শাহবাগে কোটা বহালের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত
মন্ত্রিপরিষদের কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডসহ কয়েকটি সংগঠনের সদস্যরা। আজ রোববার রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন তাঁরা।
একই সঙ্গে প্রতিবন্ধী কোটা বহাল রাখার দাবিতে একই স্থানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন প্রতিবন্ধীরা ও প্রতিবন্ধীদের কয়েকটি সংগঠন।
প্রতিবন্ধীদের একজন বলেন, ‘আমরা এমনিতেই চাকরিতে সুবিধাবঞ্চিত। এর মধ্যে কোটা তুলে দিয়ে আমাদের ওপর অন্যায় করা হয়েছে।’ এটি বাতিল করে অবিলম্বে প্রতিবন্ধী কোটা বহাল রাখার দাবি জানান তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আল মামুন বলেন, আমাদের ছয় দফা দাবি। ১. ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল, ২. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের কটূক্তি বিচার, ৩. মুক্তিযোদ্ধা পারিবারিক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, ৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়িতে হামলার বিচার, ৫. প্রশাসনে রাজাকার ও রাজাকারদের সন্তানদের তালিকা করে বরখাস্ত করা, ৬. মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান।
মোহাম্মদ আল মামুন বলেন, যত দিন পর্যন্ত আমাদের দাবি বাস্তবায়ন করা না হবে, তত দিন পর্যন্ত শাহবাগে প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত লাগাতার কর্মসূচি ও সারা বাংলাদেশে একই কর্মসূচি পরিচালনা করা হবে।
এই অবরোধ কর্মসূচির কারণে শাহবাগের এক পাশ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে বাসগুলো হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে দিয়ে ঘুরে যাচ্ছে।
৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখা ছাড়াও তাঁদের অন্য দাবিগুলো হলো মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য সুরক্ষা আইন, রাজাকারের সন্তানদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ না দেওয়া ও তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা।
এসব দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।সেখানে আন্দোলনকারীরা বলছেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কোটা পর্যালোচনা কমিটির সিদ্ধান্ত অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা স্বাধীনতাবিরোধীদের কাছে হেরে যাওয়ার শামিল।
গত বুধবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের যে সুপারিশ করেছিল সরকারি কমিটি, তাতে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। অর্থাৎ ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত চাকরিতে কোনো কোটা থাকবে না। এসব পদে নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদন হয়।
বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে নির্বাহী আদেশে সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি চালু করা হয়। বর্তমানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে ৪৫ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হয়। বাকি ৫৫ শতাংশ পদে নিয়োগ করা হয় অগ্রাধিকার কোটায়। অগ্রাধিকার কোটার মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা (পরে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, এখন নাতি-নাতনি) কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা এবং ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিসত্তা কোটা। সর্বশেষ ২০১২ সালে বিদ্যমান অগ্রাধিকার কোটায় কাঙ্ক্ষিত যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেই কোটা থেকে ১ শতাংশ পদ প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের দিয়ে পূরণের নিয়ম চালু হয়। এর বাইরে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে পোষ্য, আনসার-ভিডিপিসহ আরও কিছু কোটা রয়েছে।