আন্দোলন, না নির্বাচন। আন্দোলন হলে কবে থেকে কীভাবে আর নির্বাচন হলে কোন প্রক্রিয়ায়—এসব বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্তহীন বিএনপি। দলের দুই প্রধান নেতার অনুপস্থিতিতে এ বিষয়ে বিএনপির অবস্থান কী হওয়া উচিত, সে বিষয়ে মাঠপর্যায়ের নেতাদের মত জানার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারকেরা।

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহে জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে স্থায়ী কমিটির মতবিনিময়ের পর নীতিনির্ধারকেরা এখন দলের আরও বড় পরিসরে মতামত নেওয়ার চিন্তা করছেন। এ লক্ষ্যে শিগগির ৫০১ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভা আহ্বান করা হবে। ঈদুল আজহার পরপর এ সভা হতে পারে।

গত সপ্তাহে ঢাকার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত বৈঠকে জেলা পর্যায়ের নেতারা আন্দোলন ও নির্বাচনের বিষয়ে যেসব প্রস্তাব বা মত দিয়েছেন, তার সঙ্গে নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মতামত সমন্বয় করে দলীয় অবস্থান ঠিক করা হবে বলে জানা গেছে।

৩ ও ৪ আগস্ট দলের ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার ৫ জন করে প্রায় পৌনে চার শ নেতার সঙ্গে মতবিনিময় করে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। দুই দিনে চার অধিবেশনে অনুষ্ঠিত রুদ্ধদ্বার এই সভায় মাঠপর্যায়ের ১৬০ জন নেতা বক্তব্য দেন। এই মতবিনিময় সভা এবং সেখান থেকে আসা মতামতকে নীতিনির্ধারকেরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

দলটির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ওই সভায় জেলার নেতাদের কাছ থেকে আন্দোলন ও নির্বাচন প্রশ্নে মোটাদাগে চারটি বিষয়ে মতামত আসে। এক. খালেদা জিয়াকে আশু কারামুক্ত করতে হলে কঠোর আন্দোলনের বিকল্প নেই। দুই. খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা ছাড়া সংসদ নির্বাচন নয়। তিন. টেলিভিশনের ক্যামেরা ও ফেসবুক-নির্ভর আন্দোলন এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দায়িত্বশীল নেতাদের কারও কারও ডুব মেরে থাকা বা বিদেশে পাড়ি জমানোর বিষয়ে সতর্ক থাকা। চার. একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে ডান-বাম সব পক্ষকে একত্র করে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা। এ জন্য দ্রুত উদ্যোগ নিতে নীতিনির্ধারকদের তাগিদ দেন তৃণমূলের নেতারা।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘চেয়ারপারসনের মুক্তি ও আন্দোলনের ব্যাপারে জেলার নেতাদের কাছ থেকে অনেক মতামত এসেছে। সেগুলোর সারসংক্ষেপ তৈরি করা হয়েছে। এগুলো নিয়ে কয়েক দিনের মধ্যে আমরা (স্থায়ী কমিটি) বৈঠকে বসব।’

বিএনপির সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন আবার কীভাবে, কবে শুরু করা যায়, সে বিষয়ে জেলার নেতারা নানা প্রস্তাব দেন। বেশির ভাগ নেতা জাতীয় নির্বাচনের আগে একটি স্বল্পকালীন আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলেন। এই আন্দোলনের ধরন ও কৌশল ঠিক করার বিষয়ে প্রয়োজনে ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদেরও মত নেওয়ার প্রস্তাব আসে। ওই মতবিনিময় সভাটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে আরও বৃহত্তর পরিসরে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জেলার নেতাদের সঙ্গে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, ঈদের পর নির্বাহী কমিটির একটি সভা করার।’

দলীয় সূত্র জানায়, দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া কারাগারে। দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমান বিদেশে। এ অবস্থায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যে কর্মকৌশল বা সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক না কেন, তা দলের সকল পর্যায়ের নেতাদের মতামত নিয়েই করতে চান বর্তমান নীতিনির্ধারকেরা।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলন না নির্বাচন-এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব বিএনপির স্থায়ী কমিটির। মনে হচ্ছে স্থায়ী কমিটি যেসব মতামত পাচ্ছে, সেগুলো নিয়ে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে পরামর্শের পর একটা সিদ্ধান্তে আসবে-যা অক্টোবরে দেখা যেতে পারে। তাঁর মতে, খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচন নয় বলে যে মতামত আসছে, সেটা হয়তো সরকারের ওপর একটা চাপের ব্যাপার। আশা করি বিএনপি নির্বাচনে যাবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here