সুষ্ঠু নির্বাচন হতেই হবে: সুলতানা কামাল
সবুজদেশ ডেক্সঃ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংঘাতময় পরিস্থিতি বিরাজমান। ১৯৭৫ সালে যে সংঘাতের শুরু হয়েছিল, তার সমাধান আজ পর্যন্ত আমরা করতে পারিনি। ওই সমস্যার সমাধান সেইভাবে হয়নি বলেই এখন পর্যন্ত প্রতি মুহূর্তে আমরা চিন্তা করছি, এখন যে পরিস্থিতি আছে তার থেকেও খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে আমরা যাবো কি না?
সোমবার বরিশালে ‘মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার ৭০ বছর পূর্তি উদযাপন এবং মানবাধিকার বিষয়ক চলচ্চিত্র’ প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়ার আগে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সুলাতানা কামাল আরও বলেন, নির্বাচন এলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত, এমনকি হত্যাকাণ্ড নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে শঙ্কার সৃষ্টি হয়। নিজ দলের মধ্যে মনোনয়ন প্রতিযোগিতার কারণে পরস্পরের মধ্যে দ্বন্ধ সংঘাত হতে পারে। সব চেয়ে বেশী দুশ্চিন্তা সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে। কারণ বিগত কয়েকটি নির্বাচনের সময় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর প্রচুর নির্যাতন হয়েছে।
তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা অনেক বেড়েছে। তারা নিজেদের দায়-দায়িত্ব থেকে এই দ্বন্দ্ব-সংঘাত এড়িয়ে চলবে। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দায়-দায়িত্ব হলো রাজনৈতিক দলগুলোর। যদি রাজনৈতিক দলগুলো (আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব দল) সত্যিকার অর্থে মানুষের স্বার্থে রাজনীতি করে, তারা যদি সৎভাবে সেটা উচ্চারণ করেন, তাহলে তাদেরই দেখা উচিত নির্বাচন নিয়ে যেন জনগণ বড় ধরনের কোন দ্বন্ধ-সংঘাতের মধ্যে না পড়ে। জনগণের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা রয়ে গেছে বলেও মনে করেন তিনি।
রাষ্ট্র ক্ষমতায় যারা আছেন তারা এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করবেন বলে প্রত্যাশা সুলতানা কামালের। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো মানুষের জন্য রাজনীতি করেন, যদি সত্যিকার অর্থেই তারা মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করেন, তাহলে তারা জনগণকে বিপদে ফেলবেন কেন?
কেমন নির্বাচন চাই জানতে চাইলে সুলতানা কামাল বলেন, নির্বাচন শব্দটার মধ্যেই বেছে নেওয়ার একটা বিষয় আছে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আনুগত্য রেখে কাজ করেন, যারা জনগণের স্বার্থ নিয়ে কাজ করেন, জনগণ যাতে সে রকমের পছন্দের প্রার্থীকে মুক্ত মনে বেছে নিতে পারেন সেটাই তো নির্বাচন। জনগণ এক কথায় অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায় বলে তিনি জানান।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল বলেন, সুযোগ যে একেবারে নেই তা নয়, এই সুযোগ যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের মূখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। একই সাথে রাজনৈতিক দলগুলোকেও সোচ্চার হতে হবে। জনগণ রুখে দাঁড়ালে সুষ্ঠু নির্বাচন হতেই হবে। জনগণকে নিজের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং সেটা ব্যবহার করার জন্য তাদের শক্তি নিয়ে দাঁড়াতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের নৈতিক স্খলনের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে মানবাধিকার নেত্রী সুলতানা কামাল বলেন, যদি সত্যিই তার নৈতিক স্খলন হয়ে থাকে, এমন কোন প্রমাণাদি যদি থেকে থাকে, তাহলে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
মানবাধিকারের নামে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজী-ধান্দাবাজী এবং প্রতারণার বিষয়েও কথা বলেন টিআইবি ট্রাস্ট্রি বোর্ডের বর্তমান সদস্য সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, যে কোন নামেই যে ধরনের প্রতারণা ধান্দাবাজী বন্ধ করতে হবে। যেই হোক না কেন মানবাধিকারের নাম নিয়ে যে কেউ কোন ধরনের প্রতারণা-ধান্দাবাজী করলে তার দায় দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে।
সুইজারল্যান্ড দূতাবাস, বাংলাদেশে জাতিসংর্ঘের আবাসিক সমন্বয়কারী অফিস, ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল এন্ড ফোরাম অন হিউম্যান রাইটস্ জেনেভা, স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভলপমেন্ট এবং বরিশাল এনজিও ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্ক যৌথভাবে সোমবার নগরীর সদর রোডের বিডিএস মিলনায়তনে ‘মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার ৭০ বছর পূর্তি উদযাপন এবং মানবাধিকার বিষয়ক চলচ্চিত্র’ প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রধান ক্রিস্টফ ফিউকস্ ও বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী অফিসের সিনিয়র হিউম্যান রাইটস্ এডভাইজার হেইকে আলেফসন। আরও বক্তব্য রাখেন সরকারী বিএম কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান, স্টেপস্ টুয়ার্ডস্ ডেভলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার, তরুনদের প্রতিনিধি মরিয়ম আক্তার রুবী এবং মো. শামীম।
অনুষ্ঠানে আফগানিস্তান থেকে ইরানে দেশান্তর হওয়া একটি পরিবার নিয়ে মানবাধিকার বিষয়ক একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।