সবুজদেশ ডেক্সঃ গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আগামী নির্বাচনে সবাই  দলীয় মনোনয়ন পাবেন না। এ নিয়ে লাফালাফি না করার জন্য বলেন তিনি। এ ছাড়া পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন হয়ে যাওয়া নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্টদের তিরস্কার করেন। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে নাম পরিবর্তনসহ আরও কিছু পরিবর্তন এনে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড আইন-২০১৮-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে আইনের খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠকে চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পরিবহনের জন্য একটি চুক্তির খসড়া অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।

বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় পদ্মা নদীর ভাঙনের শিকার শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলা বিলীন হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এত বড় ঘটনার পরও কোনো মন্ত্রী, এমপি এমনকি সংশ্লিষ্ট অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নড়িয়া না যাওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি নদী ভাঙনের শিকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেন। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিকসহ সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

বৈঠকে আগামী নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রী-এমপিদের উদ্দেশ্যে বলেন, বেশি লাফালাফি করবেন না। আগামী নির্বাচনে আপনারা সবাই নমিনেশন পাবেন না কি? সবাই নমিনেশন পাবেন না। তাই এমপি হওয়া নিয়ে লাফালাফি করবেন না। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, মন্ত্রিসভা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড আইনে ছোট ছোট কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে এর নাম ছিল টেক্সট বুক। এখন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। প্রস্তাবিত আইনে একজন চেয়ারম্যান ও আটজন সদস্য নিয়ে বোর্ড গঠন করার কথা বলা হয়েছে। আগে এই বোর্ডের সদস্য সংখ্যা ছিল চেয়ারম্যানসহ পাঁচজন। আগে কোরাম হতো তিনজন সদস্যের উপস্থিতে। এখন কোরাম হবে বোর্ডের পাঁচজন সদস্যের উপস্থিতিতে। আগে বোর্ড সদস্যদের কাজ সুনির্দিষ্ট ছিল না। প্রস্তাবিত আইনে চেয়ারম্যান ছাড়া বাকি আট সদস্যের কাজ সুস্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য তাদের মাতৃভাষায় পুস্তক প্রণয়নের কথাও বলা হয়েছে আইনে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সুদীর্ঘ করার উদ্দেশ্যে ‘এগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফর্ম ইন্ডিয়া বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড ইন্ডিয়া’ চুক্তির খসড়া মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। এখানে প্রভিশন রাখা হয়েছে নেপাল ও ভুটান ইচ্ছা প্রকাশ করলে যুক্ত হতে পারবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহন করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের যান ব্যবহার হবে। এটি ট্রানজিট ঠিক না। কারণ আমাদের পরিবহন ব্যবহার করতে হচ্ছে। আমাদের আইন অনুযায়ী শুল্ক ও ট্যাক্স তাদের দিতে হবে।

প্রস্তাবিত চুক্তি অনুযায়ী মালবাহী কার্গো শনাক্ত করতে ‘ট্র্যাকিং সিস্টেম’ ব্যবহার করা হবে। চুক্তির বিভিন্ন শর্তাবলির বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পণ্য সামগ্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে শুধু বাংলাদেশের ভেহিকল ব্যবহার করা হবে। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়মাবলি (গ্যাট) এবং দেশের নিয়ম মেনে চলতে হবে, শুল্ক বিভাগ ডিউটিজ অ্যান্ড ট্যাক্সেস সমপরিমাণ বন্ড গ্রহণ করবে। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মালামাল পরিবহনের জন্য গ্যাট প্রিন্সিপাল অনুসারে শুল্ক/কর ব্যতীত চার্জ-ফি ও পরিবহন খরচ আদায় করা হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের স্থল বন্দর ব্যবহার করায় স্থল বন্দরের দক্ষতা বাড়াতে মাশুল আদায় করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। প্রস্তাবিত চুক্তিতে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর, মোংলা বন্দর থেকে আগরতলা ভায়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে ডাউকি ভায়া সিলেটের তামাবিল, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে সুতারকান্দি ভায়া সিলেটের শেওলা এবং চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে বিবিরবাজার ভায়া কুমিল্লার শ্রীমন্তপুর স্থল বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহন করা হবে। তিনি জানান, চুক্তিটি পাঁচ বছরের জন্য হবে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে আরও পাঁচ বছর বলবৎ থাকবে। তবে ছয় মাসের নোটিসে যে কোনো পক্ষ চুক্তিটি বাতিল করতে পারবে। জরুরি প্রয়োজনে বা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে যে কোনো পক্ষ চুক্তির বাস্তবায়ন সাময়িকভাবে স্থগিত করতে পারবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here