ঢাকা ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা কার প্রয়োজন

Reporter Name

সবুজদেশ ডেক্সঃ  গত ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে এরিক সলঅয়েল নামে ডেমোক্রেটিক পার্টির এক কংগ্রেসম্যান ‘দ্য জার্নালিস্ট প্রটেক্টশন অ্যাক্ট’ নামে একটি বিল উত্থাপন করেছেন। বিলে তিনি প্রস্তাব করেছেন, কোনো সাংবাদিককে শারীরিকভাবে আক্রমণ করলে আক্রমণকারীর শাস্তি হবে অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ড। আক্রান্ত সাংবাদিক যদি গুরুতর আহত হন, তাহলে আক্রমণকারী ব্যক্তির কারাদণ্ড হবে অনধিক ছয় বছর।

শুধু নিজেদের সুরক্ষার জন্য আমেরিকার সাংবাদিকেরা এ রকম কোনো আইন প্রবর্তনের দাবি তোলেননি, যদিও দাবি তোলার পক্ষে যথেষ্ট কারণ সৃষ্টি হয়েছে। দেশটিতে গত বছর ৪৪ জন সাংবাদিক নানা রকমের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের মিছিল থেকে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়েছে। ইউএস প্রেস ফ্রিডম ট্র্যাকার নামের একটি বেসরকারি সংস্থা ২০১৭ সালে ‘কয়েক ডজন’ সাংবাদিকের আক্রান্ত হওয়ার খবর দিয়েছে। অনলাইনে সাংবাদিকদের হয়রানির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যৌন আক্রমণ ও হত্যার হুমকি।

কংগ্রেসম্যান এরিক সলঅয়েল জার্নালিস্ট প্রটেক্টশন বিল উত্থাপনের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটা বিষাক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। তিনি সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকে অ্যান্টি–আমেরিকান বলে বিষোদ্‌গার করে চলেছেন। এর ফলে দুষ্ট লোকেরা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালাতে উৎসাহিত হচ্ছে এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা যেন একটা সাধারণ বিষয়ে পরিণত হতে চলেছে। আমাদের অবশ্যই খুব জোরালোভাবে ও পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিতে হবে যে সাংবাদিকদের ওপর কোনো ধরনের সহিংসতা বরদাস্ত করা হবে না।’

কিন্তু আমেরিকান সাংবাদিকেরা নিজেদের জন্য পৃথক সুরক্ষা আইনের দাবি তোলেননি। এরিক সলঅয়েলের বিলটির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে তাঁদের কয়েকটি সংগঠন । ‘রেডিও টেলিভিশন ডিজিটাল নিউজ অ্যাসোসিয়েশন’–এর (আরটিডিএনএ) নির্বাহী পরিচালক ড্যান শেলি সমর্থনের যুক্তি দিতে গিয়ে যা বলেছেন, তা লক্ষ করার মতো। তিনি বলেছেন, ‘আমরা এই আইনের দাবি তুলিনি, কারণ এই বিলের সমালোচকেরা যেটাকে “বিশেষ সুরক্ষা” বলতে পারেন, সাংবাদিকদের সেটার প্রয়োজন নেই বলে আমরা মনে করি। আসলে আরটিডিএনএ মনে করে, কোনো ব্যক্তিকেই শারীরিকভাবে আক্রমণ করা বা হুমকি দেওয়া যায় না। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এখন আমরা যে সময়ে বাস করছি, এ রকম সময়ে এ ধরনের আইন অপরিহার্য হয়ে ওঠে।’

এরিক সলঅয়েল ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের কংগ্রেসম্যান, তাঁর উত্থাপিত বিলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির আরও ১২ জন কংগ্রেসম্যান। ‘নিউজ মিডিয়া ফর ওপেন গভর্নমেন্ট’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থার পরিচালক রিক ব্লাম সলঅয়েলের বিলটির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ফোর্বস ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘সবকিছু মিলিয়ে এটা পরিষ্কার যে আমাদের এই গণতান্ত্রিক সমাজে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকাই শুধু হুমকির মুখে পড়েনি, সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও হুমকির মুখোমুখি। এখন ঘুরে দাঁড়ানোর সময়। পুলিশের কর্মকাণ্ড, মিছিল–সমাবেশ, প্রেসিডেন্ট ও অন্যান্য জনসম্পৃক্ত বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক সহিংসতা ও হুমকি কখনোই মেনে নেওয়া চলবে না।’

