ঢাকা ১২:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লাভের আশায় এক জমিতে একাধিক সবজি চাষ

Reporter Name

জাহিদ হাসান, যশোরঃ

মিশ্র সবজি চাষে লাভবান হচ্ছেন যশোরের কৃষকরা। একই জমিতে অন্যান্য ফসলের সঙ্গে একাধিক সবজি চাষে যেমন জনপ্রিয়তা পেয়েছে তেমনি এক ফসলের খরচে কয়েক ধরনের সবজি চাষে বাম্পার ফলন পাচ্ছে। স্থানীয় চাহিদার তুলনায় অধিক সবজির আবাদ ভালো হওয়ায় জেলার চাহিদা মিটিয়ে এসব সবজি যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে । এ কারণে জেলায় মিশ্র সবজি চাষ দিন দিন বাড়ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, লাউ, করলা, ঢেঁড়স, মুলা, পটল, লালশাক ও শিম চাষ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। চলতি মৌসুমে যশোর জেলার আট উপজেলায় সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে। কিন্তু সবজি চাষে বেশি মুনাফা হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে চাষাবাদ হয়েছে সবজির। চলতি মৌসুমে জেলায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে সবজির আবাদা হয়েছে বলেও জানায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

যশোর জেলায় সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয় সদর উপজেলায়। সদর উপজেলার সবজিজোন চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের পোলতাডাঙ্গা গ্রামের আবুল হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে মাচা করে মাচার উপরে পটল চাষ এবং ফুলকপি ও বাঁধাকপির মিশ্র চাষ করেছেন তিনি। জমি তৈরি, পটলের বীজ বপন, সার, কীটনাশকে তার খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। একই জমিতে তিনি বাঁধাকপি ও ফুলকপি চাষ করেছেন। গত দুই সপ্তাহ ধরে তিনি বাঁধাকপি বিক্রি করছেন। ইতোমধ্যেই জমি থেকে পটল বাদে বাঁধাকপি ও ফুলকপি ২০ হাজার টাকার বিক্রয় করেছেন। ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি শেষ হলেই সঙ্গে সঙ্গে ওই একই জমিতে মিষ্টি কুমড়া চারা বপন করবেন। এভাবে প্রায় ছয় থেকে সাত বছর ধরে সবজির মিশ্র চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন তিনি।

চুড়ামনকাটি গ্রামের কৃষক আমিন আলী জানান, শীতকালই সবজি চাষের প্রধান সময়। তাই দেড় বিঘা জমিতে গোলাপি বাঁধাকপি, পটল, মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছি। বোনাস হিসাবে লাল শাক, সবুজ শাক ও মুলা চাষ করেছি। পটল ও মিষ্টি কুমড়া গাছে ফলন দেওয়ার আগে লাল শাক, সবুজ শাক ও মুলা বিক্রি হয়ে যাবে। পটল ও মিষ্টি কুড়ার সাথে তিনি শাক ও মুলা বোনাস হিসাবে মন্তব্য করেছেন। এছাড়া এক খরচে মিশ্র সবজি চাষ করে মুনাফা বেশি পাওয়া যায়।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খালিদ সাইফুল্লাহ জানান, শীতকালে যশোর জেলার সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয় সদর উপজেলায়। কৃষি অফিসের উৎসাহে এবং কৃষকদের আগ্রহে এখানকার কৃষকরা মিশ্র সবজি চাষে সফলতা পেয়েছেন। একাধিক ফসল চাষে কৃষকের যেমন বেশি মুনাফা হয় তেমনি জমির উর্বরতা শক্তিও বাড়ে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ পরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, যশোর জেলার আট উপজেলায় সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে। সবজি চাষে বেশি মুনাফা হওয়ার কারণে সবজি চাষের লক্ষমাত্রা অতিক্রম করেছে। যশোরে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে মিশ্র সবজি চাষ হয়েছে। অল্প সময়ে অধিক মুনাফা পাওয়ায় কৃষকের মধ্যে মিশ্র সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে। একদিকে সবজির বাম্পার ফলন, অপরদিকে ভালো বাজারদর থাকায় চলতি মৌসুমে বেশ লাভবান হচ্ছে এখানকার কৃষকরা। এছাড়া কৃষি বিভাগ মিশ্র সবজি চাষ বা একই জমিতে একাধিক সবজি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৭:৩৭:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২০
১৮৫৪ Time View

