ঢাকা ১০:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাতে গুদামে ঢুকছে ব্যবসায়ীদের ধান: বঞ্চিত লক্ষ লক্ষ কৃষক

Reporter Name

কুষ্টিয়াঃ

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সরকারিভাবে ধান ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ শুরু থেকেই ছিল। কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের সরকারী নির্দেশনা থাকলেও সেসব ধান ক্রয় করা হচ্ছে উপজেলার বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। আর এসব ধান ব্যবসায়ী ও তাদের পোষা বাহিনীর কড়া প্রহরায় ট্রলি বোঝাই হয়ে দিনের বেলায় সরবরাহ না করে রাতের আধারে উপজেলার খাদ্য গুদামে সরবরাহ করা হচ্ছে। ধান ক্রয়ের প্রকাশ্য এমন অনিয়মের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নির্বিকার ও নিশ্চিুপ ভূমিকা পালন করছেন। এতে এই উপজেলার ধান উৎপাদনকারি লক্ষ লক্ষ কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রয় থেকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, দৌলতপুর খাদ্য গুদামে কৃষকদের পরিবর্তে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মনোনিত ব্যবসায়ীরা ধান সরবরাহ করছে। তবে এক্ষেত্রে ওইসব ব্যবসায়ীরা চাতুরতার আশ্রয় নিয়েছেন। ধান ক্রয়ে লটারী ও লটারীর বাইরে যেসব কৃষকদের তালিকা করা হয়েছে সেই সব কৃষকদের কাছ থেকে ধান সরবরাহকারী ব্যবসায়ীরা কৃষক কার্ড সরবরাহ করেছেন। কোন কৃষককে টন প্রতি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে আবার কোন কোন কৃষককে হুমকি দিয়ে তাদের কার্ড কেড়ে নেওয়ার ঘটনাও রয়েছে এখানে। জোর করে বা অর্থ দিয়ে সংগ্রহ করা ওইসব কৃষক কার্ড দিয়ে গুটি কয়েক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী প্রশাসনকে ম্যানেজ করে খাদ্য গুদামে ধান সরবরাহ করছেন। যা দৌলতপুরের বাইরে এমনকি জেলার বাইরে থেকে ধান ক্রয় করে ট্রলি ভর্তি করে রাতের আধারে দৌলতপুর খাদ্য গুদামে ঢুকানো হচ্ছে। গত রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ৮ ট্রলি ভর্তি ধান খাদ্য গুদামে সরবরাহ করতে দেখা গেছে।

উপজেলার কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা হলে তারা জানান, ধান বিক্রয়ের কৃষক তালিকায় তাদের নাম থাকলেও তারা ধান বিক্রয় করতে পারেননি। তাদের কার্ড স্থানীয় নেতারা ভয় ভীতি দেখিয়ে নিয়ে নিয়েছেন। চলতি মৌসুমে সরকারীভাবে দৌলতপুরে ২হাজার ৪শ ২৪মেট্রিক টন আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যে ২হাজার ৪শ ২৪জন কৃষককে লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়। উপজেলা পরিষদ কনফারেন্স রুমে লোক দেখানো লটারি করা হলেও তাৎক্ষনিকভাবে লটারির মাধ্যমে ঘোষিত নির্ধারিত কৃষকদের নাম ধান ক্রয়ের তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করা হয়নি। যদিও লটারি হওয়ার দুই সপ্তাহ পর ইচ্ছেমত ব্যক্তিদের নাম আবার ভৌতিক নাম তালিকাভূক্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিজেদের সুবিধা আদায়ে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ধান ক্রয় কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।

সোমবার দুপুর ২টা পর্যন্ত দৌলতপুর খাদ্য গুদামে প্রায় ৭’শ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হয়েছে বলে দৌলতপুর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানান। রাতের আধারে ধান ক্রয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, রাতে ট্রলি ভর্তি ধান খাদ্য গুদাম চত্বরে আনা হলেও তা ওজন দেওয়া হয়নি। সেসময় খাদ্য গুদামে লেবার থাকে না। তবে ধান ক্রয় নিয়ে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে রয়েছি বলে জানান তিনি।

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যারের সাথে বসার কথা রয়েছে। ধান ক্রয়ে মন্থর গতির বিষয়ে দৌলতপুর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, আগামী ২৮ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ধান ক্রয় করা যাবে। এখনও অনেক সময় রয়েছে বলে জানান তিনি।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৬:৪৭:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২০
৭৬৪ Time View