দুঃখের বিষয় হলো, এরিক সলঅয়েলের উত্থাপিত বিলটি আপাতত পাস হওয়ার সম্ভাবনা কম। ডেমোক্র্যাটরা কংগ্রেস ও সিনেট উভয় কক্ষেই সংখ্যালঘু। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর দেশের সংবাদমাধ্যমকে নিজের শত্রু ভাবেন। সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে তিনি নজিরবিহীন অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছেন। তাঁর ভাষায় আমেরিকান সংবাদমাধ্যম হলো ‘আমেরিকার কালিমা’, ‘আমেরিকান জনগণের শত্রু’। যা কিছু তাঁর বিরুদ্ধে লেখা হয়, তিনি তাকেই বলেন ‘ফেক নিউজ’। এ রকম প্রেসিডেন্ট আমেরিকা এর আগে কখনো পায়নি। এখন সাংবাদিকদের জন্য সুরক্ষা আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করার মানে তো এই প্রেসিডেন্ট ও তাঁর দলবলের হাত থেকে আইনি সুরক্ষা চাওয়া। প্রেসিডেন্ট ও তাঁর দলবল কি সেটা হতে দেবেন? দুঃখের বিষয়, দিতে চাইবেন না।

অবশ্য একটা সুখের বিষয় আমরা পেতে পারি প্রতিবেশী ভারতের কাছ থেকে। গত বছর এপ্রিল মাসে মহারাষ্ট্র রাজ্যে একটি আইন পাস হয়েছে, যার শিরোনাম ‘দ্য মহারাষ্ট্র মিডিয়া পারসন্স অ্যান্ড মিডিয়া ইনস্টিটিউশনস (প্রিভেনশন অব ভায়োলেন্স অ্যান্ড ড্যামেজ অর লস অব প্রপার্টি) অ্যাক্ট’। এটাকে সংক্ষেপে সংবাদমাধ্যম সুরক্ষা আইন বলা যায়। এ আইন অনুযায়ী, মহারাষ্ট্রে কোনো সাংবাদিককে শারীরিকভাবে আক্রমণ করা, আক্রমণের চেষ্টা করা কিংবা প্ররোচিত করা, তাঁর সম্পদের ক্ষতিসাধন করা, কোনো সংবাদপ্রতিষ্ঠানের সম্পদের ক্ষতিসাধন করা দণ্ডনীয় অপরাধ। অপরাধের শাস্তি অনধিক তিন বছর কারাদণ্ড, ৫০ হাজার রুপি জরিমানা অথবা একই সঙ্গে উভয় দণ্ড। এ ছাড়া অপরাধের শিকার সাংবাদিকের চিকিৎসার ব্যয় বহন করা, তাঁর কোনো সম্পদের ক্ষতি করে থাকলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া। মামলার অভিযোগ কগনিজিবল বা আমলযোগ্য এবং আসামি জামিন লাভের অযোগ্য। শুধু উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তারাই মামলার তদন্ত করবেন।

মহারাষ্ট্রে আইনটি প্রণীত হয়েছে ভারতের সাংবাদিকদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে। দেশটির ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টস দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যে রাজ্যে সাংবাদিক ও সংবাদপ্রতিষ্ঠানের সুরক্ষার জন্য একটি আইনের দাবি জানিয়ে আসছিল। মহারাষ্ট্রে সাংবাদিকদের সংগঠনটি জেলা পর্যায়েও বেশ সক্রিয়। দাবিটা সাংবাদিকেরাই তুলেছিলেন, রাজ্য সরকার তাঁদের দাবি মেনে নিয়ে আইনটি পাস করে দেশ–বিদেশের বিভিন্ন সংগঠনের অভিনন্দন পেয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টস (আইএফজে) মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারের প্রশংসা করেছে।