লাভের আশায় এক জমিতে একাধিক সবজি চাষ

আপডেট সময় : ০৭:৩৭:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২০

জাহিদ হাসান, যশোরঃ

মিশ্র সবজি চাষে লাভবান হচ্ছেন যশোরের কৃষকরা। একই জমিতে অন্যান্য ফসলের সঙ্গে একাধিক সবজি চাষে যেমন জনপ্রিয়তা পেয়েছে তেমনি এক ফসলের খরচে কয়েক ধরনের সবজি চাষে বাম্পার ফলন পাচ্ছে। স্থানীয় চাহিদার তুলনায় অধিক সবজির আবাদ ভালো হওয়ায় জেলার চাহিদা মিটিয়ে এসব সবজি যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে । এ কারণে জেলায় মিশ্র সবজি চাষ দিন দিন বাড়ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, লাউ, করলা, ঢেঁড়স, মুলা, পটল, লালশাক ও শিম চাষ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। চলতি মৌসুমে যশোর জেলার আট উপজেলায় সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে। কিন্তু সবজি চাষে বেশি মুনাফা হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে চাষাবাদ হয়েছে সবজির। চলতি মৌসুমে জেলায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে সবজির আবাদা হয়েছে বলেও জানায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

যশোর জেলায় সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয় সদর উপজেলায়। সদর উপজেলার সবজিজোন চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের পোলতাডাঙ্গা গ্রামের আবুল হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে মাচা করে মাচার উপরে পটল চাষ এবং ফুলকপি ও বাঁধাকপির মিশ্র চাষ করেছেন তিনি। জমি তৈরি, পটলের বীজ বপন, সার, কীটনাশকে তার খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। একই জমিতে তিনি বাঁধাকপি ও ফুলকপি চাষ করেছেন। গত দুই সপ্তাহ ধরে তিনি বাঁধাকপি বিক্রি করছেন। ইতোমধ্যেই জমি থেকে পটল বাদে বাঁধাকপি ও ফুলকপি ২০ হাজার টাকার বিক্রয় করেছেন। ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি শেষ হলেই সঙ্গে সঙ্গে ওই একই জমিতে মিষ্টি কুমড়া চারা বপন করবেন। এভাবে প্রায় ছয় থেকে সাত বছর ধরে সবজির মিশ্র চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন তিনি।

চুড়ামনকাটি গ্রামের কৃষক আমিন আলী জানান, শীতকালই সবজি চাষের প্রধান সময়। তাই দেড় বিঘা জমিতে গোলাপি বাঁধাকপি, পটল, মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছি। বোনাস হিসাবে লাল শাক, সবুজ শাক ও মুলা চাষ করেছি। পটল ও মিষ্টি কুমড়া গাছে ফলন দেওয়ার আগে লাল শাক, সবুজ শাক ও মুলা বিক্রি হয়ে যাবে। পটল ও মিষ্টি কুড়ার সাথে তিনি শাক ও মুলা বোনাস হিসাবে মন্তব্য করেছেন। এছাড়া এক খরচে মিশ্র সবজি চাষ করে মুনাফা বেশি পাওয়া যায়।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খালিদ সাইফুল্লাহ জানান, শীতকালে যশোর জেলার সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয় সদর উপজেলায়। কৃষি অফিসের উৎসাহে এবং কৃষকদের আগ্রহে এখানকার কৃষকরা মিশ্র সবজি চাষে সফলতা পেয়েছেন। একাধিক ফসল চাষে কৃষকের যেমন বেশি মুনাফা হয় তেমনি জমির উর্বরতা শক্তিও বাড়ে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ পরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, যশোর জেলার আট উপজেলায় সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে। সবজি চাষে বেশি মুনাফা হওয়ার কারণে সবজি চাষের লক্ষমাত্রা অতিক্রম করেছে। যশোরে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে মিশ্র সবজি চাষ হয়েছে। অল্প সময়ে অধিক মুনাফা পাওয়ায় কৃষকের মধ্যে মিশ্র সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে। একদিকে সবজির বাম্পার ফলন, অপরদিকে ভালো বাজারদর থাকায় চলতি মৌসুমে বেশ লাভবান হচ্ছে এখানকার কৃষকরা। এছাড়া কৃষি বিভাগ মিশ্র সবজি চাষ বা একই জমিতে একাধিক সবজি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে।