রাকিব-রাব্বির গোলে সেমিফাইনালে চট্টগ্রাম আবাহনী
সবুজদেশ ডেস্কঃ
কে জানত শেষ সময়ে এতটা উত্তেজনা জমিয়ে রেখেছিল ম্যাচটি? কে জানত বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আজকের সন্ধ্যাটা এমন উত্তাপ ছড়াবে? ফেডারেশন কাপের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে আজ শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের মুখোমুখি হয়েছিল চট্টগ্রাম আবাহনী। শেখ রাসেলের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড লোপেজ রদ্রিগেজের পেনাল্টি মিস, আরেক ফরোয়ার্ড তকলিচ আহমেদের লাল কার্ড ছাপিয়ে ম্যাচে আলো কাড়লেন চট্টগ্রাম আবাহনীর দুই তরুণ মিডফিল্ডার রাকিব হোসেন ও মান্নাফ রাব্বি। এই দুই ফুটবলারের গোলেই তো টুর্নামেন্ট থেকে শেখ রাসেলকে ছিটকে দিয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী।
ম্যাচের নির্ধারিত সময় ছিল গোলশূন্য। অতিরিক্ত সময়ের প্রথম ১৫ মিনিটও গোলের দেখা নেই। হঠাৎ করেই বাঁ প্রান্ত দিয়ে চট্টগ্রাম আবাহনীর আক্রমণ। বক্সের সামনে অরক্ষিত চট্টগ্রাম আবাহনীর মিডফিল্ডার রাকিব হোসেনের হাফ ভলি, শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের গোলরক্ষক আশরাফুল রানার মাথার ওপর দিয়ে বল ঢুকল জালে। বোকার মতো বলটা চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না জাতীয় দলের এই গোলরক্ষকের। রাকিব হোসেনের করা ম্যাচের প্রথম গোলটি হয়েছে ১০৭ মিনিটে। এরপর ১১৩ মিনিটে মান্নাফ রাব্বির গোলে স্তব্ধ শেখ রাসেল শিবির।
দুই দলের লড়াইয়ের আড়ালে লড়াইটা ছিল দেশের অন্যতম সেরা দুই কোচ সাইফুল বারী ও মারুফুল হকেরও। ডাগআউটে শেখ রাসেল কোচ সাইফুল বারী যতটাই অস্থির, ততটাই শান্ত মারুফুল হক। চুপচাপ পেছনে দুই হাত মুঠোবন্দী করে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ফুটবলারদের নির্দেশনা দিয়েছেন মারুফুল। দুই কোচের মনস্তাত্ত্বিক লড়াই আর কৌশলে শেষ পর্যন্ত জিতেছেন দেশের একমাত্র উয়েফা ‘প্রো’ লাইসেন্সধারী কোচ মারুফুল।
চট্টগ্রাম আবাহনী তাদের বিদেশিদের নিয়ে শুরু থেকেই পড়েছে সমস্যায়। নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার চিনেদু ম্যাথিউ করোনা থেকে সেরে উঠলেও খেলার মতো অবস্থায় নেই। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড নিক্সন গুইলহেরমেও চোট পেয়ে বেঞ্চে। আইভরিয়ান মিডফিল্ডার চার্লস দিদিয়ের ততটা ছন্দে ফেরেননি। আজ নিক্সনের বদলি হিসেবেই মারুফুল মাঠে নামান রাকিবকে। একটি গোল করে, একটি করিয়ে কোচের আস্থার কী দারুণ প্রতিদানই না দিলেন রাকিব!