অথচ আমাদের দেশে সাংবাদিকদের সঙ্গে সরকারের আচরণ লক্ষ করুন। স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সময় ৫ ও ৬ আগস্ট হেলমেটধারী দুর্বৃত্তদের আক্রমণের শিকার হলেন কমপক্ষে ১২ জন সাংবাদিকসহ প্রায় ৩০ জন মানুষ। সাংবাদিকদের কেউ কেউ গুরুতর জখম হলেন, তাঁদের ক্যামেরা ভাঙা হলো, মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হলো, একজন নারী সাংবাদিককে হেনস্তা করা হলো, কিন্তু আক্রমণকারীদের কাউকেই আইনের আওতায় আনা হলো না। প্রকাশ্য দিনের আলোয় কর্তব্যরত সাংবাদিকদের ওপর সশস্ত্র আক্রমণের ভিডিও চিত্র, স্থিরচিত্র সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। পুলিশ চাইলে প্রত্যেক আক্রমণকারীকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে পারত এবং এখনো পারে, কিন্তু সে রকম কোনো চেষ্টাই করেনি। সাংবাদিকদের প্রবল চাপের মুখে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে চিঠি লিখলেন; তিনি ‘হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলেন।

তারপর দুই মাস পেরোতে চলল, কিন্তু সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। প্রথম আলোর একজন প্রতিবেদক ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার কাছে জানতে চাইলেন, তথ্যমন্ত্রীর চিঠির পর পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না। ডিএমপি কমিশনার বললেন, ‘তথ্যমন্ত্রী চিঠি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। তাই এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই ভালো বলতে পারবেন, আমার জানা নেই।’ ওই প্রতিবেদক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, ‘আমি তো হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছিলাম। কেন পুলিশ এখনো মামলা করেনি, তা পুলিশ কমিশনারের কাছে জানতে হবে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু পুলিশ সে নির্দেশ পালন করেনি এবং কেন করেনি তা–ও মন্ত্রী মহোদয় জানেন না—এ এক অদ্ভুত পরিস্থিতি। বিষয়টা যদি সাংবাদিকদের ওপর হামলা না হতো এবং সেই হামলায় যদি সরকারপন্থী ছাত্রসংগঠনের সম্পৃক্ততা না থাকত, তাহলে কি মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশ পুলিশ কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে পালন করে ফেলত? আমরা জানি না। আমরা জানি, এ দেশে সাংবাদিক খুন হলেও আসামি গ্রেপ্তার হয় না, মামলার তদন্ত এগোয় না, বিচারের বাণী নীরবে–নিভৃতে কাঁদে বছরের পর বছর ধরে।

বাংলাদেশে সাংবাদিকদের শারীরিকভাবে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সব সময়ই আছে। বিশেষত জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সাংবাদিকদের কাজ করতে হয় নানা ঝুঁকির মধ্যে। অনেক এলাকার সাংসদ, ক্ষমতাসীন দলের নেতা, মাদক চোরাচালান চক্রসহ নানা পেশাদার অপরাধী চক্রের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে থেকে অনেক ধরনের সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশন করতে হয়।  এই ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ প্রকটতর হয়েছে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা এবং সম্প্রতি গৃহীত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ নম্বর ধারাসহ বেশ কয়েকটি ধারার কারণে। এই কালাকানুনগুলো সাংবাদিকদের মাথার ওপরে খড়্গের মতো ঝুলে রয়েছে। স্বাধীনভাবে সংবাদ পরিবেশনের প্রতি ক্ষমতাসীনদের অসহিষ্ণুতা সাম্প্রতিক কালে অনেক বেড়েছে; কোনো কোনো সম্পাদকের বিরুদ্ধে একযোগে ডজন ডজন মামলা দায়ের করার দৃষ্টান্ত বিরল নয়। বিভিন্ন পেশাজীবী গোষ্ঠীর অসহিষ্ণুতাও লক্ষ করার বিষয়। রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক যেকোনো আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীরা স্বাধীন–নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা চান না, তাঁরা চান নিজেদের পক্ষের সাংবাদিকতা। আন্দোলনকারীরা লাঠি হাতে রাস্তায় নেমেছেন—এমন দৃশ্যের ছবি তুলতে গেলে তাঁদের ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার দৃষ্টান্তও আছে। সবকিছু মিলিয়ে সাংবাদিকদের জন্য একটা ভয়ের বা অস্বস্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, যার ফল ব্যাপক সেলফ সেন্সরশিপ বা আত্মনিবৃত্তি। এ রকম পরিবেশে সাংবাদিকতার স্বতঃস্ফূর্ততা ক্ষতিগ্রস্ত হয়; ঝামেলা বা ঝুঁকি এড়ানোর চেষ্টায় সর্বক্ষণ সাবধানী মনোভাব কাজ করলে সাংবাদিকতার গুণগত মান অধোগামী হওয়া অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে।

