ঢাকা ০২:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাংবাদিক নির্যাতনকারী আরডিসি নাজিমের অঢেল সম্পদ, উৎস নিয়ে প্রশ্ন

Reporter Name

যশোর প্রতিনিধিঃ

সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে নির্যাতনকারি আরডিসি নাজিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে স্ত্রী ও শ্বশুরের নামে কোটি টাকার জমি কেনাসহ আলিশান বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকায় মানুষের কাছে যেন আতঙ্কের অপর নাম আরডিসি নাজিম উদ্দীন। স্ত্রী সাবরিনা সুলতানার নামে যশোরের মণিরামপুর পৌরশহরে ৮ শতক জমির উপর ৫-তলা বিশিষ্ট বিশাল অট্রালিকা নির্মাণাধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে যার চার তলার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাড়ির নির্মাণশৈলী দেখলে আলিশান বাড়ি নির্মাণের অর্থের উৎস কোথায় সে প্রশ্ন জাগে সবার মনে?

(১৬ মার্চ) সোমবার বিকালে সরেজমিন কাশিপুর গ্রামে গেলে নাম না প্রকাশে স্থানীয়রা জানান, নাজিম উদ্দীনের মনিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের মৃত নিছার আলীর ছেলে। পিতার বৈবাহিক সূত্র ধরে উপজেলার কাশিপুর গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে ঘর জামাই থাকতেন নিছার আলী। দরিদ্র পরিবারের সন্তান নাজিম উদ্দীন মেধাবী হওয়ায় লেখাপড়ায় স্থানীয়রা সহযোগিতা করেছেন। তার বাবা দিনমজুর বাবা জামায়াতের সমর্থক ছিলেন। প্রথমে নিছার আলী টালি ভাটার শ্রমিকের কাজ করতেন। কিন্তু নানার পরিবার আওয়ামী লীগ সমর্থক হওয়ায় নাজিম উদ্দীনের উপরের উঠার সিঁড়ি পেতে অসুবিধা হয়নি। নাজিম উদ্দীন মণিরামপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে মনিরামপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজে লেখাপড়া করেছেন।

একই কলেজের ছাত্রলীগের তৎকালিন আহবায়ক সন্দীপ ঘোষ জানান, নাজিম উদ্দীন ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সক্রিয় ছিলো। নাজিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার, বাগেরহাট ও মাগুরার মহাম্মদপুরে সহকারি কমিশনার (ভূমি) থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের অভিযোগসহ এক বৃদ্ধকে টেনে হিঁচড়ে মারতে মারতে নেয়ার ভিডিও ইতোমধ্যে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অ্যাসিল্যান্ড থাকাকালিন তিনি ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করে বিপুল অংকের অর্থ কামান বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মনিরামপুর পৌর এলাকার ৯৩ নম্বর গাংড়া মৌজার ৫৯৬ দাগের (আরএস চূড়ান্ত) ২৫ শতক জমির মধ্যে ১৪.৬৯ শতাংশ জমি ৪৬ লাখ টাকায় কিনেন। যা গাংড়া গ্রামের আকবর আলীর কাছ থেকে ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই তার শ্বশুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক (অব.) আব্দুর রাজ্জাকের নামে রেজিস্ট্রি করা হয়। কিন্তু জমির সেলামি তোলা হয় ৩০ লাখ টাকা।

জমির দত্তা ( সাবেক মালিক) আকবর আলী জানান, স্থানীয় মোসলেম উদ্দীনের মধ্যস্থায় ৪৬ লাখ টাকায় তিনি ওই জমি বিক্রি করেন। যা আব্দুর রাজ্জাকের জামাই ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম উদ্দীন কিনেছেন। কিন্তু দলিল করা হয় নাজিম উদ্দীনের শ্বশুর আব্দুর রাজ্জাকের নামে। মনিরামপুর ৯৪ নম্বর মৌজায় ৮৩ খতিয়ানের ১৩২ দাগের ( আর,এস চূড়ান্ত) ৩২.২৫ শতকের মধ্যে ৮ শতক জমি ১৩ লাখ কেনা হয়। যা উপজেলার কাজির গ্রাম মো. মোকলেছুর রহমানের কাছ থেকে ৬ শতক এবং তার স্ত্রী মোছা. নাজমুন নাহার রুপার কাছ থেকে ২ শতক সর্বমোট ৮ শতক জমি নাজিম উদ্দীনের স্ত্রী সাবরিনা সুলতানার নামে ২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রি করা হয়।

