শেষ ট্রেনের এসি টিকিট
ঈদের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করতে কমলাপুরে মানুষের ঢল নেমেছে। কেউ এসে টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়েছেন গত রাতে, কেউবা সেই লাইনে এসে সামিল হয়েছেন আজ ভোরের দিকে। সবারই দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কাঙ্ক্ষিত টিকিটের অপেক্ষা। এত দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকে ট্রেনের এসি টিকিট পাননি বলে অভিযোগ জানিয়েছেন।
বুধবার সকাল ৮টা থেকে কমলাপুরে শুরু হয়েছে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি। আজ দেয়া হচ্ছে ১৭ আগস্টের টিকিট। এই দিনের টিকিট পেতে কমলাপুরে সকাল থেকেই ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ২৬টি কাউন্টার থেকে এই টিকিট দেয়া হচ্ছে।এর মধ্যে ২টি কাউন্টার নারীদের জন্য সংরক্ষিত আছে। প্রতিটি কাউন্টারের সামনে থেকে টিকিট প্রত্যাশী মানুষের দীর্ঘ লাইন এঁকেবেঁকে স্টেশনের বাহিরের দিকে।
১৭ আগস্টের টিকিটের জন্য গত রাত ১২টার দিকে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন হাবিবুর রহমান নামের একজন বেসরকারী চাকরিজীবী। তিনি বলেন, চট্রগ্রামগামী সোনার বাংলা ট্রেনের এসি টিকিটের জন্য গত রাতে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু সকালে ৮টায় যখন কাউন্টার থেকে টিকিট দিতে শুরু হল, তখন ২০/২৫ জনের পরই কাউন্টার থেকে জানালো হলো- এসি টিকিট শেষ। তাহলে এত কষ্ট করে এর দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে কী লাভ হল?শুরুতেই কীভাবে শেষ হয়ে গেল টিকিট?
দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেসের এসি টিকিট পাননি আব্দুর রাজ্জাক নামের একজন টিকিট প্রত্যাশী। তিনি বলেন, লাইনের প্রথম কয়েকজনের পরই এসি টিকিট শেষ বলে জানানো হল। আমরা যারা এসি টিকিটের জন্য ৮/৯ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলাম তারাও এসি টিকিট পেলাম না। এত তাড়াতাড়ি কীভাবে টিকিট শেষ হয়ে গেল তা বুঝতে পারছি না।
এ বিষয়ে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, প্রথম দিনেই টিকিট প্রত্যাশী মানুষের দীর্ঘ লাইন। যত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছে তাদের সবাইকে তো আর আমরা টিকিট দিতে পারবো না। আমাদের সম্পদ সীমিত। ঈদের সময় সবাই এসি টিকিট চায়, এসময় চাহিদা থাকে বেশি কিন্তু এসি টিকিটের সংখ্যা তো কম। ২৬ টি কাউন্টার থেকে এক সঙ্গে টিকিট দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অনলাইন,মোবাইলে আছে ২৫ শতাংশ কোটা।৫ শতাংশ ভিআইপি ছাড়াও রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৫ শতাংশ। বাকিগুলো টিকিটের ৬৫ শতাংশ দেয়া হচ্ছে কাউন্টার থেকে। তাহলে যারা চাইবে সবাইকে তো আর আমরা এসি টিকিট দিতে পারবো না, কারণ আমাদের সম্পদ সীমিত।
আজ বিক্রি হবে ২৩৫৩৬ টিকিট :
কমলাপুর রেলস্টেশনে সকাল থেকে ২৬ টি কাউন্টারে আগামী ১৭ আগস্টের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। আজ বিক্রি হবে ৩১ আন্তঃনগর ট্রেনের ২৩ হাজার ৫৩৬টি টিকিট বলে জানিয়েছেন স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সুষ্ঠু ও নিরাপদে ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে ট্রেন পরিচালনায় সম্পৃক্ত রেলওয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সকল প্রকার ছুটি বাতিল করা হবে। ২১ ও ২২ আগস্ট মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং ২৩ আগস্টে বন্ধন এক্সপ্রেস চলাচল করবে না। একজন যাত্রীকে একসঙ্গে সর্বোচ্চ ৪টি টিকিট দেয়া হবে এবং বিক্রিত টিকিট ফেরত নেয়া হবে না।এদিকে পবিত্র ঈদুল আজহার ৫ দিন আগে ১৮ আগস্ট থেকে ঈদের আগেরদিন পর্যন্ত সব আন্তঃনগর ট্রেন সাপ্তাহিক বন্ধের দিনও চলাচল করবে।
প্রতিবারের মতো এবারও দশ দিন আগে থেকে শুরু হয়েছে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি। আগামীকাল ৯ আগস্ট বিক্রি হবে ১৮ আগস্টের টিকিট। এভাবে ১০, ১১ ও ১২ আগস্ট পর্যায়ক্রমে টিকিট মিলবে ১৯, ২০ এবং ২১ আগস্টের টিকিট। এই দিনগুলোতে ঢাকা ও চট্রগ্রাম স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। কমলাপুর স্টেশনে ২৬টি কাউন্টার খোলা রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ২টি কাউন্টার মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আছে।
এছাড়া ১৫ আগস্ট থেকে শুরু হবে ঈদ ফেরত যাত্রীদের জন্য ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি। ঈদ ফেরত অগ্রিম টিকিট রাজশাহী, খুলনা,রংপুর, দিনাজপুর ও লালমনিহাট স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হবে। ফিরতি টিকিট ১৫ আগস্টে পাওয়া যাবে ২৪ আগস্টের টিকিট। একই ভাবে ১৬, ১৭, ১৮ ও ১৯ আগস্ট যথাক্রমে ২৫, ২৬, ২৭ ও ২৮ পাওয়া যাবে আগস্টের টিকিট।