এটা শুধু সাংবাদিকতা পেশার জন্যই ক্ষতিকর নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্যও ক্ষতিকর। কারণ, স্বাধীন সাংবাদিকতা ছাড়া রাষ্ট্র ও সমাজ গণতান্ত্রিক হতে পারে না, সরকার ভালোভাবে, সঠিক পথে চলতে পারে না, সুশাসন প্রতিষ্ঠা পেতে পারে না। স্বাধীন সাংবাদিকতার অভাবে সব গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠান ব্যাধিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কারণ, তখন তথ্য গোপন করা হয়, অনিয়ম–দুর্নীতিসহ সব রকমের ক্ষতিকর কাজ অবাধে চলতে পারে, জনগণ জানতে পারে না বলে জবাবদিহির বালাই থাকে না। পৃথিবীর যে দেশের সংবাদমাধ্যম যত স্বাধীন ও শক্তিশালী, সে দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো তত সবল। সে দেশের শাসনব্যবস্থা তত গণমুখী ও ন্যায়পরায়ণ। সরকার তত বেশি দায়িত্বশীল ও জবাবদিহিমূলক।

তাই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা শুধু সাংবাদিকদের স্বার্থের বিষয় নয়, গোটা জাতির বিষয়।

মশিউল আলম প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ও সাহিত্যিক

(শুত্র প্রোথম আলো)

About Author Information
আপডেট সময় : ১২:৪৬:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ অক্টোবর ২০১৮
১০৪৪ Time View

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা কার প্রয়োজন

আপডেট সময় : ১২:৪৬:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ অক্টোবর ২০১৮

সবুজদেশ ডেক্সঃ  গত ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে এরিক সলঅয়েল নামে ডেমোক্রেটিক পার্টির এক কংগ্রেসম্যান ‘দ্য জার্নালিস্ট প্রটেক্টশন অ্যাক্ট’ নামে একটি বিল উত্থাপন করেছেন। বিলে তিনি প্রস্তাব করেছেন, কোনো সাংবাদিককে শারীরিকভাবে আক্রমণ করলে আক্রমণকারীর শাস্তি হবে অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ড। আক্রান্ত সাংবাদিক যদি গুরুতর আহত হন, তাহলে আক্রমণকারী ব্যক্তির কারাদণ্ড হবে অনধিক ছয় বছর।

শুধু নিজেদের সুরক্ষার জন্য আমেরিকার সাংবাদিকেরা এ রকম কোনো আইন প্রবর্তনের দাবি তোলেননি, যদিও দাবি তোলার পক্ষে যথেষ্ট কারণ সৃষ্টি হয়েছে। দেশটিতে গত বছর ৪৪ জন সাংবাদিক নানা রকমের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের মিছিল থেকে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়েছে। ইউএস প্রেস ফ্রিডম ট্র্যাকার নামের একটি বেসরকারি সংস্থা ২০১৭ সালে ‘কয়েক ডজন’ সাংবাদিকের আক্রান্ত হওয়ার খবর দিয়েছে। অনলাইনে সাংবাদিকদের হয়রানির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যৌন আক্রমণ ও হত্যার হুমকি।

কংগ্রেসম্যান এরিক সলঅয়েল জার্নালিস্ট প্রটেক্টশন বিল উত্থাপনের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটা বিষাক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। তিনি সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকে অ্যান্টি–আমেরিকান বলে বিষোদ্‌গার করে চলেছেন। এর ফলে দুষ্ট লোকেরা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালাতে উৎসাহিত হচ্ছে এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা যেন একটা সাধারণ বিষয়ে পরিণত হতে চলেছে। আমাদের অবশ্যই খুব জোরালোভাবে ও পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিতে হবে যে সাংবাদিকদের ওপর কোনো ধরনের সহিংসতা বরদাস্ত করা হবে না।’

