নোমানীঃ
হিজরীবর্ষের নবম মাসটির নাম রমাযান। এ মাসের মর্যাদা ও মাহাত্ম্য বলার অপেক্ষা রাখে না। অন্যান্য মাস থেকে রমাযানের আলাদা মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ মাস আল্লাহ তা‘য়ালার অধিক নৈকট্য লাভের উত্তম সময়। পরকালীন পাথেয় অর্জনের উৎকৃষ্ট মৌসুম। ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-আযকার এবং তাযকিয়া ও আত্মশুদ্ধির ভরা বসন্ত। মুমিন বান্দার জন্য রমাযান আল্লাহর অনেক বড় একটি নিয়ামত। এ মাসের প্রতিটি রাত ও দিনে তিনি বৃষ্টির মতো মুষলধারায় বরকত ও কল্যাণ বর্ষণ করেন। এ মাসে বান্দা পার্থিব সকল চাহিদা বিসর্জন দিয়ে আল্লাহর দয়া ও রহমত লাভ করবে। অতীতের সকল পাপাচার থেকে ক্ষমা চেয়ে নতুনভাবে ঈমানী জিন্দেগীর উত্তাপ গ্রহণ করার চেষ্টা করবে। তাকওয়ার অনুশীলনের মাধ্যমে পুরো বছরের ইবাদতের শক্তি সঞ্চয় করবে। চিন্তা-চেতনা, কর্ম-সাধনায় আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে সমর্পিত করবে। কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন আয়াত ও হাদীস শরীফে রমাযানের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। নিচেয় তার কিছু তুলে ধরা হলো।
১. রমাযান সিয়াম ও কিয়ামের মাস
রমাযান মাস সিয়াম সাধনা তথা রোযা পালনের মাস। একইভাবে তা কিয়ামুল্লাইল বা তারাবীহ/তাহাজ্জুদের মৌসুম। এ মাসে আল্লাহ তা‘য়ালা রোযা রাখা ফরয করেছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন-‘হে মুমিনগণ তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি; যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বনকারী হতে পার। (সুরা বাকারা ১৮৩)
তিনি আরো বলেন-‘রমযান মাস। যাতে কুরআন নাযিল হয়েছে। যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সুপথ প্রাপ্তির সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর হক-বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী। সুতরাং তোমাদের যে কেউ এ মাস পাবে সে যেন অবশ্যই এর রোযা রাখে।’ (সুরা বাকারা ১৮৫)
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি রমযান মাসে ঈমানের সাথে, সাওয়াবের নিয়তে তারাবীহ পড়ে, তার অতীতের গোনহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (সহীহ বুখারী ২০০৮, ২০০৯, সহীহ মুসলিম ৭৫৯, তিরমিযী ৬৮৩, ৮০৮, আবু দাউদ ১৩৭১)
২. কুরআনুল কারীম অবতীর্ণ হওয়ার মাস
রমযানুল মুবারকের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো তা কুরআন নাযিলের মাস। এই মাসেই পূর্ণ কুরআন লাওহে মাহফুয থেকে দুনিয়ার আসমানে অবতীর্ণ হয়। তারপর নবীজী সা. এর নিকট কুরআনের সর্বপ্রথম ওহীও এ মাসেই নাযিল হয়। আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন- ‘রমযান মাস। যাতে কুরআন নাযিল হয়েছে। যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সুপথ প্রাপ্তির সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর হক-বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী। সুতরাং তোমাদের যে কেউ এ মাস পাবে সে যেন অবশ্যই এর রোযা রাখে।’ (সুরা বাকারা ১৮৫)
আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা. বলেন: জিবরাঈল আ. রমযানের প্রতি রাতে রাসূলুল্লাহ সা. এর কাছে আগমন করতেন এবং তাঁরা পরস্পর কুরআন শুনাতেন। (সহীহ বুখারী ০৬, সহীহ মুসলিম ২৩০৮, আহমাদ ২৬১৬)
তাই কুরআন নাযিলের এই মাসে অধিক পরিমাণে কুরআনুল কারীম তিলাওয়াত করা আমাদের একান্ত কর্তব্য।
৩. মুসলিমদের জন্য সর্বোত্তম মাস
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন-‘আল্লাহ তা‘য়ালার কসম! মুসলমানদের জন্য রমযানের চেয়ে উত্তম কোন মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমযান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনগণ এ মাসে (গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনীমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ।’ (মুসনাদে আহমাদ ৮৩৬৮, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৮৯৬৮, সহীহ ইবনে খুযায়মা ১৮৮৪, তাবরানী ৯০০৪, শুয়াবুল ঈমান ৩৩৩৫)
