সবুজদেশ ডেক্সঃ নির্বাচন সামনে রেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ‘নাশকতা’ ঠেকাতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। কেনা হচ্ছে এ-সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি। আলোচনা চালাচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে।

ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এই উদ্যোগ ডিজিটাল মিডিয়াকে সচল ও সজীব রাখার জন্য, আবর্জনামুক্ত রাখার জন্য। ডিজিটাল অপরাধ দমন ও প্রতিরোধই একমাত্র লক্ষ্য।’

বিটিআরসির তথ্যমতে, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত দেশে নয় কোটিরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছেন। সক্রিয় ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩ কোটি ১০ লাখ। বিপুলসংখ্যক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে মিথ্যা, আপত্তিকর ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের মাধ্যমে বিভ্রান্ত করার জন্য একটি চক্র সক্রিয় বলে সরকারের একাধিক সংস্থার কাছে তথ্য রয়েছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহারের আশঙ্কা সরকারের নীতিনির্ধারকদের মাথায় রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কেউ যাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বিতর্কিত-ঘৃণাসূচক বক্তব্য প্রচার ও কদর্য ভিডিওবার্তার মাধ্যমে উসকানি দিতে না পারে, সেদিকে নজর থাকবে। সে কারণে ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ভিডিও শেয়ারিং পোর্টাল ইউটিউব, মাইক্রোব্লগ সাইট টুইটারসহ বিভিন্ন ধরনের ব্লগ ও ওয়েবসাইট মনিটরিং করা হবে।

জানা গেছে, এরই মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা–সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি কেনার কাজটি এগিয়ে গেছে। ‘সাইবার থ্রেট ডিটেকশন অ্যান্ড রেসপন্স’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অধীনে এ কাজ হচ্ছে। গত বছরের মার্চে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পে অনুমোদন দেওয়া হয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সব ওয়েবসাইট, সাইবার হুমকিসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো চিহ্নিতকরণ, নিয়ন্ত্রণ এবং সাইবার সন্ত্রাস থেকে জনগণকে সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি দেশের সামাজিক মূল্যবোধ অক্ষুণ্ন রেখে ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘এখনো আমরা অনেকেই ডিজিটাল নিরাপত্তার দিকটা উপলব্ধি করতে পারছি না। এখন এমন একটি পরিবার পাওয়া যাবে না, যেখানে কেউ ছোট বা বড় ডিজিটাল অপরাধের শিকার হয়নি। এ অবস্থায় আমরা অসহায়ের মতো বসে থাকতে পারি না। পুলিশ বা অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো যেভাবে অপরাধ ও অপরাধীদের মনিটর করে, আমরা সেভাবে ডিজিটাল অপরাধ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নিচ্ছি। এটাকে অন্যভাবে চিন্তা করার সুযোগ নেই।’

সূত্র জানিয়েছে, আগামী বছরের জুনের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য থাকলেও জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখেই দ্রুত কাজটি শুরু করতে চাইছে সরকার। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নজরদারির যন্ত্রপাতি চলে আসবে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই যন্ত্রপাতি বসিয়ে কয়েকটি বড় আইজিডব্লিউর সঙ্গে যুক্ত করে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হবে। এরই মধ্যে আইজিডব্লিউ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন টেলিযোগাযোগমন্ত্রী। সব প্রস্তুতি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে পুরো সিস্টেম বিটিআরসির কাছে হস্তান্তর করা হবে। সম্প্রতি সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুসারে একটি সংস্থা গঠন করে বিষয়টির নজরদারির কথা রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কারা এটা পরিচালনা করবে, তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিষয়টি এতটাই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে যে, শুধু একটি সিস্টেমের ওপর তারা নির্ভর করছে না। ইতিমধ্যেই সরকারের একটি সংস্থা আপত্তিকর কনটেন্ট চিহ্নিত করে ঠেকানোর কাজ করছে। এর বাইরে নীতিনির্ধারকেরা কথা বলছেন ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে।

এদিকে, ফেসবুকের মাধ্যমে গুজব ছড়ানোসহ অপরাধপ্রবণ কনটেন্ট রোধে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। গত মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডিজিটাল অপরাধ প্রতিরোধ, দমন, নিয়ন্ত্রণ, মনিটরিং এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণবিষয়ক এক কর্মশালায় ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবগুলো দেন তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

ফেসবুকে অপরাধ করে যেন প্রকৃত পরিচয় গোপন করতে না পারে, সে জন্য ফেসবুক আইডিতে মোবাইল নম্বর যুক্ত করা ও এনআইডি যাচাইয়ের মাধ্যমে আইডি খুলতে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গুজব ও অপরাধপ্রবণ কনটেন্টগুলো শনাক্ত করে তাৎক্ষণিক তা প্রত্যাহারে ফেসবুকের কার্যকর ভূমিকা রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

মোস্তাফা জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ফেসবুক, ইউটিউবসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে বোঝানোর চেষ্টা করছি, কীভাবে এগুলো ব্যবহার করে অপরাধ হচ্ছে। তাদের অনুরোধ করছি আপত্তিকর জিনিসগুলো সরাতে। কিন্তু যখন রাষ্ট্র ও জনগণ হুমকির মধ্যে পড়বে, তখন আমরা অসহায় আত্মসমর্পণ করতে পারব না। আমার হাতে তো কিছু থাকতে হবে। সে ব্যবস্থাই আমরা নিচ্ছি।’

মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ফেসবুকের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক অনেক নিবিড় হয়েছে। আইসিটি বিভাগ, বিটিআরসিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে ফোকাল পয়েন্ট নির্বাচন করে দেওয়া হয়েছে। তারা ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া পাচ্ছে।

এ ছাড়া সম্প্রতি তথ্য মন্ত্রণালয়ও গুজববিরোধী একটা উদ্যোগ নিয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গুজব শনাক্তকরণ এবং নিরসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অক্টোবর থেকে নজরদারি কার্যক্রম শুরু করা হবে। এর কাজ হবে সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব চিহ্নিত করে সব সরকারি-বেসরকারি টিভি চ্যানেল, রেডিও এবং সংবাদমাধ্যমে তিন ঘণ্টার মধ্যে লিখিতভাবে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পিআইডি থেকে প্রেসনোট পাঠানো।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here