কিন্তু আমেরিকান সাংবাদিকেরা নিজেদের জন্য পৃথক সুরক্ষা আইনের দাবি তোলেননি। এরিক সলঅয়েলের বিলটির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে তাঁদের কয়েকটি সংগঠন । ‘রেডিও টেলিভিশন ডিজিটাল নিউজ অ্যাসোসিয়েশন’–এর (আরটিডিএনএ) নির্বাহী পরিচালক ড্যান শেলি সমর্থনের যুক্তি দিতে গিয়ে যা বলেছেন, তা লক্ষ করার মতো। তিনি বলেছেন, ‘আমরা এই আইনের দাবি তুলিনি, কারণ এই বিলের সমালোচকেরা যেটাকে “বিশেষ সুরক্ষা” বলতে পারেন, সাংবাদিকদের সেটার প্রয়োজন নেই বলে আমরা মনে করি। আসলে আরটিডিএনএ মনে করে, কোনো ব্যক্তিকেই শারীরিকভাবে আক্রমণ করা বা হুমকি দেওয়া যায় না। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এখন আমরা যে সময়ে বাস করছি, এ রকম সময়ে এ ধরনের আইন অপরিহার্য হয়ে ওঠে।’

এরিক সলঅয়েল ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের কংগ্রেসম্যান, তাঁর উত্থাপিত বিলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির আরও ১২ জন কংগ্রেসম্যান। ‘নিউজ মিডিয়া ফর ওপেন গভর্নমেন্ট’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থার পরিচালক রিক ব্লাম সলঅয়েলের বিলটির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ফোর্বস ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘সবকিছু মিলিয়ে এটা পরিষ্কার যে আমাদের এই গণতান্ত্রিক সমাজে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকাই শুধু হুমকির মুখে পড়েনি, সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও হুমকির মুখোমুখি। এখন ঘুরে দাঁড়ানোর সময়। পুলিশের কর্মকাণ্ড, মিছিল–সমাবেশ, প্রেসিডেন্ট ও অন্যান্য জনসম্পৃক্ত বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক সহিংসতা ও হুমকি কখনোই মেনে নেওয়া চলবে না।’

দুঃখের বিষয় হলো, এরিক সলঅয়েলের উত্থাপিত বিলটি আপাতত পাস হওয়ার সম্ভাবনা কম। ডেমোক্র্যাটরা কংগ্রেস ও সিনেট উভয় কক্ষেই সংখ্যালঘু। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর দেশের সংবাদমাধ্যমকে নিজের শত্রু ভাবেন। সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে তিনি নজিরবিহীন অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছেন। তাঁর ভাষায় আমেরিকান সংবাদমাধ্যম হলো ‘আমেরিকার কালিমা’, ‘আমেরিকান জনগণের শত্রু’। যা কিছু তাঁর বিরুদ্ধে লেখা হয়, তিনি তাকেই বলেন ‘ফেক নিউজ’। এ রকম প্রেসিডেন্ট আমেরিকা এর আগে কখনো পায়নি। এখন সাংবাদিকদের জন্য সুরক্ষা আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করার মানে তো এই প্রেসিডেন্ট ও তাঁর দলবলের হাত থেকে আইনি সুরক্ষা চাওয়া। প্রেসিডেন্ট ও তাঁর দলবল কি সেটা হতে দেবেন? দুঃখের বিষয়, দিতে চাইবেন না।