মজার ব্যাপার হচ্ছে রেজিস্ট্রিকৃত জমি নাজিম উদ্দীনের স্ত্রী সাবরিনা সুলতানার নামে হলেও সেখানে স্বামীর নাম  না দিয়ে বাবা (নাজিম উদ্দীনের শ্বশুর) আব্দুর রাজ্জাকের নাম দেয়া হয়েছে। এই জমির উপর নির্মাণ করা হচ্ছে পাঁচতলা বিশিষ্ট বিশাল অট্টালিকা। ইতোমধ্যে যার চারতলা সম্পন্ন হয়েছে। ভবন নির্মাণে কর্মরত শ্রমিক লিটন হোসেন জানান, গত এক বছর ধরে বিশাল অট্টালিকা নির্মাণের কাজ করছে। ভবন নির্মাণে জনৈক শহিদুল ইসলাম শহিদ নামের এক ব্যক্তি কন্ট্রাক নিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে লিটন জানায়, ভবন মাস্টারের জামাই (আব্দুর রাজ্জাক) নাজিম উদ্দীন নির্মাণ করছেন। আতিয়ার রহমান নামের প্রধান রাজমিস্ত্রী জানান, এ পর্যন্ত আনুমানিক দেড় কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে নাজিম উদ্দীন দাবি করেছেন, তার শ্বশুর পেনশনের টাকা দিয়ে গাংড়া মৌজায় জমি কিনেছেন। আর শ্বশুরের কিনে দেয়া স্ত্রীর সাবরিনা সুলতানার নামে ৮ শতক জমির উপর ভবনটি প্রবাসি শ্যালিকা নির্মাণ করছেন। আসলে তার কিছুই নেই।

নাজিম উদ্দিনের কথা সত্যতা মেলেনি মনিরামপুর উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের তথ্যে। ওই অফিস সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ১ মার্চ অবসরে যান নাজিম উদ্দীনের শ্বশুর আব্দুর রাজ্জাক। অবসরের ৪ দিন পর পেনশনের ৮ লাখ ১৭ হাজার ৬শ’ টাকা উত্তোলন করেন তিনি। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে পেনশনের এই টাকা দিয়ে আট বছর পর কিভাবে তিনি ৪৬ লাখ টাকায় জমি কিনলেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হলে টাকার উৎস্য সম্পর্কে সত্য উদঘাটন হবে বলে অনেকে মনে করেন।

About Author Information
আপডেট সময় : ১১:০৩:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ মার্চ ২০২০
৬৭৪ Time View

সাংবাদিক নির্যাতনকারী আরডিসি নাজিমের অঢেল সম্পদ, উৎস নিয়ে প্রশ্ন

আপডেট সময় : ১১:০৩:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ মার্চ ২০২০

যশোর প্রতিনিধিঃ

সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে নির্যাতনকারি আরডিসি নাজিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে স্ত্রী ও শ্বশুরের নামে কোটি টাকার জমি কেনাসহ আলিশান বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকায় মানুষের কাছে যেন আতঙ্কের অপর নাম আরডিসি নাজিম উদ্দীন। স্ত্রী সাবরিনা সুলতানার নামে যশোরের মণিরামপুর পৌরশহরে ৮ শতক জমির উপর ৫-তলা বিশিষ্ট বিশাল অট্রালিকা নির্মাণাধীন রয়েছে। ইতোমধ্যে যার চার তলার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাড়ির নির্মাণশৈলী দেখলে আলিশান বাড়ি নির্মাণের অর্থের উৎস কোথায় সে প্রশ্ন জাগে সবার মনে?

(১৬ মার্চ) সোমবার বিকালে সরেজমিন কাশিপুর গ্রামে গেলে নাম না প্রকাশে স্থানীয়রা জানান, নাজিম উদ্দীনের মনিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের মৃত নিছার আলীর ছেলে। পিতার বৈবাহিক সূত্র ধরে উপজেলার কাশিপুর গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে ঘর জামাই থাকতেন নিছার আলী। দরিদ্র পরিবারের সন্তান নাজিম উদ্দীন মেধাবী হওয়ায় লেখাপড়ায় স্থানীয়রা সহযোগিতা করেছেন। তার বাবা দিনমজুর বাবা জামায়াতের সমর্থক ছিলেন। প্রথমে নিছার আলী টালি ভাটার শ্রমিকের কাজ করতেন। কিন্তু নানার পরিবার আওয়ামী লীগ সমর্থক হওয়ায় নাজিম উদ্দীনের উপরের উঠার সিঁড়ি পেতে অসুবিধা হয়নি। নাজিম উদ্দীন মণিরামপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে মনিরামপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজে লেখাপড়া করেছেন।

