সুমনন ও মেধার সন্নিবেশনে রূপসায় ভূমি সেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন
খুলনাঃ
শত প্রতিকূলতার মধ্যেও দুর্নীতি বন্ধ, সরকারী সস্পত্তি উদ্ধার, নামপত্তন ও ১৫০ ধারা দ্রুত নিস্পত্তিসহ উত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে মাত্র ৬ মাসে রূপসাবাসীর মনে স্থান করে নিয়ে ভূমি সেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন রূপসা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুস্মিতা সাহা। সুমনন ও মেধার সন্নিবেশনে ভূমি অফিসে ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না এমন ধারণা পাল্টে গেছে উপজেলার সাধারণ ভূমি সেবা গ্রহীতাদের মাঝে। যোগদানের পর ভুমি অফিস থেকে অনিয়ম-দূর্নীতি প্রতিরোধ করে মডেল ভূমি অফিসে রুপান্তরিত করতে নিরলসভাবে কাজ করছেন তিনি।
ভূমি অফিসের দৃশ্যপট পাল্টে গতিশীল হয়েছে কাজ, দূর হয়েছে ভূমির মালিকদের হয়রানি ও ভোগান্তি। সেবা গ্রহীতাদের কাজ সহজীকরণে ও ভূমি অফিসকে দালালমুক্ত করতে নিয়েছেন নানাবিধ পদক্ষেপ। সেবা গ্রহীতারা যাতে নিজের কাজ নিজে এসে করতে পারে এজন্য খুলেছেন হেল্প ডেস্ক। হেল্প ডেস্ক থেকে বিস্তারিত তথ্য ও কাজের গাইড লাইন পাচ্ছে সেবা গ্রহীতারা। গোপন অভিযোগ গ্রহণের জন্য স্থাপন করেছেন স্বচ্ছ অভিযোগ বাক্স। নিরাপত্তার স্বার্থে স্থাপন করেছেন সিসি ক্যামেরা। অফিসের সম্মূখে ঝুলিয়েছেন সরকারী ফিসের বিবরণ সম্বলিত ও নামপত্তনের প্রবাহ চিত্রের বিলবোর্ড, সিটিজেন চার্টারসহ সচেতনতামূলক ও দুর্নীতি বিরোধী বিভিন্ন সাইনবোর্ড। সেবা গ্রহীতাদের সরাসরি পরামর্শ ও অভিযোগ গ্রহণের জন্য নিয়মিত করছেন গণশুনানীর ব্যবস্থা, সচেতনতা বৃদ্ধিতে করছেন উঠান বৈঠকও, উন্মুক্ত করেছেন নিজ ফোন নম্বর।
এছাড়া প্রত্যেক দপ্তরের সামনে স্থাপন করা হয়েছে কর্মকর্তার নাম, পদবী, ছবি ও মোবাইল নম্বর সম্বলিত বিলবোর্ড। ই-নামজারীর ব্যবস্থা গ্রহণ, মুঠোফোনে ভুমি সেবা চালু, ভূমি উন্নয়ন কর আদায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মধ্যে স্বচ্ছতা, আন্তরিকতা ও জবাবদিহিতার দায়বদ্ধতা বৃদ্ধিতে পরামর্শ এবং উৎসাহ দেয়াসহ নিবিড় তদারকি করেন তিনি। এমনকি দ্রুততার সাথে কাজ সম্পাদন করতে তিনি তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে ছুটির দিনেও করছেন অফিস। যে কারণে নিষ্পত্তি হয়েছে যোগদানের পূর্বে জমে থাকা দুই হাজারের অধিক মামলাসহ প্রায় তিন হাজার নামজারী মামলা। ইতিমধ্যে তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন উপজেলার ভিপি ডাটাবেজ, খাসজমি ডাটাবেজ, জলমহল ডাটাবেজ। সম্পন্ন করেছেন অর্ধ শতাধিক ১৫০ ধারা মামলা।১৫ দিনের মধ্যে করণিক ভুল সংশোধন ২৩(৩) ধারা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। এছাড়া নতুন আবেদনকারীদের ২৮ দিনের মধ্যে নামজারীর ব্যবস্থা করতে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি এখানে যোগদানের পরে তার নিজস্ব প্রচেষ্টায় ঢেলে সাজিয়েছেন ভূমি সেবা। সুসজ্জ্বিত করে তুলেছেন রেকর্ডরুমসহ সমগ্র ভূমি অফিস। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীগণকে পরামর্শ, উৎসাহ ও নিবিড় তদারকির মাধ্যমে কাজের প্রতি দায়িত্ববোধ, আন্তরিকতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
তিনি যোগদানের ৩ মাসের মধ্যেই জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে দু’টি মৌজার ১০.৭০ একর জমি রাঘব বোয়ালদের থেকে দখলমুক্ত করে সরকারি জিম্মায় এনেছেন। যা অত্র উপজেলার ইতিহাসে এক অন্যন্য দৃষ্টান্ত । গত ২ অক্টোবর উপজেলার জাবুসা মৌজার এসএ ৯১৫, আরএস ১নং খতিয়ানের আরএস ১৫৬৫ ও ১৫৬৭ নং দাগের ৪.০২ একর জমি অবৈধ দখলমুক্ত করেন তিনি।এছাড়া গত ২৪ অক্টোবর উপজেলার ফতেপুর মৌজার বিভিন্ন আরএস খতিয়ান ও দাগের ৬.৬৪ একর জমি উদ্ধার করেন। সাথে সাথে জমিতে সাইনবোর্ডও টাঙ্গিয়ে দেন। দীর্ঘদিন ধরে এসব জমি প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ভূমিদস্যুদের ভোগ দখলে ছিলো।
উপজেলা সহকারী কমিশনার ( ভূমি) কার্যালয়ে নামজারীর কাজে আসা সেবাগ্রহীতা আরতি দাস, খান আব্দুল জব্বার, স্বপন কুমার মজুমদার, এনামুল হক, বাদল পেঁয়াদাসহ একাধিক সেবা গ্রহীতার সাথে কথা বলে জানা যায়, নিজ দায়িত্ব পালনে অত্যন্ত সচেতনতা এবং নিষ্ঠার সাথে এলাকাবাসীকে সেবা প্রদান করছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) । তার আচরণে ভুমি সেবা গ্রহীতারা সন্তুষ্ট। তারা জানান, তিনি একজন সৎ, যোগ্য, দক্ষ ও সফল অফিসার।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুস্মিতা সাহা বলেন, সর্বোপরি সকলের সহযোগীতা নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক ভূমি সেবা গ্রহীতাদের জন্য শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত ভূমি সেবা নিশ্চিত তথা মডেল ভূমি অফিসে রূপান্তরিত করতে কাজ করে যাচ্ছি। ভূমি ব্যবস্থাপনাকে এমনভাবে ঢেলে সাজানোর জন্য চেষ্টা করেছি যাতে করে সেবা গ্রহীতারা কোন ধরণের প্রতারণা ও হয়রানির শিকার না হন। তিনি আরো বলেন, নিজের কাজ নিজে এসে করলে দালালরা আর পাত্তা পাবে না। এজন্য প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে।
তিনি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আরো যেসব সরকারি সম্পত্তি বেদখল রয়েছে, সেসব সম্পত্তি দখলমূক্ত করতে চেষ্টা অব্যাহত আছে। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে গণশুনানী ও আলোচনা সভা করার পরিকল্পনা রয়েছে। গত ৮ আগস্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন সুস্মিতা সাহা।