শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যেই সোমবার (৬ আগস্ট) মন্ত্রিসভা বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উঠছে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ এর খসড়া।

সোমবার সকাল ১০টায় সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের জাবালে নূর পরিবহনের বাস চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হন। পরের দিন থেকে রাজধানীর সড়কে অবস্থান করে বেপোরোয়া বাস চালকের ফাঁসি, রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালনা বন্ধসহ ৯ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। রোববারও (৫ আগস্ট) অব্যাহত ছিল শিক্ষার্থীদের সেই আন্দোলন।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থীদের অনেক দাবিই পূরণ হয়ে যাবে।

গত বছরের ২৭ মার্চ ‘সড়ক পরিবহন আইন’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। খসড়া আইনে পরিবহনখাতে বিভিন্ন অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়।

কিন্তু পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা এই খসড়া আইনের বিরোধীতা শুরু করেন। এই প্রেক্ষাপটে প্রায় দেড় বছর হয়ে গেলেও আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয়নি।

গত ১ আগস্ট সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ‘সড়ক পরিবহন আইন’ ৬ আগস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।

ওইদিনই আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, সড়ক পরিবহন আইনের ভেটিং সম্পন্ন করেছে আইন মন্ত্রণালয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এ আইনের ভেটিং সম্পর্কিত নথিতে অনুমোদন দিয়েছেন। নথিটি সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে।

আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেসব কারণে সড়ক দুর্ঘটনা হতে পারে, সেগুলোর ব্যাপারে আইনে পর্যাপ্ত বিধান রাখা হয়েছে কি না, কিংবা দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সে রকম পর্যাপ্ত বিধান আইনের মধ্যে আছে কি না এবং আইনে কোনো ফাঁক-ফোঁকর আছে কি-না এসব পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে দেখে সড়ক পরিবহন আইনটি প্রস্তুত করা হয়েছে।

অপরদিকে রোববার বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সড়ক পরিবহন আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত এবং নিহত পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে প্রস্তাবিত আইনে ‘সড়ক নিরাপত্তা তহবিল’ গঠনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করারও দাবি জানিয়েছে তারা।

খসড়া আইনে যা আছে-

খসড়া আইনানুযায়ী গাড়ি চালানোর সময় কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। করলে সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রয়েছে।

খসড়া আইন অনুযায়ী, সড়কের ফুটপাতের উপর দিয়ে কোনো ধরণের মোটরযান চালাচল করতে পারবে না। করলে তিন মাসের কারাদণ্ড বা ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা গুণতে হবে।

আগে গাড়ি চালকদের লেখাপড়ার বিষয়ে কিছু না থাকলেও নতুন আইন অনুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে। কন্ডাক্টর বা চালকের সহযোগীকে কমপক্ষে লেখার ও পড়ার সক্ষমতাসহ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া থাকতে হবে।

যদি কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালায় তবে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কেউ এই অপরাধ করলে তাকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করা যাবে। এক্ষেত্রে বর্তমানে ৩ মাসের কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা রয়েছে।

চালকের সহকারীর লাইসেন্স লাগবে। কন্ডাক্টারের লাইসেন্স না থাকলে এক মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা হবে।

জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করলে আগে শাস্তি ছিল সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা। প্রস্তাবিত আইনে মূল শাস্তি কারাদণ্ড আগের মতোই আছে, জরিমানা ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে।

ফিটনেস না থাকা মটরযান চালালে বর্তমানে শাস্তি রয়েছে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা। সেখানে এখন শাস্তি সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ শাস্তি পাবে মূলত গাড়ির মালিক।

দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দণ্ডবিধিতে যে শাস্তি রয়েছে সেই শাস্তি প্রযোজ্য হবে। দুর্ঘটনার মাধ্যমে যদি ইচ্ছাকৃতভাবে নরহত্যা হয়, তবে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা হবে। এটার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। হত্যা না হলে ৩০৪ ধারা প্রযোজ্য হবে। এক্ষেত্রে শাস্তি যাবজ্জীবন। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা হলে ৩০৪ (বি) ধারা অনুযায়ী ৩ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

গাড়ি ওজন সীমা অতিক্রম করলে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ৩ লাখ টাকা জরিমানা। এখানে মালিক ও ড্রাইভার দুই গ্রুপকেই যুক্ত করা হয়েছে, তারা উভয়ে দায়ী হবে।

বেপরোয়া গাড়ি চালানো, দুই গাড়িতে পাল্লা দেয়ার কারণে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা হবে। বেপরোয়া গাড়ি চালানো এবং এতে দুর্ঘটনা না ঘটলেও ২ বছরের কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে।

চালকের ভুলের কারণে পয়েন্ট কাটার ব্যবস্থা নতুন সড়ক পরিবহন আইনেও রাখা হয়েছে। এজন্য ১২ পয়েন্ট রাখা হয়েছে। কোনো ড্রাইভার অপরাধ করলে তার পয়েন্ট কাটা যাবে। যদি কারো ১২ পয়েন্টই কাটা যায় তা হলে তিনি আর কোনোদিনও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবেন না। কত পয়েন্ট কাটলে কী পরিমাণ শাস্তি হবে আইনে তা বলা আছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here