অবশ্য একটা সুখের বিষয় আমরা পেতে পারি প্রতিবেশী ভারতের কাছ থেকে। গত বছর এপ্রিল মাসে মহারাষ্ট্র রাজ্যে একটি আইন পাস হয়েছে, যার শিরোনাম ‘দ্য মহারাষ্ট্র মিডিয়া পারসন্স অ্যান্ড মিডিয়া ইনস্টিটিউশনস (প্রিভেনশন অব ভায়োলেন্স অ্যান্ড ড্যামেজ অর লস অব প্রপার্টি) অ্যাক্ট’। এটাকে সংক্ষেপে সংবাদমাধ্যম সুরক্ষা আইন বলা যায়। এ আইন অনুযায়ী, মহারাষ্ট্রে কোনো সাংবাদিককে শারীরিকভাবে আক্রমণ করা, আক্রমণের চেষ্টা করা কিংবা প্ররোচিত করা, তাঁর সম্পদের ক্ষতিসাধন করা, কোনো সংবাদপ্রতিষ্ঠানের সম্পদের ক্ষতিসাধন করা দণ্ডনীয় অপরাধ। অপরাধের শাস্তি অনধিক তিন বছর কারাদণ্ড, ৫০ হাজার রুপি জরিমানা অথবা একই সঙ্গে উভয় দণ্ড। এ ছাড়া অপরাধের শিকার সাংবাদিকের চিকিৎসার ব্যয় বহন করা, তাঁর কোনো সম্পদের ক্ষতি করে থাকলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া। মামলার অভিযোগ কগনিজিবল বা আমলযোগ্য এবং আসামি জামিন লাভের অযোগ্য। শুধু উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তারাই মামলার তদন্ত করবেন।

মহারাষ্ট্রে আইনটি প্রণীত হয়েছে ভারতের সাংবাদিকদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে। দেশটির ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টস দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যে রাজ্যে সাংবাদিক ও সংবাদপ্রতিষ্ঠানের সুরক্ষার জন্য একটি আইনের দাবি জানিয়ে আসছিল। মহারাষ্ট্রে সাংবাদিকদের সংগঠনটি জেলা পর্যায়েও বেশ সক্রিয়। দাবিটা সাংবাদিকেরাই তুলেছিলেন, রাজ্য সরকার তাঁদের দাবি মেনে নিয়ে আইনটি পাস করে দেশ–বিদেশের বিভিন্ন সংগঠনের অভিনন্দন পেয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টস (আইএফজে) মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারের প্রশংসা করেছে।

অথচ আমাদের দেশে সাংবাদিকদের সঙ্গে সরকারের আচরণ লক্ষ করুন। স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সময় ৫ ও ৬ আগস্ট হেলমেটধারী দুর্বৃত্তদের আক্রমণের শিকার হলেন কমপক্ষে ১২ জন সাংবাদিকসহ প্রায় ৩০ জন মানুষ। সাংবাদিকদের কেউ কেউ গুরুতর জখম হলেন, তাঁদের ক্যামেরা ভাঙা হলো, মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হলো, একজন নারী সাংবাদিককে হেনস্তা করা হলো, কিন্তু আক্রমণকারীদের কাউকেই আইনের আওতায় আনা হলো না। প্রকাশ্য দিনের আলোয় কর্তব্যরত সাংবাদিকদের ওপর সশস্ত্র আক্রমণের ভিডিও চিত্র, স্থিরচিত্র সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। পুলিশ চাইলে প্রত্যেক আক্রমণকারীকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে পারত এবং এখনো পারে, কিন্তু সে রকম কোনো চেষ্টাই করেনি। সাংবাদিকদের প্রবল চাপের মুখে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে চিঠি লিখলেন; তিনি ‘হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলেন।

তারপর দুই মাস পেরোতে চলল, কিন্তু সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। প্রথম আলোর একজন প্রতিবেদক ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার কাছে জানতে চাইলেন, তথ্যমন্ত্রীর চিঠির পর পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না। ডিএমপি কমিশনার বললেন, ‘তথ্যমন্ত্রী চিঠি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। তাই এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই ভালো বলতে পারবেন, আমার জানা নেই।’ ওই প্রতিবেদক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, ‘আমি তো হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছিলাম। কেন পুলিশ এখনো মামলা করেনি, তা পুলিশ কমিশনারের কাছে জানতে হবে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু পুলিশ সে নির্দেশ পালন করেনি এবং কেন করেনি তা–ও মন্ত্রী মহোদয় জানেন না—এ এক অদ্ভুত পরিস্থিতি। বিষয়টা যদি সাংবাদিকদের ওপর হামলা না হতো এবং সেই হামলায় যদি সরকারপন্থী ছাত্রসংগঠনের সম্পৃক্ততা না থাকত, তাহলে কি মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশ পুলিশ কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে পালন করে ফেলত? আমরা জানি না। আমরা জানি, এ দেশে সাংবাদিক খুন হলেও আসামি গ্রেপ্তার হয় না, মামলার তদন্ত এগোয় না, বিচারের বাণী নীরবে–নিভৃতে কাঁদে বছরের পর বছর ধরে।

