সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করতে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়া হচ্ছে বীজ
বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ
বাগেরহাটের ফকিরহাটে করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে কৃষকদের সব্জি চাষে উদ্বুদ্ধ করতে ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। করোনা আতঙ্কে অলস সময় কাটানো কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিনামুল্যে তাদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার সব্জি বীজ। স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে উপজেলার এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে সামাজিক দুরত্ত বজায় রেখে কৃষকদের হাতে এই বীজ তুলে দিচ্ছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাছরুল মিল্লাত।
বিনামূল্যে এই সব্জি বীজ পেয়ে কুষকরা খুশি হচ্ছে। তাদের ঘরের আঙ্গিনায় সঠিক দুরত্ত বাজায় রেখে মাস্ক ব্যবহার করে এই বীজ বপন করছে। এতে একদিকে যেমন পতিত জমির ব্যবহার নিশ্চিত হবে, অপরদিকে করনো পরপর্তি সময়ে সব্জির ঘাটটি দুর হবে। দেশের অন্যান্য এলাকায় এই উদ্যেগ নিয়ে বিষমুক্ত সব্জির চাহিদা পুরণ করা সম্ভব বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
ফকিরহাট উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানাগেছে, অন্যান্য পেশার মানুষের মত কৃষকদের মাঝেও করোনাভাইরাস আতঙ্ক দেখা দেয়। ফলে কৃষকরা মাঠে না গিয়ে অলস সময় কাটানো শুরু করে। এই সময় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের গ্রæপ ম্যাসেজিংসহ নানা উপায়ে উর্ধতন কর্মকর্তারা বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা প্রদান অব্যহত রাখা হয়। ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাছরুল মিল্লাত নিজের উদ্যোগে চাষিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়ার পাশাপশি কৃষকরা যাতে অলস সময় পার না করে সেজন্য তাদের কৃষি কাজে উদ্বুদ্ধ করতে বিনামুল্যে লাল শাক, পুইশাক, মিস্টিকুমড়া, লাউ, ঢেড়স ও শশার বীজ বিতরণ করেন। উপজেলা কৃষি অফিসের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে তিনি এই বীজ বিতরণ করা হয়।
লখপুর এলাকার কৃষক শুকুর আলী জানান, বোরো ধানের ফলন ভাল হলেও করোনা ভাইরাস সংক্রমনের ভয়ে তিনি মাঠে যাওয়া বন্ধ করে ছিলেন। পরে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাড়িতে গিয়ে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে মাস্ক ব্যবহার করে জমিতে কাজ করতে বলেন। এরপর তিনি জমিতে গিয়ে ধানের পরিচর্যা করছেন। একই সাথে বিনামূল্যে এই সময়ে সব্জি বীজ পেয়ে তিনি বাড়ির আঙ্গিনাসহ বিভিন্ন স্থানে সেই বীজ লাগিয়েছেন।
একই এলাকার শ্রীকান্ত বিশ্বাস বলেন, করোনার ভয়ে বাড়িতে অলস সময় কাটছিল তার। পরে কৃষি কর্মকর্তারা বাড়িতে গিয়ে কয়েক প্রকারের সব্জি বীজ দেয়ার পরে তিনি সেগুলো রোপন করেছেন। বাড়ির পাশের পতিত জমিতে যে ফসল হবে তা তার পরিবারের চাহিদা পিটিয়ে স্থানীয় বাজারেও বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করেন।
অর্গানিক বেতাগার কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি ঘরে থেকে বেকার সময় কাটছিল তার। এসময় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তার বাড়িতে এসে বিনামূল্যে কয়েক প্রকারের বীজ দিয়ে তা বাড়ির ভিতর পতিত জমিতে লাগাতে বলেন। প্রথন এই করোনা ভিতর ঝামেলা মনে হলেও পরে ওই কর্মকর্তার সম্মানে বীজগুলো লাগাতে বাধ্য হই। ইতিমধ্যে লালশাকে কয়েক পাতা বেরিয়েছে। অন্য চারাও কিছু বড় হয়েছে। এখন এই সব্জির পরিচর্যা করেই সময় কাটছে। খুব ভাল লাগছে।
একই এলাকার কুষানী রীতা রানী দাস জানান, তার ঢেড়স ও মিষ্টি কুমড়া গাছ অনেক ভাল হয়েছে। ঘরের পাশে এমন সব্জি হবে আগে কখনও চিন্তা করেন নি তিনি।
স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব দাস জানান, প্রথম বিষয়টি ভাল লাগেনি। তবুও স্যারের নির্দেশ পালন করতে হয়েছে। এখন কৃষকরা যখন এসে বললে বিনামূল্যে পাওয়া সব্জি বীজ নিয়ে তারা খুশি তখন অনেক ভাল লাগছে।
ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাছরুল মিল্লাত বলেন, কৃষি ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস আতঙ্কে কোন প্রভাব না পড়ে সে জন্য চাষিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। পাশাপশি কৃষকরা যাতে অলস সময় পার না করে সেজন্য তাদের কৃষি কাজে উদ্বুদ্ধ করতে বিনামুল্যে লাল শাক, পুইশাক, মিস্টিকুমড়া, লাউ, ঢেড়স ও শশার বীজ বিতরণ করা হচ্ছে। এতে একদিকে করোনা পরবর্তি সব্জির অভাব মিটবে। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের বাস্তবায় এক ইঞ্চি জমিও ফাঁকা থাকবে না তার বাস্তবায়ন, কৃষকদের ঘরের পাশের পতিত জমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হবে।