সাবজাল হোসেন,কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) ॥
আমরা যদি আলো হই, তুমি আমাদের মোমবাতি এই স্লোগান নিয়ে ৮৮ বছর বয়সী জাপানী সেই মহতী নারী হিরোকো কোবাইয়েশীকে সম্মাননা দিয়েছে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ও হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড। এ অনুষ্ঠানে ওই জাপানী মহতি নারী শিক্ষা বৃত্তিধারী মেয়েদের হাতে জ্বলন্ত মোমবাতির তুলে দিয়ে সকলকে এভাবে শিক্ষার আলো ছড়ানোর নির্দেশনা দেন। এর আগে শনিবার রাতে ঢাকার একটি ইংরেজী দৈনিক ঐতিহ্যবাহী দ্যা ডেইলি ষ্টারের পক্ষ থেকে হিরোকো কোবাইয়েশীকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। গত ১৪ বছর ধরে দৈনিক সংবাদ, সমকাল,মানবকণ্ঠ, যায়যায়দিন” আলোকিত বাংলাদেশ, স্থানীয় দৈনিক স্পন্দন , গ্রামের কাগজ, নবচিত্রসহ দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় কোবাইয়েশীর মহৎ কাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে অসংখ্য প্রতিবেদন ছাপা হয়।
তার এ মহৎ কাজের জন্য শনিবার ঢাকায় এবং গতকাল রোববার কালীগঞ্জের হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড চত্বরে হিরোকো কোবাইয়েশীকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। কালীগঞ্জের এ সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের কান্ট্রি ডিরেক্টর আতাউর রহমান মিটন, ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর আনজুমান আক্তার, জাপান প্রবাসী ফটোগ্রাফার খন্দকার আনিসুর রহমান,কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি জামির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাবজাল হোসেন, দ্যা ডেইলি ষ্টারের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি আজিবর রহমানসহ এলাকার সূধিজনেরা।
উল্লেখ্য, জাপানী এই মমতাময়ী নারী হিরোকো কোবাইয়েশী তার ফুল আর ছবি বিক্রির রেজগারের একটি অংশ বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া অসহায় মেয়েদের জন্য ব্যয় করে আসছেন। বিগত ১৪ ব্ছর ধরে তিনি বাংলাদেশের ৯০ জন অসহায় মেয়েকে এ শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে এদেশের নারী শিক্ষার উন্নয়নে সহযোগিতা করে আসছেন। মেয়েগুলোর অভিভাবকের মত প্রতি বছর মার্চ মাসে বাংলাদেশে এসে মেয়েগুলোর পড়াশোনাসহ যাবতীয় খোজখবর নেন।
উল্লেখ্য,গত ২০০৩ সালে জাপানী ফটোগ্রাফার হিরোকো কোবাইয়েসী বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হাঙ্গার ফ্রি ওয়াল্ডের বন্ধু হয়ে পেশাগত কাজে কালীগঞ্জে আসেন। সে সময়ে তার সাথে ছিলেন এ দেশের কৃতি সন্তান একই পেশার সাথে জড়িত জাপান প্রবাসী খন্দকার আনিসুর রহমান। তারা গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ক্যামেরাবন্দি করে ফেরার পথে মুখোমুখি হন হৃদয় বিদারক এক ঘটনার। ওই দিন উপজেলার মস্তবাপুর গ্রামের গরীব বাবার মেয়ে খাদিজা খাতুন টাকার অভাবে এস.এসসি পরীক্ষার ফি না দিতে পারায় গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করে। এটা শুনেই তারা ছুটে যান খাদিজার বাড়িতে। সেখানে গিয়ে খাদিজার বাবা মায়ের কান্নাকাটি আর স্বজনদের আহাজারিতে জাপানী এই ভদ্র মহিলার মনে দাগ কাটে। খাদিজার বাবা মাকে কোন রকমে শান্ত¦না দিয়ে কোবাইয়েশি নিজেও চোখের পানি মুছতে মুছতে ফিরে আসেন কালীগঞ্জ শহরের হাঙ্গার ফ্রি ওয়াল্ডের রেষ্ট হাউজে। এরপর এই জাপানী মমতাময়ী নারী এ এলাকার গরীব মেধাবী মেয়েদের কথা ভাবতে থাকেন। এ এলাকার আর কোন খাদিজাকে যেন এভাবে ঝরে যেতে না হয় সে কারনে তিনি খাদিজার মত অসহায় মেয়েদের শিক্ষাবৃত্তি দেয়ার ঘোষনা দেন। তিনি ওই বছরই হাঙ্গার ফ্রি ওয়াল্ডের মাধ্যমে ১৭ লাখ টাকা শিক্ষাবৃত্তির জন্য বরাদ্ধ দেন। বর্তমানে সেটা বেড়ে দাড়িয়েছে ৩৪ লাখে। এখন স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের এ উপজেলার মোট ৪৫ জন ও পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ৪৫ জন মিলে মোট ৯০ জন বাংলাদেশী শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।হাঙ্গার ফ্রি ওয়াল্ডের কান্ট্রি ডিরেকটর আতাউর রহমান মিটন জানান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের অর্থনীতিতে ছাপ পড়ে। শিক্ষা জীবনে হিরোকো কোবায়েসী নিজেও ছোটবেলায় আর্থিক অনাটনের মধ্যে মানুষ হয়েছেন। পরের দেয়া শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে লেখাপড়া শিখেছেন। তখন তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন কর্মজীবনে গিয়ে সুযোগ পেলে গরীব অসহায় মেয়েদের সহযোগীতা করবেন। তাই তিনি শিক্ষাবৃত্তি চালু করে গরীব অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কর্মজীবনের রোজগারের কিছু টাকা নিজ সংসারের জন্য রেখে বাকিটা শিক্ষাবৃত্তি হিসেবে বাংলাদেশের মেয়েদের সাহায্যে প্রদান করেন। তিনি বৃত্তিধারীদের একটি শর্ত দিয়ে দেন তারা যখন লেখাপড়া শিখে বড় হবে এবং কর্মজীবনে গিয়ে সুযোগ পেলে তারাও গরীব মেধাবীদের পাশে দাঁড়াবে। এতে সমাজ ও দেশটা হবে আরও সুন্দর।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here