লতিরাজ কচুতে সবুজ বিপ্লব
জাহিদ হাসান, যশোরঃ
কচুর লতি চাষে লাভের মুখ দেখছেন যশোরের কৃষকরা। সাশ্রয়ী শ্রম ও কম খরচে অধিক লাভের দিশা পেয়ে কচুর লতি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে এ অঞ্চলের কৃষকরা। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের পরিবর্তে ব্যবহার করছে ছাই। এতে ফলনও হচ্ছে বেশি। দাম বেশি পাওয়ায় এদিকে যেমন কৃষকরা খুশি অন্য দিকে উৎপাদিত এসব কচুর লতি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশির বিভিন্ন জেলায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, যশোর জেলার আট উপজেলায় চলতি মৌসুমে এবার ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ হয়েছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র কচুর লতির চাষ হয়েছে আট শ’৭৫ হেক্টর জমিতে। আট উপজেলায় সবচেয়ে বারি পানি কচু ১ ও বারি পানি কচু ২ বেশি চাষ হয়।
বাঘারপাড়ার জহুরপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, ক্ষেত পরিচর্যায় কৃষকদের সাথে কাজ করছেন কৃষানীরাও। এখানকার শতাধিক কৃষক কচুর লতি চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
জহুরপুর গ্রামের কৃষক ফজলুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে তিনি দেড় বিঘা জমি বর্গা নিয়ে কচুর লতি চাষ করছেন। লতি উঠা পর্যন্ত আনুমানিক খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকার মতো। এতে তার লাভ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। জমিতে যা কচু গাছ রয়েছে এতে আরো ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার লতি বিক্রি করতে পারবে বলে তিনি জানান।
একই এলাকার চাষী আব্দার হোসেন জানান, এ অঞ্চলের কচুর লতি খেতে সুস্বাদু। তাই বাজারে এখানকার কচুর লতির চাহিদা রয়েছে। তাই দামও ভালো পান কৃষকরা। তিনি আরো বলেন, আগে জমিতে ধান চাষ করতাম। পরে একবছর ধান বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্থ হলে কৃষি অফিসারের পরামর্শে কচুর লতি চাষ করি। তাতে লাভ ভালোই হয়েছিল। তখন থেকেই কচুর লতি চাষ করি। অন্যান্য সবজির চেয়ে এর দাম বেশি থাকায় লাভও বেশি হয়।
খাজুরা হাট ইজারাদার সাইফুজ্জামান জানান, এ অঞ্চলে অল্প খরচে বেশি লাভের চাষ হচ্ছে কচুর লতি । তাই কৃষকরা কচু লতি চাষে আগ্রহী। সপ্তাহে শনি ,সোম ও বুধবারে কচুর হাট বসে। এই হাটে দেড় থেতে দুই হাজার মণ কচুর লতি ওঠে। এখানকার লতি চাষে কীটনাশক মুক্ত বলে স্বাদে সুস্বাদু। দেশের অন্য জেলার সাথে যশোরে পরিবহণ ব্যবস্থা ভালো থাকায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ফরিদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, নড়াইলসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা আসেন কচুর লতি কিনতে।
বাঘারপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল আলম সবুজদেশ নিউজ ডটকমকে বলেন , যশোর জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ কচুর লতি চাষ হচ্ছে জহুরপুর ইউনিয়নে। তিনি আরও জানান, বাঘারপাড়া উপজেলায় মোট ২৬ হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে কচুর লতি চাষ হয়েছে। এর মধ্যে জহুরপুর ইউনিয়নেই ২২ হেক্টর।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ পরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার সবুজদেশ নিউজ ডটকম কে জানান, জেলার সব উপজেলায় প্রায় তিন ফসলির আবাদ ভালো হয়। জেলায় ধানের চেয়ে সবজির চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যশোর জেলায় সদর ও বাঘারপাড়া উপজেলায় সবজির চাষ বেশি হয়। এখানকার কৃষকরা শীতকালীন সবজির পাশাপাশি কম খরচে বেশি লাভের সবজি কচুর লতি চাষে আগ্রহী হয়েছেন। আধুনিক পদ্ধতিতে কচুর লতি চাষে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের পরামর্শ ও উদ্ধুদ্ব করছে।