সোহেল রশীদ, রংপুরঃ

রংপুরে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ডিবি পুলিশের এএসআই রায়হানুল ইসলামের বিরুদ্ধে নবম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে নির্যাতিতা স্কুল ছাত্রী সুমাইয়া পারভীন মেঘলা (২৭) নামের এক নারীর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সেখানে সে আবারও গণধর্ষণের শিকার হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। পুলিশ গণধর্ষণের সহযোগিতার অবিযোগে সুমাইয়া পারভীন মেঘলা ও সুরভি আখতার সমাপ্তি নামের দুই নারীকে গ্রেফতার করেছে। এ নিয়ে হারাগাছ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলটি তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই। ওই ছাত্রী এখন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, হারাগাছ থানা এলাকায় দীর্ঘদিন চাকরি করেন রংপুর মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশের এএসআই রায়হানুল ইসলাম। সেই সুবাদে একটি মামলার সূত্র ধরে হারাগাছ থানার ময়নাকুঠি কচুটারি গ্রামের নবম শ্রেণিতে পড়া এক ছাত্রীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন ওই পুলিশ সদস্য। প্রথম পরিচয়ের সময় তার ডাক নাম রাজু বলে জানায়। প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে গত ২৩ অক্টোবর শুক্রবার সকালে ওই ছাত্রীকে বেড়াতে নিয়ে যায় রায়হানুল। পরে পূর্ব পরিচিত নগরীর বাহারকাছনা ক্যাদারের পুল এলাকার শহিদুল্লাহ মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া সুমাইয়া পারভীন মেঘলার (২৭) বাড়িতে ডেকে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। পরে ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রী সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতে ফিরে এলে তার মা তাকে দেরি করে বাড়িতে ফেরার জন্য গালমন্দ করে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়।

এ নিয়ে অভিমান করে ওই ছাত্রী রাত ৯টায় বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পুনরায় সুমাইয়া পারভীন মেঘলার বাসায় এসে আশ্রয় চায়। সেখানে রাত্রীযাপন করে। পরের দিন ২৪ অক্টোবর শনিবার রাতে ওই বাসায় মেঘলা তার বান্ধবি সুরভি আখতার সমাপ্তির সহযোগিতায় দু’জন যুবককে ডেকে এনে টাকার বিনিময়ে ওই ছাত্রীকে তাদের হাতে তুলে দেয়। সেখানে সে গণধর্ষণের শিকার হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে পরদিন ২৫ অক্টোবর রোববার ওই নির্যাতিতা ছাত্রী রায়হানুলকে খুঁজতে শহরে আসে। রায়হানুলকে না পেয়ে সে ভিতসন্ত্র হয়ে রংপুর চিড়িয়াখানায় ঘুরতে থাকে। তাকে দেখে টহল পুলিশের সন্দেহ হলে পুলিশ ওই ছাত্রীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে তার ওপর নির্যাতনের ঘটনা পুলিশকে জানায়। পুলিশ তাঁকে রোববার অনুমান রাত ১২টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে। পরে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে থানায় মামলা রেকর্ড করেন।

পুলিশ রোববার রাত ৮টায় ভাড়াটিয়া বাসা থেকে সুমাইয়া পারভীন মেঘলাকে গ্রেফতার করে। এর পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গণধর্ষণে সহযোগিতা করার অভিযোগে সুরভি আখতার সমাপ্তিকে সোমবার দুপুরে গ্রেফতার করে। পুলিশ ওই গণধর্ষণের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই যুবকের সন্ধানে অভিযান শুরু করেছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আরপিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন।
এদিকে ওই ঘটনায় স্কুলছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে পুলিশ সদস্য রায়হানুলসহ আরও দুইজনের নাম উল্লেখ করে ধর্ষণ মামলা করেন। ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ভাড়াটিয়া সুমাইয়া পারভীন মেঘলার বাড়িতে বিভিন্ন সময়ে মেয়ে নিয়ে গিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ওই ছাত্রীর মা জানান, মামলার আসামি ধরতে গিয়ে আমার মেয়ের সাথে এএসআই রায়হানুল রাজু পরিচয় হয়েছিল। তারপর থেকেই তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। আমার মেয়ের সাথে সে কথাবার্তা বলতো। মাঝেমধ্যে দেখা সাক্ষাৎ করতো। বিষয়টি এমন পর্যায়ে যাবে আমরা ভাবতে পারিনি।
আরপিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাকে দুই জন ধর্ষণ করেছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে রায়হানুল ইসলাম রাজু নামের একজন পুলিশ সদস্যের কথা জানিয়েছে। তবে ওই রাজু ডিবি পুলিশের এএসআই রায়হানুল কিনা তা নিশ্চিত হতে রায়হানুলকেও বরখাস্ত করে পুলিশের জিম্মায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মেয়েটির পরিবার পুলিশের নিকট ধর্ষণের ব্যাপারে মামলা করেছে।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সহকারী উপ-পরিদর্শক রায়হানুল ইসলামসহ আরও দু’জনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি তদন্ত শুরু করেছে পিবিআই। এটি জানিয়েছেন পিবিআই এর পুলিশ সুপার জাকির হোসেন। তিনি বলেন, যেহেতু বিষয়টি সাথে পুলিশ সদস্য জড়িত তাই মামলাটি অধিকতর নিরপেক্ষতার বিষিয়টি নিশ্চিত কওে তদন্ত কাজ শুরু করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে মামলাটি পিবিআইয়ের কাছে তদন্তভার হস্তান্তর করা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here