রাতে গুদামে ঢুকছে ব্যবসায়ীদের ধান: বঞ্চিত লক্ষ লক্ষ কৃষক

আপডেট সময় : ০৬:৪৭:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২০

কুষ্টিয়াঃ

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সরকারিভাবে ধান ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ শুরু থেকেই ছিল। কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের সরকারী নির্দেশনা থাকলেও সেসব ধান ক্রয় করা হচ্ছে উপজেলার বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। আর এসব ধান ব্যবসায়ী ও তাদের পোষা বাহিনীর কড়া প্রহরায় ট্রলি বোঝাই হয়ে দিনের বেলায় সরবরাহ না করে রাতের আধারে উপজেলার খাদ্য গুদামে সরবরাহ করা হচ্ছে। ধান ক্রয়ের প্রকাশ্য এমন অনিয়মের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নির্বিকার ও নিশ্চিুপ ভূমিকা পালন করছেন। এতে এই উপজেলার ধান উৎপাদনকারি লক্ষ লক্ষ কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রয় থেকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, দৌলতপুর খাদ্য গুদামে কৃষকদের পরিবর্তে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মনোনিত ব্যবসায়ীরা ধান সরবরাহ করছে। তবে এক্ষেত্রে ওইসব ব্যবসায়ীরা চাতুরতার আশ্রয় নিয়েছেন। ধান ক্রয়ে লটারী ও লটারীর বাইরে যেসব কৃষকদের তালিকা করা হয়েছে সেই সব কৃষকদের কাছ থেকে ধান সরবরাহকারী ব্যবসায়ীরা কৃষক কার্ড সরবরাহ করেছেন। কোন কৃষককে টন প্রতি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে আবার কোন কোন কৃষককে হুমকি দিয়ে তাদের কার্ড কেড়ে নেওয়ার ঘটনাও রয়েছে এখানে। জোর করে বা অর্থ দিয়ে সংগ্রহ করা ওইসব কৃষক কার্ড দিয়ে গুটি কয়েক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী প্রশাসনকে ম্যানেজ করে খাদ্য গুদামে ধান সরবরাহ করছেন। যা দৌলতপুরের বাইরে এমনকি জেলার বাইরে থেকে ধান ক্রয় করে ট্রলি ভর্তি করে রাতের আধারে দৌলতপুর খাদ্য গুদামে ঢুকানো হচ্ছে। গত রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ৮ ট্রলি ভর্তি ধান খাদ্য গুদামে সরবরাহ করতে দেখা গেছে।

উপজেলার কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা হলে তারা জানান, ধান বিক্রয়ের কৃষক তালিকায় তাদের নাম থাকলেও তারা ধান বিক্রয় করতে পারেননি। তাদের কার্ড স্থানীয় নেতারা ভয় ভীতি দেখিয়ে নিয়ে নিয়েছেন। চলতি মৌসুমে সরকারীভাবে দৌলতপুরে ২হাজার ৪শ ২৪মেট্রিক টন আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যে ২হাজার ৪শ ২৪জন কৃষককে লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়। উপজেলা পরিষদ কনফারেন্স রুমে লোক দেখানো লটারি করা হলেও তাৎক্ষনিকভাবে লটারির মাধ্যমে ঘোষিত নির্ধারিত কৃষকদের নাম ধান ক্রয়ের তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করা হয়নি। যদিও লটারি হওয়ার দুই সপ্তাহ পর ইচ্ছেমত ব্যক্তিদের নাম আবার ভৌতিক নাম তালিকাভূক্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিজেদের সুবিধা আদায়ে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ধান ক্রয় কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।

সোমবার দুপুর ২টা পর্যন্ত দৌলতপুর খাদ্য গুদামে প্রায় ৭’শ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হয়েছে বলে দৌলতপুর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানান। রাতের আধারে ধান ক্রয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, রাতে ট্রলি ভর্তি ধান খাদ্য গুদাম চত্বরে আনা হলেও তা ওজন দেওয়া হয়নি। সেসময় খাদ্য গুদামে লেবার থাকে না। তবে ধান ক্রয় নিয়ে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে রয়েছি বলে জানান তিনি।

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যারের সাথে বসার কথা রয়েছে। ধান ক্রয়ে মন্থর গতির বিষয়ে দৌলতপুর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, আগামী ২৮ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ধান ক্রয় করা যাবে। এখনও অনেক সময় রয়েছে বলে জানান তিনি।