সবুজদেশ ডেক্সঃ দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি না থাকায় আওয়ামী লীগের জন্য ঝিনাইদহের চারটি আসনই দখল করা সহজ হয়ে যায়। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও দলটি আসনগুলো দখলে রাখার জন্য বদ্ধপরিকর। এর মধ্য দিয়ে নিজেদের শক্তির একটা পরীক্ষা হয়ে যাবে দলটির। দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও মাঠে নেমে পড়েছেন এরই মধ্যে। অন্যদিকে আসনগুলোতে একসময় বিএনপির শক্ত অবস্থান ছিল। এখন সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে তাদের সেই অবস্থান নড়বড়ে। নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে বিএনপি চারটি আসনই পুনরুদ্ধার করতে পারবে বলে আশা করছে।

ঝিনাইদহ-১ আসন

শৈলকুপা উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে ঝিনাইদহ-১ আসন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ নির্বাচনে জিতলেও ২০০১ সালে এসে আসনটি বিএনপির হাতছাড়া হয়ে যায়। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল হাই নির্বাচিত হন।

এ আসনে আওয়ামী লীগের অন্তত ছয়জন সম্ভাব্য প্রার্থী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা এ আসন থেকে তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য আব্দুল হাই। তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এ ছাড়া আছেন দলের সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুজ্জামানের মেয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পারভীন জামান কল্পনা, শৈলকুপা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও দলের জেলা শাখার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক নায়েব আলী জোয়ার্দ্দার, পিয়াংকা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেন্দ্রীয় আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরামের (আসাফো) সভাপতি সাইদুর রহমান সজল, ঢাকা মিরপুর থানা শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আজাদুল কবীর ও বিশ্বাস বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম দুলাল।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এ আসন থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল হাইয়ের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

আব্দুল হাই কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। একাত্তরে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। এখনো দলকে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এলাকায় অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার আশীর্বাদে আগামী দিনে এলাকার উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখতে চাই।’

আসাফোর সভাপতি সাইদুর রহমান সজল গণসংযোগের মাধ্যমে এলাকায় শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সবাইকে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।

অন্যদিকে কাজী আজাদুল কবীর বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে তাদের আওয়ামী লীগের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্ট করছি। আমি মনোনয়ন পেলে বিজয় নিশ্চিত হবে, আশা করি।’

এ আসন দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির দখলে ছিল। কিন্তু ২০০১ সালের পর থেকে আসনটি আর কবজায় নিতে পারেনি দলটি। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলেও এবার বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে নানাভাবে তাঁদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। এই সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন সাবেক সংসদ সদস্য, দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও শৈলকুপা উপজেলা শাখার সভাপতি আব্দুল ওহাব, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ও খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু।

আসাদুজ্জামান আসাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন পেলে নির্বাচনে অংশ নেব। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমি আশাবাদী ধানের শীষের বিজয় হবে।’

জাতীয় পার্টির (এরশাদ) কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মনিকা আলম এ আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে গণসংযোগ করছেন। তিনি দলের শৈলকুপা উপজেলা শাখার সভাপতিও।

ঝিনাইদহ-২ আসন

ঝিনাইদহ সদর ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নিয়ে এ আসন গঠিত। জেলার চারটি আসনের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ আসন এটি। গত নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সাল থেকে আসনটি বিএনপির দখলে ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি আওয়ামী লীগের কবজায় চলে যায়। সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মজিদের ছেলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম অপু চারবারের নির্বাচিত বিএনপির প্রার্থী মসিউর রহমানকে পরাজিত করে আসনটি দখলে নেন। যদিও অপু দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও আসনটি ধরে রাখতে পারেননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমির কাছে পরাজিত হন তিনি। স্বতন্ত্র প্রার্থী সমি এখন আর স্বতন্ত্র নেই। তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের মনোনায়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় এ দুজন ছাড়াও রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম অপু, সাধারণ সম্পাদক ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাস ও সহসভাপতি শিল্পপতি নাসের শাহরিয়ার জাহেদী।

শফিকুল ইসলাম অপু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গতবার দলীয় কিছু সমস্যার কারণে আমার পরাজয় হয়েছে। ওই সমস্যা এবার আর নেই। নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে অবশ্যই নির্বাচন করব এবং আশা করি, নৌকার বিজয় হবে।’

তরুণ নেতা সাইদুল করিম মিন্টু বলেন, ‘একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা হৃদয় দিয়ে দল করি, মাথা দিয়ে নয়। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করে, আমার বিশ্বাস—নেত্রী এমন নেতাদেরই দলীয় মনোনয়ন দেবেন। নেত্রী মনোনয়ন দিলে অবশ্যই নির্বাচন করব। আমি আশাবাদী, নৌকার বিজয় হবে। তবে নেত্রীর সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত।’

কনক কান্তি দাস বলেন, ‘সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে রাজনীতি করে আওয়ামী লীগের আদর্শ-চেতনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে এলাকার উন্নয়ন করেছি। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে জননেত্রীর উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে নৌকার বিজয় হবে, আশা করি।’

এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এলাকায় নানাভাবে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন চারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলা শাখার সভাপতি মসিউর রহমান, দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর রবিউল ইসলাম লাভলু ও জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক হরিণাকুণ্ডু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মজিদ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ আসনে বরাবরই বিএনপির অবস্থান বেশ শক্ত।

জানতে চাইলে মসিউর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখানে বিএনপির সাংগঠনিক ভিত খুবই শক্ত। বিএনপিকে দুর্বল করার জন্য নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও মামলা দিয়ে নির্যাতন চালানো হচ্ছে।’

বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানায়, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে মসিউর রহমান মনোনয়ন পাবেন এবং তিনিই বিজয়ী হবেন। তবে মসিউর রহমানের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে পরিকল্পিতভাবে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে নির্বাচনে অযোগ্য প্রমাণের চেষ্টা করা হচ্ছে। মসিউর রহমান নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে বিকল্প হিসেবে এম এ মজিদ রয়েছেন বলে দলীয় একটি সূত্র জানায়।

ঝিনাইদহ-২ আসনে জেলা জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সহসভাপতি ওহিদুল ইসলাম দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

ঝিনাইদহ-৩ আসন

মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলা নিয়ে ঝিনাইদহ-৩ আসন। ১৫ বছর ধরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছাড়াই চলছে মহেশপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ। ফলে এ উপজেলায় আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে সংগঠিত হতে পারেনি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যে যার ইচ্ছামতো দলকে ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ করে নেতাকর্মীরা। ১৯৯১ সাল থেকে বিএনপির দখলে থাকা আসনটি ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের দখলে আসে। সংসদ সদস্য হন শফিকুল আজম খান চঞ্চল। কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চঞ্চল দলীয় মনোনয়ন লাভে ব্যর্থ হন। কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক নেতা নবী নেওয়াজ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন অন্তত ১০ জন। তাঁরা হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজ, সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল আজম, মহেশপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিল্পপতি সাজ্জাতুজ জুম্মা চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ময়জুদ্দীন হামিদ, সাবেক সংসদ সদস্য ময়নুদ্দীন নিয়াজী, কোটচাঁদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শরিফুন নেছা মিকি, প্রীতি গ্রুপের চেয়ারম্যান সাবেক সংসদ সদস্য পারভিন তালুকদার মায়া, দলের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক রেজাউল করিম টিটোন, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আলী ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এম এম জামান মিল্লাত।

সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দলকে সংগঠিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমি নির্বাচিত হয়ে এলাকার রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন কিংবা ভবন করাসহ অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। দলীয় মনোনয়ন পেলে আশা করি, নৌকার বিজয় হবে।’

শফিকুল আজম খান চঞ্চল বলেন, ‘স্থানীয় নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে এলাকায় কাজ করে যাচ্ছি। দলীয় মনোনয়ন পেলে আশাবাদী, আমি বিজয়ী হব।’

এ আসনে ১৯৯১ সাল থেকে চারবার বিএনপির শহিদুল ইসলাম মাস্টার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসনটি বিএনপির হাতছাড়া হয়ে যায়। মহেশপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম পরাজিত হন আওয়ামী লীগের শফিকুল আজম খান চঞ্চলের কাছে।

স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের সূত্রে জানা গেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এলাকায় গণসংযোগ করছেন প্রয়াত সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলামের ছেলে মহেশপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রনি। এ ছাড়া দলের মনোনয়ন চান ওই উপজেলা শাখা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মমিনুর রহমান মোমিন, দলের কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিবিষয়ক সহসম্পাদক কণ্ঠশিল্পী মনির খান, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বর্তমান কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহসম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল।

মেহেদী হাসান রনি বলেন, ‘আমার বাবা শহিদুল ইসলাম দলের জন্য নিবেদিত ছিলেন। মহেশপুর-কোটচাঁদপুর বিএনপিকে সুসংগঠিত করেছিলেন তিনি। বাবার রাজনৈতিক সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে নিয়ে বিএনপিকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছি।’

মমিনুর রহমান মোমিন বলেন, ‘সরকারি দলের অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার দলের ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের পাশে থেকে সহযোগিতা দিয়ে দলকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছি।’

এ আসনে মহেশপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সভাপতি সাংবাদিক আব্দুর রহমান দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এলাকায় গণসংযোগ করছেন।

ঝিনাইদহ-৪

কালীগঞ্জ উপজেলা ও সদর উপজেলার আংশিক নিয়ে ঝিনাইদহ-৪ সংসদীয় এলাকা। এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যেই দ্বিধাবিভক্ত। দুই পক্ষ পৃথকভাবে সাংগঠনিক কর্মসূচি পালন করে। এক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজীম আনার। অন্য পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও দলের ওই উপজেলা শাখার সভাপতি আবদুল মান্নান। সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগের অবস্থান এখানে শক্ত হলেও সাংগঠনিকভাবে খুব একটা শক্ত নয়। দলীয় মনোনয়ন প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন ছয়জন। আনোয়ারুল আজীম আনার ও আবদুল মান্নান ছাড়াও আছেন কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠাণ্ডু, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান মতি, কালীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বিজু ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদ শমসের।

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বড় দল। নেতৃত্ব নিয়ে দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে। এটা কোনো সমস্যা নয়। আমি এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছি। আমার প্রতি এলাকার মানুষের যথেষ্ট সমর্থন আছে।’

সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, ‘কালীগঞ্জ আওয়ামী লীগের জন্য নিবেদিত ও ত্যাগী বেশির ভাগ নেতাকর্মী আমার সঙ্গে আছে। দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমি সংসদ সদস্য থাকাকালে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এলাকায়  কাজ করছি। নেত্রী মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করব।’

এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান বেল্টু। বিএনপি থেকে চারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহিদুজ্জামান মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন। এ আসনে বিএনপি প্রকাশ্যে দুই ভাগে বিভক্ত। ফলে বিএনপির শক্ত ভিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে অন্যরা হলেন শহিদুজ্জামান বেল্টুবিরোধী হিসেবে পরিচিত উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদুর রহমান হামিদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হারুন অর রশিদ মোল্লা।

এ আসনে জামায়াত নেতা মতিয়ার রহমান খুব গোপনীয়তা রক্ষা করে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন। না হলে স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে পারেন—এমন তথ্য জানা গেছে।

ঝিনাইদহ জেলা  জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য নূর উদ্দিন আহম্মেদ দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এলাকায় গণসংযোগ করছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here