শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি
যশোর প্রতিনিধিঃ
সোনালি বোরো ধানের ক্ষেতে হলুদের আভা ছাড়িয়েছিলো বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। সপ্তাহ পেরুলেই ঘরে উঠবে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন। বোরো মৌসুমে ধানের ভালো ফলনে ক’দিন আগেও কৃষকের মন ছিলো বেশ আনন্দে। আশা ছিলো ধান বিক্রি করে করোনা সংকট কাটিয়ে উঠবে। তবে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে সেই আশায় গুড়েবালি। গত দু’দিনে মাঝারি বৃষ্টি ও শিলায় আঘাতে বেশ ক্ষতি হয়েছে যশোর অঞ্চলের চাষীদের। শিলার আঘাতে কালো হয়েছে ধানের শিষ আর ঝড়-বৃষ্টিতে পাকা ধান নুয়ে পড়েছে মাটিতে। করোনার জেরে শ্রমিক সমস্যায় ধান কাটা মাড়াইয়ে প্রকৃতির এই তান্ডবে দিশাহারা এ অঞ্চলের কৃষক কুল।
(২৫ এপ্রিল) শনিবার যশোর সদর উপজেলার বিভিন্ন মাঠঘুরে দেখা গেছে, ধান কাটা ও ঘরে তোলার মৌসুমের শুরু দিকে বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টিতে বেশ কিছু এলাকার কৃষক বেকায়দায় পড়েছে। কিছু কিছু এলাকায় বৃষ্টিতে ধান গাছ নুয়ে পড়েছে; শিলার আঘাতে ঝরে গেছে ধান। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বাঘারপাড়া ও সদর উপজেলায়।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয় সূত্র জানায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বোরো ধান উৎপাদন হয় যশোরে। জেলায় এবার বোরো ধানের চাষ হয়েছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলনেরও সম্ভবনা হয়েছিলো। আগামী এক সপ্তাহ পর থেকে ধান কাটা শুরু হবে। কিন্তু করোনাভাইরাসের শ্রমিকসংকটের মধ্যে ঝড় বৃষ্টিতে ধান বাড়ি নেওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে জেলা কৃষি বিভাগ এ অবস্থায় কৃষকের ধান ঘরে তুলতে ৬২টি ধান কাটার যন্ত্র দিয়ে ধান কেটে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
সদর উপজেলার পুলেরহাট গ্রামের কৃষক আমির আলী জানান, চলতি বোরো মৌসুমে ৪ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি। কয়েকদিন পরই যে ধান ঘরে ওঠার কথা ছিল, শিলা-বৃষ্টিতে ঝরে গেছে সে ধান, দাঁড়িয়ে আছে শুধু গাছটা।
পুলের হাট এলাকার কৃষক ফজলুর গাজী বলেন, ‘সাত বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। ধান খুব ভালো হয়েছে। ধানে রং চড়েছে। করোনার কারণে এবার সাতক্ষীরা থেকে শ্রমিক আসতে পারছে না। আর ৩-৪ দিন পর ধান কাটতে হবে। এমন সময় শিলা বৃষ্টিতে ধানগাছ ক্ষেতে মাটিতে পড়ে গেছে। এ বছর পেটের ভাত জোগাড় হবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি গ্রামের কৃষক আক্কাস আলী বলেন, ধান কাটার সময়ে বৃষ্টিতে ধানের খুবই ক্ষতি হয়েছে। এমনিতেই করোনার কারণে ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না ; তার মধ্যে ঝড় বৃষ্টিতে ধান এলোমেলো করে দিয়েছে। আকাশের অবস্থা এখনো ভালো নেই। এ অবস্থায় থাকলে এবার ধান মাঠেই রেখে আসতে হবে। খুব চিন্তার মধ্যে পড়ে গেছি। শুনছি সরকার ধান কেটে দিবে। দ্রুত ব্যবস্থা করলে খুব ভালো হয়। করোনার কারণে ধানের বাজার খোলা না থাকায় এখনো ধানের দাম ও সরবারহ হচ্ছেনা। ফলে ধান ব্যবসায়ীরা ধান কিনতে পারছেন না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে ছিল। প্রাকৃতিক তেমন কোনো দুর্বিপাক হয়নি। এ জন্য জেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে ধান ঘরে নেওয়ার আগে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তবে আর কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে কাটামাড়াইয়ের কাজ শেষে কৃষকরা ভালোভাবেই ফসল ঘরে তুলতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ধান কাটার শ্রমিকসংকট দেখা দিয়েছে। ৩৮টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও ২৪টি রিপার মেশিন দিয়ে কৃষকের ধান কাটার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।