আজ থেকে শুরু হচ্ছে শোকের মাস আগস্ট। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এ মাসের ১৫ তারিখে সপরিবারে হত্যা করে ঘাতকচক্র। এ দিনটি মানবসভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের কালিমালিপ্ত বেদনাবিধুর এক শোকের দিন। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট নরপিশাচরূপী খুনিরা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করতে ঘৃণ্য ইনডেমনিটি আইন জারি করেছিল।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে দীর্ঘ ২১ বছর বাঙালি জাতি বিচারহীনতার কলঙ্ককের বোঝা বহন করতে বাধ্য হয়। ১৯৯৬ সালে জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে এ বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিয়মতান্ত্রিক বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০১০ সালে ঘাতকদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেন শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক। বাংলার ইতিহাসের মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা। বাঙালি জাতির পিতা। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনি চেয়েছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যকে জয় করে বিশ্বসভায় একটি উন্নয়নশীল, মর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ। সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল।

১৫ আগস্ট ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এ হত্যাকাণ্ডে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, জাতির জনকের জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, দ্বিতীয় পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র শিশু শেখ রাসেল, নবপরিণীতা পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণি, স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক ও জাতির জনকের ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছোট মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ ও কর্তব্যরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিহত হন।

আগস্ট মাস বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগসহ পুরো জাতি পালন করে শোকের মাস হিসেবে। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও কেন্দ্রীয়ভাবে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। মাসব্যাপী কর্মসূচিগুলো হল- ১ আগস্ট বুধবার বিকাল ৩টায় কৃষক লীগের আয়োজনে স্বেচ্ছায় রক্তদান। ধানমণ্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হবে। ৪ আগস্ট তাঁতী লীগের শোক দিবসের আলোচনা সভা। ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিতব্য এ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিত থাকবেন। ৮ আগস্ট সুপ্রিমকোর্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আলোচনা সভা। ৯ আগস্ট বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের উদ্যোগে ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে শোক দিবসের আলোচনা সভা। ১১ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে স্বেচ্ছাসেবক লীগের উদ্যোগে শোকসভা। ১২ আগস্ট শোকসভা করবে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ। এটি অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে। ১৩ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে শোকসভা করবে শ্রমিক লীগ। ১৫ আগস্ট বুধবার পালিত হবে জাতীয় শোক দিবস। এদিন সূর্যোদয়ের ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সংগঠনের সব স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্মৃতি-বিজড়িত ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল। সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। বাদ জোহর দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল এবং সুবিধামতো সময়ে মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে। দুপুরে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে অসচ্ছল, এতিম ও দুস্থ মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণ করা হবে। বাদ আসর মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ১৬ আগস্ট আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে শোক দিবসের আলোচনা সভা। ১৭ আগস্ট ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আয়োজনে সিরিজ বোমা হামলা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা হবে। ১৮ আগস্ট যুব মহিলা লীগ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে এবং ২০ আগস্ট মহিলা লীগের আয়োজনে আলোচনা সভা হবে। ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার দিনের এ ঘটনায় আহত-নিহতদের স্মরণ করা হবে। তাদের স্মরণে এদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। ২৬ আগস্ট আওয়ামী লীগের আয়োজনে গ্রেনেড হামলা দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ২৯ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকরের দাবিতে মানববন্ধন করবে মহিলা শ্রমিক লীগ। ৩০ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে শোক দিবসের আলোচনা সভার আয়োজন করবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। ৩১ আগস্ট ছাত্রলীগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে শোকসভা।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদতবার্ষিকী, জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পালন করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সংস্থাগুলোর সবস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ সব শাখার নেতাকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে দিবসটি স্মরণ ও পালন করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here