সিনহার দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখছে দুদক: আইনমন্ত্রী
সবুজদেশ ডেক্সঃ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) খতিয়ে দেখছে। দুদক তাঁর বিরুদ্ধে যখন মামলা করবে, তখনই মামলা হবে। সরকার এখানে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। তিনি বলেন, এস কে সিনহা যা বলছেন, তার সবই মিথ্যা। পদত্যাগের এক বছর পর এস কে সিনহা এখন নতুন গল্প ফেঁদেছেন।
আজ রোববার বিকেলে নারায়ণগঞ্জে জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটির অভিষেক ও ডিজিটাল বার ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন।
এস কে সিনহার পদত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘তিনি পদত্যাগ করেছেন তার কারণ হচ্ছে, আপিল বিভাগের তাঁর সহযোগী বিচারকেরা তাঁর সঙ্গে বসতে, আদালত চালাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। কেন অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন? অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন এই কারণে যে তিনি দুর্নীতিবাজ। বিচারপতিরা যখন বারবার বলেছেন, আমরা আপনার সঙ্গে একসঙ্গে বসব না, তখন তিনি উপায় না দেখে পদত্যাগ করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘আজকে পদত্যাগের প্রায় এক বছরে তিনি এসে নতুন গল্প সৃষ্টি করেছেন। এটা আমি আগেও বলেছি, এখনো বলছি, এটা হচ্ছে একজন পরাজিত ব্যক্তির হা–হুতাশ।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আরেকটি কথা হয়তো আসতে পারে, কেন দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা এখন পর্যন্ত হয়নি। আমরা কিন্তু সব সময় বলে আসছি, আইন সকলের ঊর্ধ্বে এবং তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন সেটা খতিয়ে দেখছে। তারা যখন তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করবে, তখনই মামলা হবে। সেখানে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।’ তিনি বলেন, ‘এস কে সিনহা আজ যা বলছেন তা সর্বৈব মিথ্যা।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর মাসে নির্ধারিত সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে। কিছু কিছু লোক বলছেন নির্বাচন হবে না। আমি বলেতে চাই, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে অংশ নেবে।’ বিএনপিকে এই নির্বাচনের অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণ যাকে ভোট দেবে, সেই ক্ষমতায় আসবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিজস্ব টাকায় পদ্মা সেতু নির্মিত হচ্ছে। দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা পেছন দিকে হাঁটতে শিখিনি। যাঁরা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে নির্বাচন করতে হবে, তাঁদের বলব, আমরা পেছন দিকে আর হাঁটব না। আমরা হাঁটলে সামনের দিকে হাঁটব, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘যাঁরা আজকে সংবিধানপরিপন্থী ব্যবস্থা করার জন্য পাঁয়তারা করছেন, তাঁদের শুধু একটা কথাই বলতে চাই, আপনারা যখন এত কথাই বলেন, অংশগ্রহণ করেন ডিসেম্বরের নির্বাচনে। মানুষ যদি আপনাদের গ্রহণ করে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আর মানুষ যদি আমাদের গ্রহণ করে তবে আপনারা কোনো আপত্তি করতে পারবেন না। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করব। সেই সুষ্ঠু নির্বাচনে ইনশা আল্লাহ আমরা জয়ী হব। নির্বাচনের দায়িত্বে থাকবে নির্বাচন কমিশন। সংবিধান অনুযায়ী তারা নির্বাচন পরিচালনা করবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের সিজিএম কোর্ট ও জেলা দায়রা জজ দুই জায়গায় হলে বিচারকাজ পরিচালনা করতে গিয়ে আইনজীবীদের সমস্যায় পড়তে হবে। এই সমস্যা সমাধানের কথা দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা সিজিএম কোর্ট নির্মাণের জন্য তাদের জায়গাটি আমাদের ছেড়ে দেবে। আর পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড সিজিএম কোটের জন্য যে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে তারা সেই ভবনটি নিয়ে নেবে।’ তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই এই কাজ সম্পন্ন করা হবে। এ সময় মন্ত্রী আইন মন্ত্রণালয় থেকে নারায়ণগঞ্জ ডিজিটাল বার ভবন নির্মাণ করার জন্য এক কোটি টাকা অনুদান প্রদানের ঘোষণা দেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সাংসদ এ কে এম সেলিম ওসমান, এ কে এম শামীম ওসমান, গোলাম দস্তগীর গাজী, নজরুল ইসলাম বাবু, সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ হোসনে আরা বাবলী, আইন, বিচার সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক, নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া, পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান প্রমুখ। তবে বার ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠান বর্তমান কমিটির ১৭ জনের মধ্যে দুজন সহসভাপতিসহ ১১ জন অনুষ্ঠান বর্জন করেছে। তাঁরা বিএনপিপন্থী ও গণতান্ত্রিক আইনজীবী পরিষদের নেতা।