রুদ্ধশ্বাস জয় বাংলাদেশের
সবুজদেশ ডেস্কঃ
মেহেদি হাসান মিরাজের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের সুবাদে ভারতের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য জয় পেল বাংলাদেশ।
ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে ১৮৭ রানের টার্গেট তাড়ায় ৪ উইকেটে ১২৮ রান করে বাংলাদেশ। এরপর চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে মাত্র ৮ রানের ব্যবধানে ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে কার্যত ছিটকে যায়।
দলের নিশ্চিত পরাজয় জেনেও শেষ উইকেটে মোস্তাফিজুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে দারুণ ব্যাটিং করে বাংলাদেশকে জয় উপহার দেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তার দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ২৪ বল হাতে রেখেই এক উইকেটের জয় পায় টােইগাররা।
রোববার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এই জয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
এদিন টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে সাকিব আল হাসানের স্পিন আর পেসার এবাদত হোসেনের গতির মুখে পড়ে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে ভারত।
সময়ের ব্যবধানে একের পর এক উইকেট পতনের কারণে বড় কোনো জুটি গড়ে ওঠেনি। দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ে উইকেটের একপ্রান্ত বেশ কিছু সময় আগলে রাখেন ভারতীয় তারকা ব্যাটসম্যান লোকেশ রাহুল।
৭০ বলে ৫টি চার আর ৪টি ছক্কার সাহায্যে দলীয় সর্বোচ্চ ৭৩ রান করেন রাহুল। তার কারণেই দেড়শ পার হতে পারে ভারত। এছাড়া ৩৯ বলে ২৯ রান করেন স্রেয়াশ আইয়ার। ৩১ বলে ২৭ রান করে ফেরেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা।
সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও তারকা ওপেনার শিখর ধাওয়ান দুই অঙ্কের ফিগার রান করতে পারেননি। তারা ফেরেন ৯ ও ৭ রানে। ৪৩ বলে ১৯ রান করে ফেরেন ওয়াশিংটন সুন্দর।
বাংলাদেশ দলের হয়ে ১০ ওভারে ৩৬ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন সাকিব আল হাসান। ৮.২ ওভারে ৪৭ রানে ৪ উইকেট নেন এবাদত হোসেন।
১৮৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই আউট হন ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। তিন নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে স্বস্তিতে ব্যাট করতে পারেননি এনামুল হক বিজয়। আগের ওভারে বেঁচে গিয়েছিলেন রিভিউ নিয়ে। পরের ওভারে আর রক্ষা হয়নি। মোহাম্মদ সিরাজের বলে শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান।
২৯ রানে শান্ত-বিজয় আউট হওয়ার পর সাকিব আল হাসানকে সঙ্গে নিয়ে ৬১ বলে ৪৮ রানের জুটি গড়েন লিটন কুমার দাস। উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া ওপেনার লিটনকে আউট করে জুটি ভাঙেন ওয়াশিংটন সুন্দর। এই অফ স্পিনারের বলটি লেগে খেলতে গিয়ে ঠিক মতো পারেননি লিটন। বল গ্লাভস ছুঁয়ে কিপারের হাতে জমা পড়ে। সাজঘরে ফেরার আগে ৬৩ বলে এক ছক্কা আর তিন চারের সাহায্যে ৪১ রান করেন লিটন।
লিটন আউট হওয়ার পর মুশফিকের সঙ্গে বড় জুটি গড়তে পারেননি সাকিব। ওয়াশিংটন সুন্দরের করা বলটি এক্সট্রা কাভারের উপর দিয়ে ড্রাইভ করেছিলেন সাকিব। মাঝ পথে লাফিয়ে এক হাতে দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে সাকিবকে ফেরান বিরাট কোহলি। ৩৮ বলে তিন চারে ২৯ রান করে আউট হন সাকিব। তার বিদায়ের মধ্য দিয়ে ২৩.৩ ওভারে ৯৫ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
নাজমুল হোসেন শান্ত, এনামুল হক বিজয়, লিটন কুমার দাস ও সাকিব আল হাসান আউট হওয়ার পরও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ-মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে জয় দেখেছিল বাংলাদেশ। তাদের সাবধানী ব্যাটিংয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিল দল।
একটা সময়ে ৪ উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ১২৮ রান। জয়ের জন্য ৯১ বলে প্রয়োজন ছিল মাত্র ৬৯ রান। এরপর আসা-যাওয়ার মিছিলে অংশ নেন টাইগার ব্যাটসম্যানরা। মাত্র ৮ রানের ব্যবধানে ৫ উইকেট হারিয়ে পরাজয়ের দুয়ারে চলে যায় বাংলাদেশ।
৩৫তম ওভারের শেষ আর ৩৬তম ওভারের প্রথম বলে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফকুর রহিম আউট হলে ম্যাচ থেকে কার্যত ছিটকে যায় টাইগারেরা। দলীয় ১৩৫ রানে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে সীমানার কাছে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন আফিফ হোসেন। এরপর মাত্র ৩ ও ২ বল খেলে আউট হন এবাদত হোসেন ও হাসান মাহমুদ।
দলের নিশ্চিত পরাজয় জেনেও শেষ উইকেটে মোস্তাফিজুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে ৪১ বলে ৫১ রানের অবিশ্বস্য এক জুটি গড়ে দলকে ২৪ বল আগেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন মিরাজ। দলের জয়ে ৩৯ বলে চারটি চার আর দুই ছক্কায় অপরাজিত ৩৮ রান করেন মিরাজ। ১১ বল খেলে ১০ রানে অপরাজিত থাকেন মোস্তাফিজ।