ঢাকা ১২:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শুরুতেই হোঁচট ঝিনাইদহে জলাশয় পুনরুদ্ধার অভিযান

Reporter Name

ঝিনাইদহঃ

ঝিনাইদহে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল দখলদার উচ্ছেদ অভিযান শুরুতেই বন্ধ হয়ে গেছে। শুরু হওয়ার একদিন পর তা বন্ধ হয়েছে যায়। আবার কবে শুরু হবে তাও বলতে পারছে না খাল দখল উচ্ছেদ কাজের সংশ্লিষ্টরা।

চলতি মাসের ২৩ ডিসেম্বর জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার চুঙ্গারবিল ও কপোতাক্ষ খালের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এদিন অস্থায়ী ছয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করা হয়। যদিও ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ওই এলাকায় অর্ধশতাধিক অবৈধ স্থাপনা থাকলেও মাত্র ছয় প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করে গুটিয়ে নেওয়া হয় উচ্ছেদ কার্যক্রম। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, দরপত্র আহ্বান না হওয়া, অর্থ সংকট ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপে বন্ধ হয়েছে উচ্ছেদ কাজ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, জেলায় মোট খাল রয়েছে ১১৫টি এবং বিল রয়েছে দুটি। যার দৈর্ঘ্য ৪৫৩ কিলোমিটার। দখলের ফলে এগুলোর মধ্যে প্রায় ২০ ভাগ খাল পুরোপুরি অস্তিত্ব হারিয়েছে। বাকি খালগুলোও দখলদারদের কবলে পড়ে মৃতপ্রায়। বাদ যায়নি পানি উন্নয় বোর্ডে গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের খাল।

এসব খাল-বিল দখল হয়ে যাওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য হারিয়ে বহু জলজ প্রাণী ধ্বংসের মুখে পড়েছে। বিলুপ্তির পথে দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ। 

জেলা সদরসহ শৈলকুপা, হরিণাকুণ্ডু, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর এবং মহেশপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় প্রভাবশালী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা খালের চারপাশে ইচ্ছামতো তৈরি করেছেন দোকানপাট-ঘারবাড়ি, কেটেছেন পুকুর। দীর্ঘদিন এমন অবস্থা চললেও তা দখলমুক্ত করতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড কিংবা জেলা প্রশাসন। অথচ এই খালগুলোই পানি নিষ্কাশন, মাছের বিচরণক্ষেত্র কিংবা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে যুগের পর যুগ।

ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক রহমত আলী জানান, খাল-বিল দখল হয়ে যাওয়াই সেখানে কমেছে মাছের প্রজাতি। পাশাপাশি বিভিন্ন জলজ প্রাণীও ধ্বংস হচ্ছে। এতে করে খাদ্য-শৃঙ্খলের ওপর একটা বড় ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে; যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। ফলে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে মানবজাতির ওপর।

ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘সচিব মহোদয়ের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। দরপত্র আহ্বান না হওয়ায় এবং অর্থ না থাকায় কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে। অর্থ পেলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। এছাড়াও ডেল্টা প্লানের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে জেলার দখল হওয়া প্রায় ৬৭ খাল পুনঃখনন করা হবে। সাথে সাথে জিকে সেচ প্রকল্পের খালও খনন করা হবে।’

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জেলার ভারতীয় সীমান্তের কোদলা নদীর প্রায় একশত পুকুর উচ্ছেদ করে দখলমুক্ত করার কথা উল্লেখ করে জানান, ব্যক্তি স্বার্থে যারা খাল দখল করছেন তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে এসব খাল উচ্ছেদ করা হবে এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Tag :

About Author Information
Update Time : ১০:০০:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯
৩৭৬ Time View

শুরুতেই হোঁচট ঝিনাইদহে জলাশয় পুনরুদ্ধার অভিযান

Update Time : ১০:০০:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯

ঝিনাইদহঃ

ঝিনাইদহে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল দখলদার উচ্ছেদ অভিযান শুরুতেই বন্ধ হয়ে গেছে। শুরু হওয়ার একদিন পর তা বন্ধ হয়েছে যায়। আবার কবে শুরু হবে তাও বলতে পারছে না খাল দখল উচ্ছেদ কাজের সংশ্লিষ্টরা।

চলতি মাসের ২৩ ডিসেম্বর জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার চুঙ্গারবিল ও কপোতাক্ষ খালের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এদিন অস্থায়ী ছয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করা হয়। যদিও ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ওই এলাকায় অর্ধশতাধিক অবৈধ স্থাপনা থাকলেও মাত্র ছয় প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করে গুটিয়ে নেওয়া হয় উচ্ছেদ কার্যক্রম। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, দরপত্র আহ্বান না হওয়া, অর্থ সংকট ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপে বন্ধ হয়েছে উচ্ছেদ কাজ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, জেলায় মোট খাল রয়েছে ১১৫টি এবং বিল রয়েছে দুটি। যার দৈর্ঘ্য ৪৫৩ কিলোমিটার। দখলের ফলে এগুলোর মধ্যে প্রায় ২০ ভাগ খাল পুরোপুরি অস্তিত্ব হারিয়েছে। বাকি খালগুলোও দখলদারদের কবলে পড়ে মৃতপ্রায়। বাদ যায়নি পানি উন্নয় বোর্ডে গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের খাল।

এসব খাল-বিল দখল হয়ে যাওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য হারিয়ে বহু জলজ প্রাণী ধ্বংসের মুখে পড়েছে। বিলুপ্তির পথে দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ। 

জেলা সদরসহ শৈলকুপা, হরিণাকুণ্ডু, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর এবং মহেশপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় প্রভাবশালী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা খালের চারপাশে ইচ্ছামতো তৈরি করেছেন দোকানপাট-ঘারবাড়ি, কেটেছেন পুকুর। দীর্ঘদিন এমন অবস্থা চললেও তা দখলমুক্ত করতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড কিংবা জেলা প্রশাসন। অথচ এই খালগুলোই পানি নিষ্কাশন, মাছের বিচরণক্ষেত্র কিংবা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে যুগের পর যুগ।

ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক রহমত আলী জানান, খাল-বিল দখল হয়ে যাওয়াই সেখানে কমেছে মাছের প্রজাতি। পাশাপাশি বিভিন্ন জলজ প্রাণীও ধ্বংস হচ্ছে। এতে করে খাদ্য-শৃঙ্খলের ওপর একটা বড় ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে; যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। ফলে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে মানবজাতির ওপর।

ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘সচিব মহোদয়ের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। দরপত্র আহ্বান না হওয়ায় এবং অর্থ না থাকায় কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে। অর্থ পেলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। এছাড়াও ডেল্টা প্লানের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে জেলার দখল হওয়া প্রায় ৬৭ খাল পুনঃখনন করা হবে। সাথে সাথে জিকে সেচ প্রকল্পের খালও খনন করা হবে।’

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জেলার ভারতীয় সীমান্তের কোদলা নদীর প্রায় একশত পুকুর উচ্ছেদ করে দখলমুক্ত করার কথা উল্লেখ করে জানান, ব্যক্তি স্বার্থে যারা খাল দখল করছেন তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে এসব খাল উচ্ছেদ করা হবে এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।