৪. লাইলাতুল কদরের মাস
এই মাসে রয়েছে এমন একটি রাত যা হাজার মাস থেকে শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এই রাতের মঙ্গল থেকে বঞ্চিত হলো সে মূলত: সকল মঙ্গল থেকে বঞ্চিত হলো। আর একান্ত বঞ্চিত ব্যক্তি ছাড়া সে মঙ্গল থেকে কেউ বঞ্চিত হয় না।
আল্লাহ তা‘য়লার পক্ষ হতে মুসলিমদের জন্য আরেকটি বিশেষ দান হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম লাইলাতুল কদর। আল্লাহ তা‘য়ালা এ রাত সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন ‘লাইলাতুল কদর এক হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ রাতে ফিরিশতাগণ ও রূহ (জিবরাঈল আ.) তাদের পালনকর্তার আদেশক্রমে প্রত্যেক কল্যাণময় বস্তু নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। যে রাত পুরোটাই শান্তি, যা ফজর হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।’ (সুরা কদর ৩-৫)
এই রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হওয়া চরম দুর্ভাগ্যের বিষয়। আনাস ইবনু মালেক রা. বর্ণনা করেন- রমযান মাসের আগমন ঘটলে রাসূলুল্লাহ সা. সাহাবীদের উদ্দেশে বললেন-‘তোমাদের নিকট এই মাস সমাগত হয়েছে, তাতে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে প্রকৃতপক্ষে সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত। একমাত্র (সর্বহারা) দুর্ভাগাই এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়।’ (ইবনু মাজাহ ১৬৪৪)
৫. এই মাসের আগমন সম্পর্কে নবীজী সা. তাঁর সাহাবীদেরকে সুসংবাদ দিতেন
আবু হুরায়রা রা. বলেন, যখন রমযান মাসের আগমন ঘটলো, তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেন- ‘তোমাদের নিকট বরকতময় মাস রমযান এসেছে। আল্লাহ তা‘য়ালা তোমাদের জন্য এ মাসের রোযা ফরয করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। আর শয়তানকে শিকলে বন্দী করা হয়। এ মাসে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল, সে তো প্রকৃতপক্ষেই বঞ্চিত।’ (মুসনাদে আহমাদ ৭১৮৪, নাসায়ী ২৪১৬, মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক ৮৩৮৩, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৮৯৫৯)
৬. এই মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ উম্মুক্ত করে দেয়া হয়, একটাও বন্ধ থাকে না
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন- ‘যখন রমযান মাসের আগমন ঘটে, তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। আর শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।’ (সহীহ বুখারী ১৮৯৮, সহীহ মুসলিম ১০৭৯, আহমাদ ৮৬৮৪, দারিমী ১৭৭৫)
উচ্ছৃঙ্খল শয়তানের দলকে এই মাসে বন্দী করে রাখা হয়। অর্থাৎ তাদেরকে শিকল ও বেড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। ফলে তারা রমযানে সেই পাপাচার ঘটাতে সক্ষম নয় যতটা তারা অন্য মাসে সক্ষম হয়। এই জন্য দেখা যায় যে, এ মাসে অন্য মাসের তুলনায় শয়তানের কুমন্ত্রণা, চক্রান্ত ও মানুষকে বিভ্রান্ত করার কাজ কম ঘটে। তবে আমরা এই মাসে যে অপরাধ ও পাপাচার দেখি তা কিন্তু শয়তান ঘটায় না। বরং খারাপ কাজে আশক্ত মানুষের মন এমনিতেই এই পাপ করে থাকে। এটাকে মূলত বলে নফসে আম্মারাহ। যা শয়তানের অনুপস্থিতিতে তার প্রতিনিধিত্ব করে।
৭. এই মাসে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং একটা দরজাও খোলা থাকে না
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন- ‘যখন রমযান মাসের প্রথম রাতের আগমন ঘটে, তখন দুষ্ট জিন ও শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। তার একটি দরজাও খোলা হয় না এবং জান্নাতের দরজাসমূহ খৃুলে দেয়া হয়, তার একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। আর একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে- হে কল্যাণের প্রত্যাশী! অগ্রসর হও, হে অকল্যাণের প্রার্থী! থেমে যাও। আর আল্লাহ তা‘য়ালা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্তি দান করেন।’ (তিরমিযী ৬৮২, শুয়াবুল ঈমান ৩৬০১, ইবনু মাজাহ ১৬৪২, মুস্তাদরাকে হাকিম ১৫৭২, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৮৯৬০)