একই কলেজের ছাত্রলীগের তৎকালিন আহবায়ক সন্দীপ ঘোষ জানান, নাজিম উদ্দীন ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সক্রিয় ছিলো। নাজিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার, বাগেরহাট ও মাগুরার মহাম্মদপুরে সহকারি কমিশনার (ভূমি) থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের অভিযোগসহ এক বৃদ্ধকে টেনে হিঁচড়ে মারতে মারতে নেয়ার ভিডিও ইতোমধ্যে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অ্যাসিল্যান্ড থাকাকালিন তিনি ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করে বিপুল অংকের অর্থ কামান বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মনিরামপুর পৌর এলাকার ৯৩ নম্বর গাংড়া মৌজার ৫৯৬ দাগের (আরএস চূড়ান্ত) ২৫ শতক জমির মধ্যে ১৪.৬৯ শতাংশ জমি ৪৬ লাখ টাকায় কিনেন। যা গাংড়া গ্রামের আকবর আলীর কাছ থেকে ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই তার শ্বশুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক (অব.) আব্দুর রাজ্জাকের নামে রেজিস্ট্রি করা হয়। কিন্তু জমির সেলামি তোলা হয় ৩০ লাখ টাকা।

জমির দত্তা ( সাবেক মালিক) আকবর আলী জানান, স্থানীয় মোসলেম উদ্দীনের মধ্যস্থায় ৪৬ লাখ টাকায় তিনি ওই জমি বিক্রি করেন। যা আব্দুর রাজ্জাকের জামাই ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম উদ্দীন কিনেছেন। কিন্তু দলিল করা হয় নাজিম উদ্দীনের শ্বশুর আব্দুর রাজ্জাকের নামে। মনিরামপুর ৯৪ নম্বর মৌজায় ৮৩ খতিয়ানের ১৩২ দাগের ( আর,এস চূড়ান্ত) ৩২.২৫ শতকের মধ্যে ৮ শতক জমি ১৩ লাখ কেনা হয়। যা উপজেলার কাজির গ্রাম মো. মোকলেছুর রহমানের কাছ থেকে ৬ শতক এবং তার স্ত্রী মোছা. নাজমুন নাহার রুপার কাছ থেকে ২ শতক সর্বমোট ৮ শতক জমি নাজিম উদ্দীনের স্ত্রী সাবরিনা সুলতানার নামে ২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রি করা হয়।

মজার ব্যাপার হচ্ছে রেজিস্ট্রিকৃত জমি নাজিম উদ্দীনের স্ত্রী সাবরিনা সুলতানার নামে হলেও সেখানে স্বামীর নাম  না দিয়ে বাবা (নাজিম উদ্দীনের শ্বশুর) আব্দুর রাজ্জাকের নাম দেয়া হয়েছে। এই জমির উপর নির্মাণ করা হচ্ছে পাঁচতলা বিশিষ্ট বিশাল অট্টালিকা। ইতোমধ্যে যার চারতলা সম্পন্ন হয়েছে। ভবন নির্মাণে কর্মরত শ্রমিক লিটন হোসেন জানান, গত এক বছর ধরে বিশাল অট্টালিকা নির্মাণের কাজ করছে। ভবন নির্মাণে জনৈক শহিদুল ইসলাম শহিদ নামের এক ব্যক্তি কন্ট্রাক নিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে লিটন জানায়, ভবন মাস্টারের জামাই (আব্দুর রাজ্জাক) নাজিম উদ্দীন নির্মাণ করছেন। আতিয়ার রহমান নামের প্রধান রাজমিস্ত্রী জানান, এ পর্যন্ত আনুমানিক দেড় কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে নাজিম উদ্দীন দাবি করেছেন, তার শ্বশুর পেনশনের টাকা দিয়ে গাংড়া মৌজায় জমি কিনেছেন। আর শ্বশুরের কিনে দেয়া স্ত্রীর সাবরিনা সুলতানার নামে ৮ শতক জমির উপর ভবনটি প্রবাসি শ্যালিকা নির্মাণ করছেন। আসলে তার কিছুই নেই।

নাজিম উদ্দিনের কথা সত্যতা মেলেনি মনিরামপুর উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের তথ্যে। ওই অফিস সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ১ মার্চ অবসরে যান নাজিম উদ্দীনের শ্বশুর আব্দুর রাজ্জাক। অবসরের ৪ দিন পর পেনশনের ৮ লাখ ১৭ হাজার ৬শ’ টাকা উত্তোলন করেন তিনি। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে পেনশনের এই টাকা দিয়ে আট বছর পর কিভাবে তিনি ৪৬ লাখ টাকায় জমি কিনলেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হলে টাকার উৎস্য সম্পর্কে সত্য উদঘাটন হবে বলে অনেকে মনে করেন।