গ্রুপ পর্বের দুই ম্যাচে অবশ্য চার বিদেশি ভালো খেলায় সহজেই জয় পেয়েছে শেখ রাসেল। বিশেষ করে কিরগিজস্তানের ফরোয়ার্ড বখতিয়ার দুশবেকভ ও নাইজেরিয়ন ফরোয়ার্ড ওবি মোনেকের অসাধারণ ফুটবল দলকে রেখেছিল ছন্দে। আজও ওবি মোনেকে দলকে জেতানোর জন্য পেনাল্টি আদায় করে দেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য শেখ রাসেলের। পেনাল্টি থেকে গোল করতে পারেননি জিয়ানকারলো রদ্রিগেজ। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ দক্ষতায় বলটি ঠেকিয়ে দেন চট্টগ্রাম আবাহনীর গোলরক্ষক মোহাম্মদ নাঈম। সেই কারণেই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জিতে নিয়েছেন তিনি।
ম্যাচে দুই দলের কাছেই যখন গোল পাওয়াটা সোনার হরিণ হয়ে উঠছিল ঠিক তখনই শেখ রাসেলকে পেনাল্টি এনে দেন ওবি মোনেকে। ম্যাচের ৬৭ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে আবদুল্লাহর বাড়িয়ে দেওয়া বল নিয়ে ওবি মনেকে ডান প্রান্ত দিয়ে ঢোকেন বক্সে। কিন্তু বক্সের মধ্যে তাঁকে ফেলে দেন চট্টগ্রাম আবাহনীর উজবেক ডিফেন্ডার শুকুরালি পুলাতভ। মোনেকের চোটটা ছিল বেশ গুরুতর। স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়তে হয় এই নাইজেরিয়ানকে। খানিক বাদে মাঠে ফিরলেও নিজের সেরাটা খেলতে পারছিলেন না। মাঝেমধ্যেই বাঁ ঊরুতে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এই অবস্থায়ও কেন কোচ সাইফুল বারী তাঁকে তুলে নিলেন না সেটাই বিস্ময়কর!
শেখ রাসেলের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রদ্রিগেজ পুরো টুর্নামেন্টে নিজেকে একদম মেলে ধরতে পারেননি। আজ তো মাঠে বেশ কয়েকবার প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেছেন। মেজাজ হারিয়েছেন বারবার। বিশেষ করে চট্টগ্রাম আবাহনীর ডিফেন্ডার মানিক মোল্লাকে বল ছাড়াই যেভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলেছেন, তা বেশ দৃষ্টিকটু লেগেছে।
বলতে গেলে ভঙ্গুর এক ফরোয়ার্ড লাইন নিয়েই খেলেছে চট্টগ্রাম আবাহনী। চোটের কারণে ফেডারেশন কাপের শুরু থেকে নেই স্ট্রাইকার সাখাওয়াত রনি। এরপর করোনায় ম্যাথিউ দর্শক। ম্যাথিউ আর দিদিয়েরের মাঠের বোঝাপড়ার রসায়নটা বেশ ভালো। কিন্তু আজ যেন ম্যাথিউর অভাবটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন দিদিয়ের। নিজে কখনো বল নিয়ে বক্সে ঢুকেছেন। কখনো জায়গামতো বলের প্রত্যাশা করেও পাননি।
মান্নাফ রাব্বি অবশ্য বেশ কয়েকবার আতঙ্ক ছড়িয়েছে শেখ রাসেলের বক্সে। ম্যাচের ১৬ মিনিটে আশরাফুল রানাকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি। কর্নারের বিনিময়ে সে যাত্রায় শেখ রাসেলকে বাঁচিয়ে দেন আশরাফুল। ম্যাচের ৫৫ মিনিটে শেখ রাসেলের মিডফিল্ডার গালিব নেওয়াজের দূরপাল্লার দারুণ শট ফিস্ট করেন চট্টগ্রাম আবাহনীর গোলরক্ষক মোহাম্মদ নাঈম। তবে শেখ রাসেলের এমন আক্রমণ অবশ্য খুব কমই চোখে পড়েছে। ৯০ মিনিটে আবদুল্লাহর বদলি হিসেবে তকলিচকে নামান কোচ সাইফুল বারী। কিন্তু গোল তো করতেই পারেননি, উল্টো লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন তকলিচ।