৮. পাপমোচন ও ক্ষমা লাভের মাস
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন- ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমআ থেকে আরেক জুমআ এবং এক রমযান থেকে আরেক রমযান মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহসমূহ মুছে দেয় যদি সে কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে।’ (সহীহ মুসলিম ২৩৩)
ক্ষমা লাভের এমন সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও যে ব্যক্তি নিজের পাপসমূহ ক্ষমা করাতে পারে না সে সত্যিই ক্ষতিগ্রস্ত। হাদীস শরীফে তার জন্য বদ দুআ করা হয়েছে।
কা‘ব ইবনু উজরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদা রাসূলুল্লাহ সা. আমাদেরকে বললেন- তোমরা মিম্বরের নিকট সমবেত হও। আমরা সকলে সেখানে উপস্থিত হলাম। যখন তিনি মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখলেন, তখন বললেন আমীন। যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেন বললেন আমীন। যখন তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেন বললেন আমীন।
কা‘ব ইবনু উজরা রা. বলেন, যখন তিনি (মিম্বর থেকে) অবতরণ করলেন আমরা জিজ্ঞেস করলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ! আজ আমরা (মিম্বরে ওঠার সময়) আপনাকে এমন কিছু কথা বলতে শুনেছি যা ইতিপূর্বে শুনিনি। উত্তরে তিনি বললেন- জিবরাঈল আ. আমার নিকট আগমন করেছিলেন, যখন আমি প্রথম সিঁড়িতে পা রাখলাম তখন তিনি বললেন, ধ্বংস হোক ঐ ব্যক্তি যে রমযান মাস পেলো-তবুও তার গোনাহ মাফ হলো না। আমি বললাম আমীন। যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখলাম তখন বললেন, ধ্বংস হোক ঐ ব্যক্তি যার নিকট আপনার নাম উচ্চারিত হলো অথচ সে আপনার প্রতি দুরুদ পড়লো না। আমি বললাম আমীন। যখন তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখলাম তখন বললেন- ধ্বংস হোক ঐ ব্যক্তি যে বৃদ্ধ পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে পেলো অথচ তারা উভয়ে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারলো না। অর্থাৎ তাদের খেদমতের মাধ্যমে নিজেকে জান্নাতবাসী করতে পারলো না। আমি বললাম আমীন। (মুস্তাদরাকে হাকীম ৭৩৩৮, মাযমাউয যাওয়াইদ ১৭৩১৭)
৯. দানশীলতার মাস
আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। তাঁর দানশীলতা (অন্য সময় হতে) অধিকতর বৃদ্ধি পেতো রমযান মাসে, যখন জিবরাঈল আ. তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন। জিবরাঈল আ. রমযানের প্রতি রাতে আগমন করতেন এবং তাঁরা পরস্পর কুরআন শুনাতেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন কল্যাণবাহী বায়ুর চেয়েও অধিক দানশীল। (সহীহ বুখারী ০৬, সহীহ মুসলিম ২৩০৮, আহমাদ ২৬১৬)
সুতরাং নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর অনুসারী হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব হলো রমযান মাসে বেশি বেশি দান করা। অন্য মাসের তুলনায় দানের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া।
১০. এই মাসের প্রত্যেক রাতে মহান আল্লাহ জাহান্নাম থেকে অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্তি দান করেন
আল্লাহ তা‘য়ালা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য জাহান্নামীকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। সুতরাং আমাদের করণীয় হলো বেশি বেশি নেক আমল এবং তাওবা -ইস্তিগফারের মাধ্যমে নিজেদেরকে এই শাহী ফরমানের অন্তর্ভুক্ত করা।
জাবির রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-অবশ্যই আল্লাহ তা‘য়ালা রমযান মাসে প্রতি ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। প্রতি রাতেই তা হয়ে থাকে। (ইবনু মাজাহ ১৬৪৩, আহমাদ ২২২০২, তবরানী কাবীর ৮০৮৮, বাইহাকী ৩৬০৫)
