ঢাকা ০৮:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সব দোষ চালকদের?

Reporter Name

বাংলাদেশে সারা বছরে মোট যত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, তার প্রায় ২০ শতাংশই ঘটে আমাদের প্রিয় রাজধানী ঢাকা মহানগরে। বিশেষজ্ঞরা বহুদিন ধরে বলে আসছেন, ঢাকার ভেতরের সড়কগুলো অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ঢাকা মহানগরে ১৭৪টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে, মারা গেছে ১৬৭ জন মানুষ। প্রতি মাসে গড়ে ২৪ জন করে মারা যাচ্ছে। প্রতিবছর মারা যাচ্ছে গড়ে প্রায় ৩০০ জন। অনেক মানুষ আহত হচ্ছে, কিন্তু তাদের কথা খুব একটা আলোচিত হয় না। গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দুটি বাসের চালকদের মধ্যে যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতার ফলে যে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, তাতে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুজন শিক্ষার্থী নিহত হয়, আহত হয় ৯ জন। আমরা শুধু দুই নিহত শিক্ষার্থীর নাম জানি, তাদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিরাট আন্দোলন শুরু হয়েছে। কিন্তু ওই দুর্ঘটনায় যে ৯ জন আহত হয়েছে, তাদের খবর আমরা রাখি না। তাদের সম্পর্কে আমাদের মনে কোনো কৌতূহলও হয়তো নেই।

আসলে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রচুর মানুষ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান। মৃত্যুর মতো চূড়ান্ত দুঃখজনক না হলেও আহত ব্যক্তিদের অনেকের জীবন ভীষণভাবেই পর্যুদস্ত হয়। তাঁদের মধ্যে যাঁরা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, তাঁদের ওপর নির্ভরশীল স্বজনদের জীবনে নেমে আসে গুরুতর আর্থিক সংকট। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবার হয়তো কখনো কখনো ক্ষতিপূরণ পায়, যেমন নিহত রাজীব ও দিয়া খানমের পরিবার ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ আহত ব্যক্তির পরিবার কোনো ক্ষতিপূরণ পায় না।

যা হোক, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ পাওয়া বা না-পাওয়া এই লেখার আলোচ্য বিষয় নয়। আলোচ্য বিষয় সড়ক দুর্ঘটনার কারণ। এ বিষয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে; সম্ভবত নতুন কোনো কথাই আর নেই। তবু বারবার সড়ক দুর্ঘটনার কারণ নিয়েই কথা ওঠে। রাজীব ও দিয়া খানমের মৃত্যুর পর যে কারণটা সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে, তা হলো বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানো। দেশ-বিদেশের গবেষণায় বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধানতম কারণ হিসেবে উল্লেখিত হচ্ছে রেকলেস ড্রাইভিং বা বেপরোয়াভাবে যান চালানোর কথা। এটা নিয়ে কোথাও কোনো দ্বিমত দেখতে পাইনি।

কিন্তু বেপরোয়া যান চালানোর কারণ কী?

এই প্রশ্নের উত্তর একটা নয়। ঢাকার বাইরের সড়ক-মহাসড়কে যাঁরা দূরপাল্লার বাস-ট্রাক চালান, তাঁদের কারণ আর ঢাকা মহানগরের ভেতরের সড়কগুলোতে যাঁরা বাস ও মিনিবাস চালান তাঁদের কারণ এক নয়। ঢাকার ভেতরের প্রধান কারণ হলো চালকদের মধ্যে বেশি যাত্রী তোলার প্রাণপণ প্রতিযোগিতা। রাজীব ও দিয়া খানমের মৃত্যু এবং আরও ৯ জনের আহত হওয়ার ঘটনা এই প্রতিযোগিতার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত।

