ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জায়গায় নির্মিত ২০টি দোকান ভাড়ার টাকা এখনো পরিশোধ করেনি কালীগঞ্জ ক্রীড়া ফেডারেশন। ২০২৩ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত ২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা এখনো স্কুলকে দেয়নি কালীগঞ্জ ক্রীড়া ফেডারেশন।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৮ আগস্ট বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত “স্কুলের দোকান ভাড়ার টাকা যায় এমপির অ্যাকাউন্টে” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর তখনকার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অজিৎ ভট্টাচার্য ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জামির হোসেন নিউজ প্রকাশের ৩ দিন পর প্রধান শিক্ষকের কাছে ৪ লক্ষ টাকার একটি চেক হস্তান্তর করেন। এরপর কালীগঞ্জ ক্রীড়া ফেডারেশনের সভাপতি প্রয়াত সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার ২০২৪ সালের মে মাসে ভারতে গিয়ে খুন হন। এরপর আর বাকি টাকা স্কুলে দেওয়ার ব্যবস্থা নেয়নি তখনকার কালীগঞ্জ ক্রীড়া ফেডারেশনের কমিটি।
বিগত সরকারের সময় কালীগঞ্জ ক্রীড়া ফেডারেশনের নামে ৯৯ বছরের দোকান ভাড়ার চুক্তি করে সরকারি স্কুলের দোকান ভাড়ার টাকা ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে নেওয়া হয়। এ ছাড়াও সরকারি প্রতিষ্ঠানের জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে দলীয় কার্যালয়। সেই সময় ক্রীড়া ফেডারেশনের নামে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, জাতীয়করণের আগে স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের তখনকার সংসদ-সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। ২০১৫ সালে ম্যানেজিং কমিটির সভায় দোকান ভাড়া কালীগঞ্জ ক্রীড়া ফেডারেশনের অধীনে জমা নেওয়া হবে বলে রেজুলেশন করা হয়। এরপর থেকে সরকারি স্কুলের জায়গায় স্থাপিত ২০টি দোকানের ভাড়া ক্রীড়া ফেডারেশনের নামে উঠানো হয়েছে। কালীগঞ্জ ক্রীড়া ফেডারেশনের সভাপতিও ছিলেন এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার। প্রতি মাসে দোকান প্রতি ৪০০ টাকা করে স্কুলকে দেওয়ার কথা থাকলেও আগস্ট পর্যন্ত ১ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল। গত ২০২৩ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকা স্কুলকে প্রদানের কথা ছিল। কিন্তু দিয়েছে ৫ লক্ষ টাকা। বাকি টাকা এখনো পরিশোধ করা হয়নি। স্কুলকে দোকান প্রতি ৪০০ টাকা দিয়ে ছোট-বড় এসব দোকানের ভাড়া ২ হাজার থেকে শুরু করে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করতো কালীগঞ্জ ক্রীড়া ফেডারেশন।
একাধিক দোকান মালিক জানান, দোকানগুলো স্কুলের অধীনে থাকা অবস্থায় খুবই কম ভাড়া ছিল। কিন্তু ক্রীড়া ফেডারেশনের অধীনে যাওয়ার পর থেকে দোকান ভাড়া অধিক করা হয়। সেই সময়ে দোকানগুলো অজিৎ ভট্টাচার্য ও এমপির একান্ত সহকারী আব্দুর রউফ দেখাশোনা করতেন।
তবে সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের মৃত্যুর পর মুখ থুবড়ে পড়ে কালীগঞ্জ ক্রীড়া ফেডারেশন। এরপর ৫ আগস্টে সরকার পতনের পর কোন কার্যক্রমই নেই ফেডারেশনের। বিগত সময়ে লাখ লাখ টাকা এই ফেডারেশনের নামে আত্মসাৎ হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিভিন্ন খেলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা। বিগত সরকারের সময়ে কালীগঞ্জ ক্রীড়া ফেডারেশনের কমিটিতে যাদের রাখা হতো, তারা সবাই সাবেক এমপি আনারের আস্থাভাজন ব্যক্তি। এমপির আস্থাভাজন নাহলে কালীগঞ্জ ক্রীড়া ফেডারেশনের কমিটিতে স্থান হতো না।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ ক্রীড়া ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জামির হোসেন বলেন, নিউজ প্রকাশের পর তিনি ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অজিৎ ভট্টাচার্য্য স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে ৪ লক্ষ টাকার একটি চেক হস্তান্তর করি। বাকি টাকা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো অজিৎ ভট্টাচার্য্য বলতে পারবেন। এগুলো তারা দেখাশোনা করতেন।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন তোতা বলেন, ২০২৩ সালের আগস্ট মাসের শেষের দিকে ৪ লক্ষ টাকার একটি চেক স্কুলে জমা দেন জামির হোসেন ও অজিৎ ভট্টাচার্য। এখনো অনেক টাকা বাকি আছে। কালীগঞ্জ ক্রীড়া ফেডারেশন স্কুলের দোকান ভাড়ার টাকা এখনো পরিশোধ করেনি। সরকারি স্কুলের দোকান ভাড়ার টাকা পরিশোধ না করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
সবুজদেশ/এসএএস
																			
										
																বিশেষ প্রতিনিধি:								 