অন্য হাদীসে আছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- অবশ্যই আল্লাহ তা‘য়ালা রমযান মাসের প্রত্যেক দিবস ও রাত্রিতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন এবং প্রত্যেক মুুমিন বান্দার একটি করে দুআ কবুল করেন। (আহমাদ ৭৪৫০, মাসনাদে বাযযার ৯৬২)
১১. এটা হলো সবর বা ধৈর্যের মাস
রোয ছাড়া অন্য ইবাদতে যেহেতু এমন ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয় না। মুসলিম এই মাসের পূর্ণ ২৯ বা ৩০ দিনই দিনের বেলা পানাহার, যৌনসম্ভোগ ও অন্যান্য রোযাবিরোধী কার্যক্রম থেকে নিজেকে চরম ধৈর্যের সাথে নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই মাসকে ধৈর্যের মাস বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, ধৈর্যের (রমযান) মাসে রোযা আর প্রত্যেক মাসের তিনটি রোযা অন্তরের বিদ্বেষ ও খটকা দূর করে দেয়। (সহীহ জামে সাগীর ৩৮০৪)
১২. বিজয়ের মাস
রমযান মাসে আল্লাহ তা‘য়ালা মুসলিমদের বড় বড় বিজয় দান করে সম্মানিত করেছেন। এই মাসেই ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধে মুসলিমদেরকে আল্লাহ বিজয় দান করেন এবং ৮ম হিজরীর রমযান মাসেই মক্কা বিজয় হয়।
১৩. এ মাসে আমলের সাওয়াব অন্য মাসের তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি করা হয়
রমযান মাসের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, এ মাসে মুমিন বান্দার নেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয়। তাই আখেরাতের পাথেয় সঞ্চয়ের শ্রেষ্ঠ সময় এটি। এ প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক আনসারী মহিলাকে বললেন, বর্ণনাকারী বলেন, তার নাম ইবনু আব্বাস উল্লেখ করেছিলেন কিন্তু আমি তা ভুলে গিয়েছি। (অন্য বর্ণনায় তার নাম উম্মে সিনান উল্লেখ করা হয়েছে) তুমি কেন আমাদের সাথে হজ করতে যাওনি? তিনি বললেন, আমাদের পানি বহনকারী দু’টি মাত্র উট রয়েছে। একটিতে আমার ছেলের বাবা (স্বামী) ও তার ছেলে হজ করতে গিয়েছেন আর অন্যটি পানি বহনের জন্য আমাদের কাছে রেখে গিয়েছেন। তিনি বললেন- রমযান মাস এলে তুমি উমরা করবে। কেননা এ মাসের উমরা একটি হজের সমতুল্য।
সহীহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন-রমযান মাসের উমরা একটি হজের সমতুল্য। অথবা বলেছেন, আমার সাথে একটি হজের সমতুল্য (সওয়াবের হিসেবে)। (সহীহ বুখারী ১৭৮২, সহীহ মুসলিম ১২৫৬, আহমাদ ২০২৫)
১৪. এ মাসে রহমতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- রমযান মাসে রহমতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। (সহীহ মুসলিম ২৫৪৮, আহমাদ ৯২০৪)
১৫. এটি বরকতময় মাস
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন- তোমাদের সামনে রমযান মাস সমাগত। তা বরকতময় মাস। আল্লাহ তোমাদের উপর সে মাসের রোযা ফরয করেছেন। এ মাসে আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। আর জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। (নাসায়ী ২১০৬, আহমাদ ৭১৪৮, ৮৯৯১, মুসান্নাফে আবদৃুর রাজ্জাক ৮৩৮৩, সহীহ আততারগীব ৯৮৫)
এই হলো রমযান মাস। বারোটি মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ আলাদা বৈশিষ্ট্য নিয়ে আমাদের মাঝে উপস্থিত। বরকত ও রহমতের এ মাস তো বান্দার অপরাধ-পাপাচার ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দিতে আসে। তাই মুমিন বান্দার একান্ত কর্তব্য এ মাসের সদ¦্যবহার করা। সময়ের প্রতিটি বিন্দুকে হিসেব করে কাজে লাগানো। ইবাদতের এই ভরা মৌসুমে সবটুকু সময় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে নেককাজে ব্যয় করা।
লেখক: ইমাম মেইন বাস স্ট্যান্ড জামে মসজিদ কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ।
মুহাদ্দিস, বলিদাপাড়া মাদরাসা, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ।
faruknomani@gmail.com