কিন্তু এমন প্রাণঘাতী প্রতিযোগিতার কারণ কী? চালকেরা কি জানেন না যে এমন প্রতিযোগিতা অত্যন্ত বিপজ্জনক? শুধু তাঁদের বাসের যাত্রী এবং সড়কের অন্যান্য যানবাহন ও পথচারীদের জন্যই নয়, চালকদের নিজেদের জন্যও অত্যন্ত বিপজ্জনক। চালকেরা এটা জানেন। দুর্ঘটনায় চালকের নিজেরও মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে; বিশেষ করে এই ঢাকা শহরে। সরাসরি দুর্ঘটনায় মারা না গেলেও গণপিটুনিতে মারা যাওয়ার কিংবা অন্তত গুরুতরভাবে জখম হওয়ার ঝুঁকি থাকে। একাধিক বাসের চালক ও সহকারী আমাকে তাঁদের এই ভয়ের কথা বলেছেন। ‘একসিডেন কইরা মানুষ মারলে পাবলিকের মাইর একটাও মাটিতে পড়ব না’—অনেক বাসচালকের মুখে এমন উক্তি আমি শুনেছি। আমি জিজ্ঞাসা করেছি, ‘সব জেনেশুনেও কেন আপনারা পাল্লাপাল্লি করেন?’ এই প্রশ্নের উত্তরে বাসচালকদের মুখে নানা রকমের কথা শুনেছি। অধিকাংশ চালকই স্বীকার করেন না যে তাঁরা বেপরোয়াভাবে পরস্পরকে পাল্লা দিয়ে আগে যেতে চান। তবে অনেকেই স্বীকার করেছেন, তাঁরা বেশি যাত্রী ওঠানোর চেষ্টা করেন। কারণটা পরিষ্কার: যত বেশি যাত্রী, তত বেশি আয়। বেশি আয়ের চেষ্টা তাঁদের করতেই হয়, কারণ তাঁদের আয় খুবই কম।

গাবতলী থেকে সায়েদাবাদ যাত্রী পরিবহন করেন এমন এক বাসের চালক আমাকে বলেছেন, তিনি কাজ শুরু করেন ভোর পাঁচটায়, কাজ শেষ করে খাওয়াদাওয়া সেরে ঘুমোতে যেতে যেতে বেজে যায় রাত দুইটা। মাত্র তিন ঘণ্টা ঘুমিয়ে একজন মানুষ জীবিকার জন্য ছোটেন—দিনের পর দিন। এটাই তাঁর জীবন। এই জীবন তাঁকে কী দেয়? কোনো দিন ৮০০ টাকা, কোনো দিন ৯০০। ভাগ্য খারাপ হলে, শহরে গন্ডগোল বাধলে, কিংবা ট্রাফিক পুলিশের কোনো সদস্য বাস থামালে নির্ঘাত এক শ-দেড় শ টাকা জরিমানা দিতে হয়।

ঢাকায় অধিকাংশ বাস ও মিনিবাস চলাচল করে ট্রিপভিত্তিক মুনাফা ভাগাভাগির হিসাবে। বাসের মালিকেরা চালক ও সহকারীদের বেতন দেন না, প্রতি ট্রিপের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা নেন। মালিককে সেই ‘জমা’র টাকা পরিশোধ করার পর অবশিষ্ট যা থাকে, তা চালক ও তাঁর সহকারীরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। এই হিসাবে তাঁদের দৈনিক আয় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। আয় বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই তাঁরা বেশি যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতায় পরস্পরকে পাল্লা দিয়ে বাস চালান। তাঁরা জানেন, এটা শুধু ঝুঁকিপূর্ণ নয়, বেআইনিও বটে। তবু তাঁদের অনেকেই ঝুঁকি নেন।

আয় কম বলে চালকদের যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতা সমর্থনযোগ্য নয়। এই প্রাণঘাতী প্রতিযোগিতা অবশ্যই বন্ধ করা দরকার। কিন্তু কীভাবে তা করা সম্ভব? এ বিষয়ে অনেক পরামর্শ আছে। যেমন: ট্রিপভিত্তিক যাত্রী পরিবহন বন্ধ করতে হবে, বাসের চালকদের নিয়মিত বেতনে নিয়োগ দিতে হবে, নির্ধারিত শ্রমঘণ্টাসহ শ্রম আইনের সব বিধান তাঁদের চাকরির ক্ষেত্রে অবশ্যমান্য করতে হবে।

যেহেতু নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান আন্দোলনের সূচনা ঘটেছে একান্তভাবেই চালকের দোষকে কেন্দ্র করে, সেহেতু বোধগম্য কারণে চালকেরাই তোপের মুখে পড়েছেন। সড়ক থেকে নিরাপদ দূরত্বে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকা রাজীব-দিয়ার মর্মান্তিক মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে পাবলিক সেন্টিমেন্ট এ রকম হওয়াই স্বাভাবিক। উপরন্তু বিআরটিএর তদন্তে বলা হয়েছে, বেপরোয়া চালকের কারণেই ওই দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘটেছে।

কিন্তু শুধু চালকদের কারণেই কি সব সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে? চালকদের শাস্তি বাড়ালেই কি সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ হবে?

