সাতক্ষীরাঃ

পশ্চিম সুন্দরবনের আওতাধীন সাতক্ষীরা রেঞ্চের গহীনে কাঁকড়া আহরণের সময় বাঘের আক্রমণে দুইজন মৎস্যজীবী নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) বিকালে ভারত সীমান্তবর্তী কাচিকাটা-সীমখালী খালে কাকড়া আহরণের সময় বাঘের আক্রমণের শিকার হন তারা। তবে তাদের এখনো কোন সন্ধান মেলেনি। অপরদিকে মোবাইলের মাধ্যমে এই সংবাদ দেওয়া অপর ব্যক্তিও নিখোঁজ রয়েছেন।

বাঘে ধরে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সীমান্তবর্তী কৈখালী ইউনিয়নের পশ্চিম কৈখালী গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে মোঃ রতন (৪২) ও একই গ্রামের মনো মিস্ত্রীর ছেলে মোঃ মিজানুর রহমান (৪০)। নিখোঁজ ব্যক্তি হলেন একই এলাকার আব্দুস সাত্তারের ছেলে মোঃ আবু মুসা (৪১)।

আবু মুসার ভাইপো আল আমিন তার চাচার উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, তারা তিনজন ভারতের সীমখালী খালে কাকড়া আহরণের সময় একটি বাঘ রতন ও মিজানুর রহমানকে আক্রমণ করে। এসময় চাচা আবু মুসা বনের ভিতরে পালিয়ে রক্ষা পায়। চাচার (আবু মুসা) শ্বশুর বাড়ি ভারতে। চাচা প্রথমে শ্বশুর বাড়িতে খবর দেয়। পরে শ্বশুর বাড়ি থেকে তাদের খবর দেওয়া হয়েছে।

কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম জানান, সুন্দরবনের মধ্যে খালে কাকড়া ধরার একটি নৌকায় রতন, মিজানুর রহমান ও আবু মুসা সুন্দরবনে যায়। তারা তিনজন একত্রে ছিলেন। সন্ধ্যার পর আবু মুসা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানায়, রতন ও মিজানুরকে কাচিকাটা এলাকা থেকে বাঘে ধরে নিয়ে গেছে। আমি চেষ্টা করেও উদ্ধার করতে পারিনি। তাদের খুঁজে পাচ্ছি না। এরপর থেকে তার ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তারও সন্ধান মিলছে না। ঘটনাটি আমি রাত ৯টার দিকে কৈখালী ফরেস্ট স্টেশন ও বিজিবিকে অবহিত করেছি উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, আমরা খবর পাওয়ার সাথে সাথে ট্রলার নিয়ে প্রস্তুত রয়েছি। তাদের সন্ধান পেলেই একত্রে উদ্ধারের কাজে নামবো।

কৈখালী ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা মোবারক হোসেন বলেন, কৈখালী এলাকায় একপাশে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সুন্দরবন অপরপাশে ভারতীয় সুন্দরবন এলাকা। ওই তিনজন পাশ না নিয়েই সুন্দরবনে প্রবেশ করে ভারতীয় অংশে গিয়ে কাঁকড়া ধরার সময় বাঘের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। সেখান থেকে একজন সংবাদ দিয়েছেন দুইজনকে বাঘে ধরে নিয়ে গেছে। পরে সংবাদ দেয়া ব্যক্তিরও সন্ধান মিলছে না। আমরাও ভারতীয় পাড়ে যেতে পারছি না। ফলে সঠিক খবরও পাচ্ছি না। এদিকে এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্চের কর্মকর্তা আবুল হাসান জানান, ঘটনাটি রাত ৯টার দিকে জানতে পেরেছি। বাঘের আক্রমণে দুইজন আহত হয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে এখনো বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি। সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্চ ও ভারতীয় রেঞ্চের সীমান্ত এলাকায় বাঘের আক্রমণের এই ঘটনাটি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে অপর একটি সূত্র জানায়, নিহত রতন ও মিজানুর রহমানের মরদেহ সুন্দরবনের ভারতের একটি খালে ভাসছিল এবং মুসা বিএসএফ’র হাতে আটক হয়েছে। পরে বিএসএফ রতন ও মিজানুর রহমানের মরদেহ উদ্ধার করে তাদের হেফাজতে রেখেছে। ফলে রতন ও মিজানুর রহমানের মৃত্যু বাঘের আক্রমণে না গরু পাচারের সময় বিএসএফ’র গুলিতে হয়েছে তা এখনই স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।

এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরার নীলডুমুরস্থ বিজিবি ১৭ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ইয়াসিন চৌধুরী জানান, সুন্দরবনের ভারতের অংশে বাংলাদেশী দুই মঃস্যজীবী বাঘের আক্রমণে নিহত হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন এবং সে অনুযায়ী খোঁজখবর নিচ্ছেন। ঘটনা সঠিক হলে নিহত বাংলাদেশীদের মরদেহ উদ্ধারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here