ঢাকা ০১:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লিবিয়ায় হত্যা: শোক আর ঋণের চাপে দিশেহারা লালচাঁদের পরিবার

Reporter Name

মাগুরাঃ

লিবিয়ার বেনগাজী থেকে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে ত্রিপলি যাওয়ার পথে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন মাগুরার লালচাঁদ। তার বাড়ি জেলার মহম্মদপুর উপজেলার নারায়ণপুর গ্রাম। তার মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে নারায়ণপুরে চলছে শোকের মাতম। একদিকে ছেলে হারানোর শোক, অন্যদিকে ধার-দেনা মাথায় নিয়ে পাগলপ্রায় লালচাঁদের বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যরা।

লালচাঁদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণপুর গ্রামের দরিদ্র কৃষক ইউসুফ শেখ ভাগ্য বদলের আশায় ছেলে লালচাঁদকে লিবিয়ায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় দালাল হাজি কামালের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। দালাল পাঁচ লাখ টাকা চান। এ সময় গরু বিক্রি, ঋণ, ধার এবং নিজস্ব সব জমি বন্ধক রেখে পাঁচ লাখ টাকা দালালের হাতে তুলে দেন তিনি। ৯ মাস আগে লিবিয়ার উদ্দেশে রওনা দেন লালচাঁদ।

লালচাঁদের ছোট ভাই নাসিরুল জানান, চার ভাই তিন বোনের মধ্যে লালচাঁদ ছিল সবার বড়। বাবা অনেক কষ্ট করে তিন বোনের বিয়ে দিলেও ধার-দেনা করে সংসার চালাতে হতো বাবাকে। এই অবস্থায় আমার বড় ভাই বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ঋণ, ধার-দেনা ও জমি বন্ধক রেখে টাকা জোগাড় করে ভাইকে দালালের মাধ্যমে লিবিয়ায় পাঠানো হয়। গত ৯ মাসে ভাই একটি টাকাও পাঠাতে পারেননি। দালালের মাধ্যমেই আমরা জানতে পারি, ভাই আর নেই। আমাদের সুদের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এখন ভাইও নেই। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম।’

সরেজমিনে লালচাঁদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে লালচাঁদের মা- বাবা পুত্র শোকে বিলাপ বকছেন। তাদের চারপাশ ঘিরে আছে গ্রামবাসী। লালচাঁদের বাবা-মার সঙ্গে এ বিষয়ে কোন কথা বলা সম্ভব হয়নি।

গ্রামবাসী জানায়, একই এলাকার তারিকুল ইসলাম এবং লালচাঁদ ঢাকার টাইলস কাজের ঠিকাদার হাজি কামালের মাধ্যমে লিবিয়া যান। তবে হাজি কামালকে কেউ চেনেন না। হাজি কামালের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি নিহতের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে বিস্তারিত জানাবো। উনি সেই মোতাবেক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।’

উল্লেখ্য, ১৫-১৬ দিন আগে লিবিয়ার বেনগাজী থেকে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে ত্রিপলিতে নেওয়া হচ্ছিল ৩৮ বাংলাদেশিকে। পথেই তাদের জিম্মি করে সন্ত্রাসীরা। এর মধ্যে ২৬ জনকে বৃহস্পতিবার (২৮ মে) নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। আহত হন ১২ জন। নিহত বাংলাদেশিদের মধ্যে ছিলেন মাগুরার লালচাঁদ।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৭:১৯:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ মে ২০২০
৩২৯ Time View

লিবিয়ায় হত্যা: শোক আর ঋণের চাপে দিশেহারা লালচাঁদের পরিবার

আপডেট সময় : ০৭:১৯:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ মে ২০২০

মাগুরাঃ

লিবিয়ার বেনগাজী থেকে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে ত্রিপলি যাওয়ার পথে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন মাগুরার লালচাঁদ। তার বাড়ি জেলার মহম্মদপুর উপজেলার নারায়ণপুর গ্রাম। তার মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে নারায়ণপুরে চলছে শোকের মাতম। একদিকে ছেলে হারানোর শোক, অন্যদিকে ধার-দেনা মাথায় নিয়ে পাগলপ্রায় লালচাঁদের বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যরা।

লালচাঁদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণপুর গ্রামের দরিদ্র কৃষক ইউসুফ শেখ ভাগ্য বদলের আশায় ছেলে লালচাঁদকে লিবিয়ায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় দালাল হাজি কামালের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। দালাল পাঁচ লাখ টাকা চান। এ সময় গরু বিক্রি, ঋণ, ধার এবং নিজস্ব সব জমি বন্ধক রেখে পাঁচ লাখ টাকা দালালের হাতে তুলে দেন তিনি। ৯ মাস আগে লিবিয়ার উদ্দেশে রওনা দেন লালচাঁদ।

লালচাঁদের ছোট ভাই নাসিরুল জানান, চার ভাই তিন বোনের মধ্যে লালচাঁদ ছিল সবার বড়। বাবা অনেক কষ্ট করে তিন বোনের বিয়ে দিলেও ধার-দেনা করে সংসার চালাতে হতো বাবাকে। এই অবস্থায় আমার বড় ভাই বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ঋণ, ধার-দেনা ও জমি বন্ধক রেখে টাকা জোগাড় করে ভাইকে দালালের মাধ্যমে লিবিয়ায় পাঠানো হয়। গত ৯ মাসে ভাই একটি টাকাও পাঠাতে পারেননি। দালালের মাধ্যমেই আমরা জানতে পারি, ভাই আর নেই। আমাদের সুদের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এখন ভাইও নেই। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম।’

সরেজমিনে লালচাঁদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে লালচাঁদের মা- বাবা পুত্র শোকে বিলাপ বকছেন। তাদের চারপাশ ঘিরে আছে গ্রামবাসী। লালচাঁদের বাবা-মার সঙ্গে এ বিষয়ে কোন কথা বলা সম্ভব হয়নি।

গ্রামবাসী জানায়, একই এলাকার তারিকুল ইসলাম এবং লালচাঁদ ঢাকার টাইলস কাজের ঠিকাদার হাজি কামালের মাধ্যমে লিবিয়া যান। তবে হাজি কামালকে কেউ চেনেন না। হাজি কামালের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি নিহতের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে বিস্তারিত জানাবো। উনি সেই মোতাবেক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।’

উল্লেখ্য, ১৫-১৬ দিন আগে লিবিয়ার বেনগাজী থেকে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে ত্রিপলিতে নেওয়া হচ্ছিল ৩৮ বাংলাদেশিকে। পথেই তাদের জিম্মি করে সন্ত্রাসীরা। এর মধ্যে ২৬ জনকে বৃহস্পতিবার (২৮ মে) নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। আহত হন ১২ জন। নিহত বাংলাদেশিদের মধ্যে ছিলেন মাগুরার লালচাঁদ।