About Author Information
আপডেট সময় : ১২:৪৮:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অগাস্ট ২০১৮
৫৩৬ Time View

সব দোষ চালকদের?

আপডেট সময় : ১২:৪৮:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অগাস্ট ২০১৮

বাংলাদেশে সারা বছরে মোট যত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, তার প্রায় ২০ শতাংশই ঘটে আমাদের প্রিয় রাজধানী ঢাকা মহানগরে। বিশেষজ্ঞরা বহুদিন ধরে বলে আসছেন, ঢাকার ভেতরের সড়কগুলো অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ঢাকা মহানগরে ১৭৪টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে, মারা গেছে ১৬৭ জন মানুষ। প্রতি মাসে গড়ে ২৪ জন করে মারা যাচ্ছে। প্রতিবছর মারা যাচ্ছে গড়ে প্রায় ৩০০ জন। অনেক মানুষ আহত হচ্ছে, কিন্তু তাদের কথা খুব একটা আলোচিত হয় না। গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দুটি বাসের চালকদের মধ্যে যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতার ফলে যে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, তাতে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুজন শিক্ষার্থী নিহত হয়, আহত হয় ৯ জন। আমরা শুধু দুই নিহত শিক্ষার্থীর নাম জানি, তাদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিরাট আন্দোলন শুরু হয়েছে। কিন্তু ওই দুর্ঘটনায় যে ৯ জন আহত হয়েছে, তাদের খবর আমরা রাখি না। তাদের সম্পর্কে আমাদের মনে কোনো কৌতূহলও হয়তো নেই।

আসলে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রচুর মানুষ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান। মৃত্যুর মতো চূড়ান্ত দুঃখজনক না হলেও আহত ব্যক্তিদের অনেকের জীবন ভীষণভাবেই পর্যুদস্ত হয়। তাঁদের মধ্যে যাঁরা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, তাঁদের ওপর নির্ভরশীল স্বজনদের জীবনে নেমে আসে গুরুতর আর্থিক সংকট। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবার হয়তো কখনো কখনো ক্ষতিপূরণ পায়, যেমন নিহত রাজীব ও দিয়া খানমের পরিবার ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ আহত ব্যক্তির পরিবার কোনো ক্ষতিপূরণ পায় না।

যা হোক, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ পাওয়া বা না-পাওয়া এই লেখার আলোচ্য বিষয় নয়। আলোচ্য বিষয় সড়ক দুর্ঘটনার কারণ। এ বিষয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে; সম্ভবত নতুন কোনো কথাই আর নেই। তবু বারবার সড়ক দুর্ঘটনার কারণ নিয়েই কথা ওঠে। রাজীব ও দিয়া খানমের মৃত্যুর পর যে কারণটা সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে, তা হলো বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানো। দেশ-বিদেশের গবেষণায় বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধানতম কারণ হিসেবে উল্লেখিত হচ্ছে রেকলেস ড্রাইভিং বা বেপরোয়াভাবে যান চালানোর কথা। এটা নিয়ে কোথাও কোনো দ্বিমত দেখতে পাইনি।

কিন্তু বেপরোয়া যান চালানোর কারণ কী?

এই প্রশ্নের উত্তর একটা নয়। ঢাকার বাইরের সড়ক-মহাসড়কে যাঁরা দূরপাল্লার বাস-ট্রাক চালান, তাঁদের কারণ আর ঢাকা মহানগরের ভেতরের সড়কগুলোতে যাঁরা বাস ও মিনিবাস চালান তাঁদের কারণ এক নয়। ঢাকার ভেতরের প্রধান কারণ হলো চালকদের মধ্যে বেশি যাত্রী তোলার প্রাণপণ প্রতিযোগিতা। রাজীব ও দিয়া খানমের মৃত্যু এবং আরও ৯ জনের আহত হওয়ার ঘটনা এই প্রতিযোগিতার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত।

