ঢাকা ০৬:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিকলেই বন্দি মায়ের ভালোবাসা!

Reporter Name

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রহিমা খাতুনের দুই চোখে দেখতে পারেন না। শরীরে হাজারও ক্ষত চিহ্নের দাগ। সঙ্গে প্রতিবন্ধী শিশুকে নিয়ে যাযাবর জীবন কাঁটছে তার। যেখানেই রাত হয়, সেখানেই থেকে যান রহিমা। শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করে চলে মা-ছেলের সংসার। রহিমা খাতুনের ৮ বছরের শিশু সন্তান আব্দুর রহমানও মানসিক প্রতিবন্ধী। ছেলেকে হারানোর ভয়ে রহিমা খাতুন তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন সব সময়। রাতে ঘুমানোর সময়ও মায়ের শরীরের সাথে বেঁধে রাখতে দেখা গিয়েছে তাকে। মা ছেলের এই শিকল বন্দি জীবন দেখে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

রহিমা খাতুনের বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামে। সে ওই গ্রামের জয়নাল হোসেনের মেয়ে। রহিমা খাতুনের বিয়ে হয়েছিল। দীর্ঘদিন কোন রহিমা খাতুনের খোঁজখবর নেন তার স্বামী। প্রতিবন্ধী এই শিশু সন্তানকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান তিনি।

জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেলে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছিলেন চিকিৎসা নিতে। রাতে ঘুমিয়ে ছিলেন হাসপাতালের মেঝেতে। ঘুমানো অবস্থায় দেখা গেয়ে ছেলেকে শিকলের সাথে নিজের শরীরের সাথে বেঁধে রেখেছেন। না খেয়েই হাসপাতালে ঘুমিয়ে ছিলেন মা-ছেলে। বুধবার দুপুরে সন্তানকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যান রহিমা খাতুন।

হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর স্বজন ইদ্রিস আলী জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে মা ও ছেলে আসে। রাতে হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে ছিলেন। ছেলেকে শিকলে বেঁধে রেখেছিলেন তার শরীরের সাথে। দুইজনই না খেয়ে শুয়ে ছিলেন। ওষুধ নেওয়ার জন্য হাসপাতালে এসেছিল।

বুধবার দুপুরে রহিমা খাতুন এ প্রতিবেদককে জানান, তার স্বামী কোন খোঁজখবর নেন না। প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে তিনি ভিক্ষা করেন। তার ঘর বাড়ি নেই, রাস্তায় থাকেন। দুই চোখে দেখতে পান না। বিভিন্ন রোগ-ব্যধিতে আক্রান্ত তিনি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে এসেছিলেন ওষুধ নিতে। রাত হয়ে যাওয়ায় না খেয়ে হাসপাতালেই ঘুমিয়ে ছিলেন। ছেলের সহায়তায় চলাফেরা করেন তিনি। ছেলে প্রতিবন্ধী হওয়া সত্তে¡ও সরকারি কোন সুযোগ-সুবিধা পাননা।

তিনি আরো জানান, ছেলেকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাতে হয়। দেখা শোনা করার মত কোন মানুষ নেই। তিনি সরকারের কাছে একটি ঘরের দাবি করেন। বুধবার দুপুরে ওষুধ পেয়েছেন হাসপাতাল থেকে।

ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ঋতু জানান, তিনি ওই মহিলাকে চিনতে পারেন নি। ওই মহিলার বাড়ি তার ইউনিয়নে না।

About Author Information
আপডেট সময় : ১১:২৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৩
৯৮ Time View

শিকলেই বন্দি মায়ের ভালোবাসা!

আপডেট সময় : ১১:২৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রহিমা খাতুনের দুই চোখে দেখতে পারেন না। শরীরে হাজারও ক্ষত চিহ্নের দাগ। সঙ্গে প্রতিবন্ধী শিশুকে নিয়ে যাযাবর জীবন কাঁটছে তার। যেখানেই রাত হয়, সেখানেই থেকে যান রহিমা। শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করে চলে মা-ছেলের সংসার। রহিমা খাতুনের ৮ বছরের শিশু সন্তান আব্দুর রহমানও মানসিক প্রতিবন্ধী। ছেলেকে হারানোর ভয়ে রহিমা খাতুন তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন সব সময়। রাতে ঘুমানোর সময়ও মায়ের শরীরের সাথে বেঁধে রাখতে দেখা গিয়েছে তাকে। মা ছেলের এই শিকল বন্দি জীবন দেখে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

রহিমা খাতুনের বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামে। সে ওই গ্রামের জয়নাল হোসেনের মেয়ে। রহিমা খাতুনের বিয়ে হয়েছিল। দীর্ঘদিন কোন রহিমা খাতুনের খোঁজখবর নেন তার স্বামী। প্রতিবন্ধী এই শিশু সন্তানকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান তিনি।

জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেলে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছিলেন চিকিৎসা নিতে। রাতে ঘুমিয়ে ছিলেন হাসপাতালের মেঝেতে। ঘুমানো অবস্থায় দেখা গেয়ে ছেলেকে শিকলের সাথে নিজের শরীরের সাথে বেঁধে রেখেছেন। না খেয়েই হাসপাতালে ঘুমিয়ে ছিলেন মা-ছেলে। বুধবার দুপুরে সন্তানকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যান রহিমা খাতুন।

হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর স্বজন ইদ্রিস আলী জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে মা ও ছেলে আসে। রাতে হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে ছিলেন। ছেলেকে শিকলে বেঁধে রেখেছিলেন তার শরীরের সাথে। দুইজনই না খেয়ে শুয়ে ছিলেন। ওষুধ নেওয়ার জন্য হাসপাতালে এসেছিল।

বুধবার দুপুরে রহিমা খাতুন এ প্রতিবেদককে জানান, তার স্বামী কোন খোঁজখবর নেন না। প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে তিনি ভিক্ষা করেন। তার ঘর বাড়ি নেই, রাস্তায় থাকেন। দুই চোখে দেখতে পান না। বিভিন্ন রোগ-ব্যধিতে আক্রান্ত তিনি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে এসেছিলেন ওষুধ নিতে। রাত হয়ে যাওয়ায় না খেয়ে হাসপাতালেই ঘুমিয়ে ছিলেন। ছেলের সহায়তায় চলাফেরা করেন তিনি। ছেলে প্রতিবন্ধী হওয়া সত্তে¡ও সরকারি কোন সুযোগ-সুবিধা পাননা।

তিনি আরো জানান, ছেলেকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাতে হয়। দেখা শোনা করার মত কোন মানুষ নেই। তিনি সরকারের কাছে একটি ঘরের দাবি করেন। বুধবার দুপুরে ওষুধ পেয়েছেন হাসপাতাল থেকে।

ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ঋতু জানান, তিনি ওই মহিলাকে চিনতে পারেন নি। ওই মহিলার বাড়ি তার ইউনিয়নে না।