বাংলাদেশে সাংবাদিকদের শারীরিকভাবে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সব সময়ই আছে। বিশেষত জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সাংবাদিকদের কাজ করতে হয় নানা ঝুঁকির মধ্যে। অনেক এলাকার সাংসদ, ক্ষমতাসীন দলের নেতা, মাদক চোরাচালান চক্রসহ নানা পেশাদার অপরাধী চক্রের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে থেকে অনেক ধরনের সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশন করতে হয়।  এই ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ প্রকটতর হয়েছে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা এবং সম্প্রতি গৃহীত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ নম্বর ধারাসহ বেশ কয়েকটি ধারার কারণে। এই কালাকানুনগুলো সাংবাদিকদের মাথার ওপরে খড়্গের মতো ঝুলে রয়েছে। স্বাধীনভাবে সংবাদ পরিবেশনের প্রতি ক্ষমতাসীনদের অসহিষ্ণুতা সাম্প্রতিক কালে অনেক বেড়েছে; কোনো কোনো সম্পাদকের বিরুদ্ধে একযোগে ডজন ডজন মামলা দায়ের করার দৃষ্টান্ত বিরল নয়। বিভিন্ন পেশাজীবী গোষ্ঠীর অসহিষ্ণুতাও লক্ষ করার বিষয়। রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক যেকোনো আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীরা স্বাধীন–নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা চান না, তাঁরা চান নিজেদের পক্ষের সাংবাদিকতা। আন্দোলনকারীরা লাঠি হাতে রাস্তায় নেমেছেন—এমন দৃশ্যের ছবি তুলতে গেলে তাঁদের ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার দৃষ্টান্তও আছে। সবকিছু মিলিয়ে সাংবাদিকদের জন্য একটা ভয়ের বা অস্বস্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, যার ফল ব্যাপক সেলফ সেন্সরশিপ বা আত্মনিবৃত্তি। এ রকম পরিবেশে সাংবাদিকতার স্বতঃস্ফূর্ততা ক্ষতিগ্রস্ত হয়; ঝামেলা বা ঝুঁকি এড়ানোর চেষ্টায় সর্বক্ষণ সাবধানী মনোভাব কাজ করলে সাংবাদিকতার গুণগত মান অধোগামী হওয়া অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে।

এটা শুধু সাংবাদিকতা পেশার জন্যই ক্ষতিকর নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্যও ক্ষতিকর। কারণ, স্বাধীন সাংবাদিকতা ছাড়া রাষ্ট্র ও সমাজ গণতান্ত্রিক হতে পারে না, সরকার ভালোভাবে, সঠিক পথে চলতে পারে না, সুশাসন প্রতিষ্ঠা পেতে পারে না। স্বাধীন সাংবাদিকতার অভাবে সব গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠান ব্যাধিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কারণ, তখন তথ্য গোপন করা হয়, অনিয়ম–দুর্নীতিসহ সব রকমের ক্ষতিকর কাজ অবাধে চলতে পারে, জনগণ জানতে পারে না বলে জবাবদিহির বালাই থাকে না। পৃথিবীর যে দেশের সংবাদমাধ্যম যত স্বাধীন ও শক্তিশালী, সে দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো তত সবল। সে দেশের শাসনব্যবস্থা তত গণমুখী ও ন্যায়পরায়ণ। সরকার তত বেশি দায়িত্বশীল ও জবাবদিহিমূলক।

তাই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা শুধু সাংবাদিকদের স্বার্থের বিষয় নয়, গোটা জাতির বিষয়।

মশিউল আলম প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ও সাহিত্যিক

(শুত্র প্রোথম আলো)