কিন্তু এমন প্রাণঘাতী প্রতিযোগিতার কারণ কী? চালকেরা কি জানেন না যে এমন প্রতিযোগিতা অত্যন্ত বিপজ্জনক? শুধু তাঁদের বাসের যাত্রী এবং সড়কের অন্যান্য যানবাহন ও পথচারীদের জন্যই নয়, চালকদের নিজেদের জন্যও অত্যন্ত বিপজ্জনক। চালকেরা এটা জানেন। দুর্ঘটনায় চালকের নিজেরও মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে; বিশেষ করে এই ঢাকা শহরে। সরাসরি দুর্ঘটনায় মারা না গেলেও গণপিটুনিতে মারা যাওয়ার কিংবা অন্তত গুরুতরভাবে জখম হওয়ার ঝুঁকি থাকে। একাধিক বাসের চালক ও সহকারী আমাকে তাঁদের এই ভয়ের কথা বলেছেন। ‘একসিডেন কইরা মানুষ মারলে পাবলিকের মাইর একটাও মাটিতে পড়ব না’—অনেক বাসচালকের মুখে এমন উক্তি আমি শুনেছি। আমি জিজ্ঞাসা করেছি, ‘সব জেনেশুনেও কেন আপনারা পাল্লাপাল্লি করেন?’ এই প্রশ্নের উত্তরে বাসচালকদের মুখে নানা রকমের কথা শুনেছি। অধিকাংশ চালকই স্বীকার করেন না যে তাঁরা বেপরোয়াভাবে পরস্পরকে পাল্লা দিয়ে আগে যেতে চান। তবে অনেকেই স্বীকার করেছেন, তাঁরা বেশি যাত্রী ওঠানোর চেষ্টা করেন। কারণটা পরিষ্কার: যত বেশি যাত্রী, তত বেশি আয়। বেশি আয়ের চেষ্টা তাঁদের করতেই হয়, কারণ তাঁদের আয় খুবই কম।

গাবতলী থেকে সায়েদাবাদ যাত্রী পরিবহন করেন এমন এক বাসের চালক আমাকে বলেছেন, তিনি কাজ শুরু করেন ভোর পাঁচটায়, কাজ শেষ করে খাওয়াদাওয়া সেরে ঘুমোতে যেতে যেতে বেজে যায় রাত দুইটা। মাত্র তিন ঘণ্টা ঘুমিয়ে একজন মানুষ জীবিকার জন্য ছোটেন—দিনের পর দিন। এটাই তাঁর জীবন। এই জীবন তাঁকে কী দেয়? কোনো দিন ৮০০ টাকা, কোনো দিন ৯০০। ভাগ্য খারাপ হলে, শহরে গন্ডগোল বাধলে, কিংবা ট্রাফিক পুলিশের কোনো সদস্য বাস থামালে নির্ঘাত এক শ-দেড় শ টাকা জরিমানা দিতে হয়।

ঢাকায় অধিকাংশ বাস ও মিনিবাস চলাচল করে ট্রিপভিত্তিক মুনাফা ভাগাভাগির হিসাবে। বাসের মালিকেরা চালক ও সহকারীদের বেতন দেন না, প্রতি ট্রিপের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা নেন। মালিককে সেই ‘জমা’র টাকা পরিশোধ করার পর অবশিষ্ট যা থাকে, তা চালক ও তাঁর সহকারীরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। এই হিসাবে তাঁদের দৈনিক আয় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। আয় বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই তাঁরা বেশি যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতায় পরস্পরকে পাল্লা দিয়ে বাস চালান। তাঁরা জানেন, এটা শুধু ঝুঁকিপূর্ণ নয়, বেআইনিও বটে। তবু তাঁদের অনেকেই ঝুঁকি নেন।

আয় কম বলে চালকদের যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতা সমর্থনযোগ্য নয়। এই প্রাণঘাতী প্রতিযোগিতা অবশ্যই বন্ধ করা দরকার। কিন্তু কীভাবে তা করা সম্ভব? এ বিষয়ে অনেক পরামর্শ আছে। যেমন: ট্রিপভিত্তিক যাত্রী পরিবহন বন্ধ করতে হবে, বাসের চালকদের নিয়মিত বেতনে নিয়োগ দিতে হবে, নির্ধারিত শ্রমঘণ্টাসহ শ্রম আইনের সব বিধান তাঁদের চাকরির ক্ষেত্রে অবশ্যমান্য করতে হবে।

যেহেতু নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান আন্দোলনের সূচনা ঘটেছে একান্তভাবেই চালকের দোষকে কেন্দ্র করে, সেহেতু বোধগম্য কারণে চালকেরাই তোপের মুখে পড়েছেন। সড়ক থেকে নিরাপদ দূরত্বে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকা রাজীব-দিয়ার মর্মান্তিক মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে পাবলিক সেন্টিমেন্ট এ রকম হওয়াই স্বাভাবিক। উপরন্তু বিআরটিএর তদন্তে বলা হয়েছে, বেপরোয়া চালকের কারণেই ওই দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘটেছে।

কিন্তু শুধু চালকদের কারণেই কি সব সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে? চালকদের শাস্তি বাড়ালেই কি সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ হবে?