ঢাকা ০২:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাস্তার পাশের পতিত জমিতে সিম চাষে লাভবান চাষীরা

Reporter Name

এস এম সামছুর রহমান, বাগেরহাটঃ

বাগেরহাটের ফকিরহাটে রাস্তার পাশের পতিত জমিতে সিম চাষে লাভবান হচ্ছে চাষীরা। ফকিরহাট উপজেলার লখপুর এলাকায় শুখলাল-ভল্লভপুর সরকারী রাস্তার দুই পাশের দুই কিলোমিটার জুড়ে পরিক্ষামূলক ভাবে এই সিমের আবাদ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় প্রথম বারের মত এই পদ্ধতিতে সিম চাষ করা হয়। কৃষি বিভাগ বলছে, কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় রাস্তার পাশে সিম চাষে আগ্রহী চাষীরা।

ফকিরহাট উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, ফকিরহাট উপজেলার লখপুর এলাকায় শুখলাল-ভল্লভপুর সরকারী রাস্তার পাশে দুই কিলোমিটার জুড়ে পরিক্ষামূলক ভাবে সিমের আবাদ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাছরুল মিল্লাত সিলেটের শ্রীমঙ্গল থেকে এই জাতের সিমের বীজ সংগ্রহ করে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করেছিলেন। রাস্তার পাশের যে জমি সারা বছরই অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকতো সেই জমি এখন সিমের সবুজ সমারোহ সাদাবেগুনি ফুলে ছেয়ে গেছে। রাস্তার দুই পাশে বেড়া দিয়ে গড়ে ওঠা শিমের মাচা কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে রাখার পাশাপাশি নজর কাড়ছে পথচারীদের। অনেকে এখানে এসে সুন্দর এমন মনরম পরিবেশ দেখে ছবি তুলতেও ভুল করছেন না।

সিম চাষী গফ্ফার মোড়ল বলেন, রাস্তার পাশে যে সিম হবে এটা তিনি কোন ভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। কৃষি কর্মকর্তাদের পিড়াপিড়িতে ইচ্ছা না থাকলে তিনি রাস্তার পাশে সিম চাষ করতে বাধ্য হন। কিন্তু এখন ফলনও ফসলের দাম পেয়ে তিনি অনেক খুশি হয়েছেন। আগামীতে আরো বেশি এলাকায় নিজ উদ্যেগে সিমের চাষ করবেন বলে জানান তিনি।

একই এলাকার কৃষক জয়দেব বিশ্বাস জানান, উঁচু জায়গা হওয়ায় মৌসুম শুরুর আগেই চারা রোপণ করেছিলেন। এতে সবার আগে বাজারে তার সিম আসে। উৎপাদনও নজর কাড়া। দামও ভালো। কম খরচে বেশি লাভ হচ্ছে বলে তিনি জানান।

কৃষক রাজ্জাক শেখ বলেন, রাস্তার পাশে পতিত জমি কোন দিন কোন কাজে ব্যবহার হয়নি। এবারই প্রথম সিম চাষ করে অনেক ভাল ফলন পেয়েছেন। উঁচু জায়গা হওয়ায় এবছর উপকূলে আঘাত করা ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর জলবদ্ধতাও এই সিম গাছের কোন ক্ষতি হয়নি বলে জানান এই কৃষক।

কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, রাস্তার পাশে পতিত জমিতে সিমের এমন বাম্পার ফলন দেখে তার মত এলাকার অনেক কৃষক আগামী বছর এই পদ্ধতিতে সিম চাষ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব দাস বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার নির্দেশে কৃষদের মাঝে বিনামূল্যে এই সিমের বিতরণ করা হয়। কিন্তু কৃষকরা রাস্তার পাশে সিম চাষ করতে আগ্রহী ছিল না। অনেক বার বুঝিয়ে তাদের সিম চাষ করানো হয়েছে।

ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ নাছরুল মিল্লাত বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ‘কোথাও এক ইঞ্চি জমিও যেন ফাকা পড়ে না থাকে।’ এটি বাস্তবায়ন করতে ফকিরহাট উপজেলা কৃষি অফিস কাজ করে যাচ্ছে। প্রথমবার কৃষকদের বুঝিয়ে এই পদ্ধতিতে সিম চাষ করানো হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকদের এনে এই ভাবে সিম চাষ করার পদ্ধতি দেখানো হচ্ছে। ফলন দেখে অন্য কৃষকরাও এই পদ্ধতিতে চাষে আগ্রহী হচ্ছে। রাস্তার পাশের পতিত জমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে নিরাপদ সব্জি উৎপাদনের লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।

ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যেমে চাষীদের সচেতন করতে পারলে ফকিরহাটের প্রতিটি সরকারী রাস্তার পাশে এই ভাবে সিমের চাষ করা সম্ভব। এতে একদিকে পতিত জমির ব্যবহার হবে, অপরদিকে সাধারণ মানুষ বীষমুক্ত সব্জি পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

About Author Information
আপডেট সময় : ১০:০৬:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯
৮১৪ Time View

