বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন যে পথে এগোচ্ছেন, সে পথ একদলীয় শাসনব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করার পথ। এখানে জনগণের রায় দেওয়ার কোনো পথ দেখা যাচ্ছে না। জনগণের রায় নেওয়ার কোনো ইচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর নেই। তিনি বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন করার ইচ্ছা বর্তমান সরকারের নেই।

আজ সোমবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতকালের সংবাদ সম্মেলন বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। আজ দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে ‘ইয়ুথ ফোরাম’ নামের একটি সংগঠনের আয়োজনে বাংলাদেশ ইয়ুথ পার্লামেন্ট ২০১৮ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন করার ইচ্ছা বর্তমান সরকারের নেই। সামনে নির্বাচন অথচ আজ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় শুরু করেছে সরকার। এমন গ্রেপ্তার আর ধরপাকড়ের মাধ্যমে সরকার একটি নির্বাচন করতে চাইছে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দেশে গণতন্ত্র আছে, এটি কোন গণতন্ত্র? যেখানে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার নির্যাতন করা হবে, আর সরকারি দল নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাবে? এভাবে তো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।’

ফখরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য গোটা জাতিকে হতাশ করেছে। কারণ দেশের এই ক্রান্তিকালে, বিশেষ করে যখন সামনে নির্বাচন, সেই সময় জনগণের যে অধিকারগুলো নিয়ে প্রশ্ন, সেই অধিকারগুলো আর নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলেছেন, তাতে গোটা জাতি হতাশ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দেশে এখন যে সংকট চলছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সংকট হলো অবাধ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। সমগ্র জাতির দাবি, সমগ্র দেশের মানুষের দাবিকে নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সংবিধান বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সবকিছু হবে। সংবিধান তো মানুষের তৈরি। ইতিপূর্বে যে সংবিধান ছিল, সেটিও সরকারের তৈরি। সেটিকে সরকার অনেকবার পরিবর্তন করে নিজেদের দলের সুবিধামতো করে নিয়েছে। তিনি বলেন, আজ জাতি আশা করেছিল, জনগণের, দেশের এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী একটি ইতিবাচক কথা বলবেন। সব দলের সমান সুযোগ সৃষ্টি করে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু সেটি তিনি করতে পারেননি। এটির সম্পূর্ণ ব্যর্থতা সরকারের, এর দায় দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।

বিএনপির সঙ্গে কোনো সংলাপ নয়, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এর আগে ২০১২-১৩ সালেও সরকার সংলাপের দাবি উপেক্ষা করেছিল, পরে বাধ্য হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন, জনগণের রায় প্রদান, এসব তো বিএনপির দাবি নয়, জনগণের দাবি। জনগণের ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে লড়াই করে যাচ্ছে বিএনপি। বিএনপি সংসদে জনগণের প্রতিনিধিত্ব চায়, সেটি জনগণেরই দাবি।

নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে তাড়াহুড়া না করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে ফখরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি আগেই বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কথার সঙ্গে কী সম্পর্ক?

সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে ‘ইয়ুথ ফোরাম’ আয়োজিত বাংলাদেশ ইয়ুথ পার্লামেন্ট ২০১৮ অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, এ দেশ সেই দেশ, যেখানে হুমায়ুন আহমদের মতো লেখকের বই আদালতের মাধ্যমে বাতিল করা হয়, শহিদুল আলমের মতো লোককে কারাগারে থাকতে হয়, যিনি সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন তাঁকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। নিজের যৌক্তিক দাবি আদায় করতে গিয়ে রিমান্ডে নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আজ যাঁরা যুবক আছেন, তাঁরা আগামী প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখাবেন। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আগামীর বাংলাদেশ হবে সত্যিকারের একটি সুখী সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। যুবকদের দায়িত্ব নিতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here