লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে মনোনয়ন–প্রত্যাশীরা এখন ঢাকায়
সবুজদেশ ডেক্সঃ লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনে বিভিন্ন দলের মনোনয়ন–প্রত্যাশীদের প্রায় সবাই ঢাকায় অবস্থান করছেন। নিজ নিজ দলের মনোনয়ন নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে তাঁরা সেখানে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
তবে গত ঈদের আগে এবং পরে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন দলের মনোনয়ন–প্রত্যাশীরা এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। অনেককেই সাধারণ লোকজনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা গেছে।
রামগতি উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন এবং কমলনগর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে এ আসনটি (লক্ষ্মীপুর-৪) গঠিত। বর্তমানে এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১১ হাজার ৯৮৮। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮০৭ ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৮১।
এই আসনের বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগের মো. আবদুল্লাহ আল্ মামুন। তিনি ছাড়াও দলের মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে রয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় সম্পাদক রামগতি-কমলনগরের সাবেক সংসদ সদস্য (সংরক্ষিত মহিলা আসন) ফরিদুন্নাহার লাইলী এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া উপকমিটির সহসম্পাদক আবদুজ্জাহের সাজু।
অন্যদিকে, বিএনপিতে এককভাবে মনোনয়ন–প্রত্যাশী রয়েছেন দুবারের নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম আশরাফ উদ্দিন নিজান। আর যুক্তফ্রন্টের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব এখানে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার প্রার্থী হতে পারেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা যায়, মো. আবদুল্লাহ আল্ মামুন ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এলাকায় এসেছিলেন। ওই সময় সরকারি নানা কাজে তিনি অংশ নিয়েছেন। এ ছাড়া এলাকায় বিভিন্ন স্থানে লোকজনের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও গণসংযোগ করেছেন তিনি। পরে সংসদ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি ঢাকায় যান।
মো. আবদুল্লাহ আল্ মামুন বলেন, মেঘনার ভয়াবহ ভাঙন রামগতি-কমলনগরের দীর্ঘদিনের সমস্যা। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর এ ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এলাকায় দৃশ্যমান নানা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ কারণে এ আসনের ভোটাররা আওয়ামী লীগ ও তাঁর পাশেই রয়েছেন। এ হিসেবে জনপ্রিয়তা বিবেচনায় তিনিই দলের মনোনয়ন পাবেন বলে আশা তাঁর।
দলের অপর মনোনয়ন–প্রত্যাশী ফরিদুন্নাহার লাইলী গত ২৫ আগস্ট এলাকায় আসেন। ওই সময় তিনি বেশ কিছু সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এ ছাড়া কমলনগরে বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম নুরুল আমিন জানান, ফরিদুন্নাহার লাইলী দলীয় কাজ ছাড়াও মনোনয়ন–সংক্রান্ত যোগাযোগের জন্য এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন।
দলের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে ফরিদুন্নাহার লাইলী বলেন, ‘নবম সংসদে সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য হিসেবে রামগতি-কমলনগরে দায়িত্ব পালনের সময় ব্যাপক উন্নয়নকাজ করেছি।’ নেতা-কর্মী ও এলাকার লোকজন তাঁর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে মনে রেখেছেন বলে তিনি মনে করেন । তাই এলাকাবাসী আগামী সংসদে তাঁকেই দলের প্রার্থী হিসেবে পেতে চাইছেন। এ কারণে তিনিই দলের মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করছেন।
আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়ন–প্রত্যাশী আবদুজ্জাহের সাজু ঈদের আগে ও পরে প্রায় দুই সপ্তাহ এলাকায় ছিলেন। ওই সময় রামগতি ও কমলনগরের বিভিন্ন ইউনিয়নে তিনি উঠান বৈঠক ও গণসংযোগ করেন। সবশেষ ১৬ সেপ্টেম্বর নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে তিনি এলাকায় মোটর শোভাযাত্রা করেন। এখন ঢাকায় অবস্থান করে দলের কাজ করছেন এবং মনোনয়নের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গেছে।
আবদুজ্জাহের সাজু বলেন, এলাকায় তরুণ ভোটারদের মধ্যে তাঁর ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। এ আসনে ৪৫ হাজার নতুন ভোটারসহ প্রায় ৫০ ভাগ ভোটার তরুণ। এ তরুণদের সঙ্গে নিয়ে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। এ বিবেচনায় তিনিই দলের মনোনয়ন পাবেন এবং দলকে আসনটি উপহার দিয়ে চমক সৃষ্টি করতে পারবেন বলে আশা করছেন নবাগত এ মনোনয়ন–প্রত্যাশী।
এদিকে, বিএনপির মনোনয়ন–প্রত্যাশী এ বি এম আশরাফ উদ্দিন নিজান ১৪-১৬ আগস্ট রামগতি ও কমলনগরে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সময় কাটান। ঈদের আগেই তিনি ঢাকায় ফেরত যান। আশরাফ উদ্দিন নিজান বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে দল আন্দোলনে রয়েছে। পাশাপাশি দাবি আদায়ের জন্য বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার প্রক্রিয়াও চালাচ্ছে। দলের এসব কর্মসূচিতে তিনি কেন্দ্রের সঙ্গে কাজ করছেন। দলের মনোনয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ আসনটি বিএনপি–অধ্যুসিত। এ কারণে দলীয় প্রার্থী দিয়েই আসনটি পাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে বিএনপির। তবে বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার কারণে প্রার্থিতার বিষয়ে দলের অন্য কোনো সিদ্ধান্ত এলে বৃহত্তর স্বার্থেই তা বিবেচনায় নিতে হবে।
এ আসনের অপর প্রার্থী আ স ম আবদুর রবও এলাকায় ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও গণসংযোগ শেষে ২৭ আগস্ট ঢাকায় ফিরে গেছেন।
আ স ম আবদুর রব বলেন, জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য যুক্তফ্রন্টসহ সমমনা দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার কাজ এগিয়ে চলেছে। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য নির্বাচনসহ সব প্রক্রিয়ায় শরিকদের নিয়েই এগোতে হবে। এ আসনে (লক্ষ্মীপুর-৪) তাঁর প্রার্থিতার বিষয়ে তিনি বলেন, জাসদ ও জেএসডির হয়ে বারবার এ আসন থেকেই নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এবারও এলাকার লোকজন এ আসনেই তাঁকে দেখতে চাচ্ছেন।
তবে ঐক্য প্রক্রিয়ায় আসন ভাগাভাগির হিসেবে আ স ম আবদুর রবকে ঢাকার কোনো আসন ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে বলে এখানে বিএনপির দায়িত্বশীল একটি অংশ মনে করছেন।