রাস্তার পাশের পতিত জমিতে সিম চাষে লাভবান চাষীরা

আপডেট সময় : ১০:০৬:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯

এস এম সামছুর রহমান, বাগেরহাটঃ

বাগেরহাটের ফকিরহাটে রাস্তার পাশের পতিত জমিতে সিম চাষে লাভবান হচ্ছে চাষীরা। ফকিরহাট উপজেলার লখপুর এলাকায় শুখলাল-ভল্লভপুর সরকারী রাস্তার দুই পাশের দুই কিলোমিটার জুড়ে পরিক্ষামূলক ভাবে এই সিমের আবাদ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় প্রথম বারের মত এই পদ্ধতিতে সিম চাষ করা হয়। কৃষি বিভাগ বলছে, কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় রাস্তার পাশে সিম চাষে আগ্রহী চাষীরা।

ফকিরহাট উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, ফকিরহাট উপজেলার লখপুর এলাকায় শুখলাল-ভল্লভপুর সরকারী রাস্তার পাশে দুই কিলোমিটার জুড়ে পরিক্ষামূলক ভাবে সিমের আবাদ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাছরুল মিল্লাত সিলেটের শ্রীমঙ্গল থেকে এই জাতের সিমের বীজ সংগ্রহ করে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করেছিলেন। রাস্তার পাশের যে জমি সারা বছরই অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকতো সেই জমি এখন সিমের সবুজ সমারোহ সাদাবেগুনি ফুলে ছেয়ে গেছে। রাস্তার দুই পাশে বেড়া দিয়ে গড়ে ওঠা শিমের মাচা কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে রাখার পাশাপাশি নজর কাড়ছে পথচারীদের। অনেকে এখানে এসে সুন্দর এমন মনরম পরিবেশ দেখে ছবি তুলতেও ভুল করছেন না।

সিম চাষী গফ্ফার মোড়ল বলেন, রাস্তার পাশে যে সিম হবে এটা তিনি কোন ভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। কৃষি কর্মকর্তাদের পিড়াপিড়িতে ইচ্ছা না থাকলে তিনি রাস্তার পাশে সিম চাষ করতে বাধ্য হন। কিন্তু এখন ফলনও ফসলের দাম পেয়ে তিনি অনেক খুশি হয়েছেন। আগামীতে আরো বেশি এলাকায় নিজ উদ্যেগে সিমের চাষ করবেন বলে জানান তিনি।

একই এলাকার কৃষক জয়দেব বিশ্বাস জানান, উঁচু জায়গা হওয়ায় মৌসুম শুরুর আগেই চারা রোপণ করেছিলেন। এতে সবার আগে বাজারে তার সিম আসে। উৎপাদনও নজর কাড়া। দামও ভালো। কম খরচে বেশি লাভ হচ্ছে বলে তিনি জানান।

কৃষক রাজ্জাক শেখ বলেন, রাস্তার পাশে পতিত জমি কোন দিন কোন কাজে ব্যবহার হয়নি। এবারই প্রথম সিম চাষ করে অনেক ভাল ফলন পেয়েছেন। উঁচু জায়গা হওয়ায় এবছর উপকূলে আঘাত করা ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর জলবদ্ধতাও এই সিম গাছের কোন ক্ষতি হয়নি বলে জানান এই কৃষক।

কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, রাস্তার পাশে পতিত জমিতে সিমের এমন বাম্পার ফলন দেখে তার মত এলাকার অনেক কৃষক আগামী বছর এই পদ্ধতিতে সিম চাষ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব দাস বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার নির্দেশে কৃষদের মাঝে বিনামূল্যে এই সিমের বিতরণ করা হয়। কিন্তু কৃষকরা রাস্তার পাশে সিম চাষ করতে আগ্রহী ছিল না। অনেক বার বুঝিয়ে তাদের সিম চাষ করানো হয়েছে।

ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ নাছরুল মিল্লাত বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ‘কোথাও এক ইঞ্চি জমিও যেন ফাকা পড়ে না থাকে।’ এটি বাস্তবায়ন করতে ফকিরহাট উপজেলা কৃষি অফিস কাজ করে যাচ্ছে। প্রথমবার কৃষকদের বুঝিয়ে এই পদ্ধতিতে সিম চাষ করানো হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকদের এনে এই ভাবে সিম চাষ করার পদ্ধতি দেখানো হচ্ছে। ফলন দেখে অন্য কৃষকরাও এই পদ্ধতিতে চাষে আগ্রহী হচ্ছে। রাস্তার পাশের পতিত জমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে নিরাপদ সব্জি উৎপাদনের লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।

ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যেমে চাষীদের সচেতন করতে পারলে ফকিরহাটের প্রতিটি সরকারী রাস্তার পাশে এই ভাবে সিমের চাষ করা সম্ভব। এতে একদিকে পতিত জমির ব্যবহার হবে, অপরদিকে সাধারণ মানুষ বীষমুক্ত সব্জি পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।