অল্প সময়ে, স্বল্প খরচে বেশি ফলন হওয়ায় ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে কৃষকদের ভুট্টা চাষে আগ্রহ বেড়েছে। ধানের চেয়ে অধিক লাভজনক হওয়ায় ভুট্টা চাষ এখন এ অঞ্চলের প্রধান আবাদি ফসলে পরিণত হয়েছে। চাষিরা বোরো চাষ কমিয়ে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ভুট্টা চাষে মনোনিবেশ করছেন। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার ভালো ফলনের আশা করছেন কৃষক।
ভুট্টা চাষ এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে এবং স্বনির্ভর হতে শুরু করেছেন স্থানীয় কৃষক। ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং ভুট্টা গাছ ও সবুজপাতা উন্নতমানের গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। জ্বালানি হিসেবে ভুট্টা গাছের রয়েছে আলাদা কদর। এ ছাড়া ভুট্টার পাতা, কাণ্ড, ছাল কিংবা মোচা কোনোটাই উচ্ছিষ্ট থাকে না। উপজেলার ৫ টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এলাকায় ব্যাপকভাবে ভুট্টা চাষ হয়েছে । এ এলাকায় আগাম ভুট্টা রোপণ করায় গাছের উচ্চতা মানুষকে ছাড়িয়ে গেছে। সবুজ পাতায় ছেয়ে গেছে মাঠের পর মাঠ। ভুট্টার ক্ষেতগুলোর নিড়ানি সেচ সহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করে এখন ভুট্টা উঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে চাষিরা।
কৃষকরা জানান, ৯৫ দিনের মধ্যে ভুট্টার ফলন পাওয়া সম্ভব। প্রতি বিঘা জমিতে চাষ, বীজ, সেচ, সার ও কীটনাশক এবং পরিচর্যা বাবদ খরচ হয় ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ফলন হয় ৪০ থেকে ৪৫ মণ। প্রতি মণের বর্তমান বাজার মূল্য ৮ শত থেকে ১২ শত টাকা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভুট্টা চাষে অনুকূল আবহাওয়া ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ায় স্বল্প খরচে যথাসময়ে এবার ভুট্টার বাম্পার ফলনে সম্ভাবনা রয়েছে। এই মৌসুমে ৩৯ শত ৭৯ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদের লক্ষ্য মাত্র থাকলেও চাষ হয়েছে অনেক বেশি জমিতে। চাষ হয়েছে এন এইচ ৭৭২০, সুপার স্টার ৯২৫৫,কাবেরি ৩৩৫৫, ডন ৫৫৩৩ সহ বিভিন্ন জাতের ভুট্টা।
উপজেলার বহরমপুর গ্রামের ভুট্টাচাষি সুসা মিয়া বলেন, বোরো ধান চাষে খরচ অনেক বেশি লাভ কম। অথচ ভুট্টা চাষ করতে তেমন খরচ হয় না পরিশ্রম কম কিন্তু লাভ বেশি। তাই ভুট্টা চাষ করছি।
পৌর এলাকার চাষী হজরত আলী বলেন, যে কোনো ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষই এখন লাভজনক। এবার ৩ বিঘা জমিতে তিনি ভুট্টা আবাদ করেছেন। এরই মধ্যে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। বর্তমানে প্রতিমন কাচা ৮ শত শুকনো ১৫০ টাকা ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে। ঈদের পরে আরো দাম বাড়তে পারে তাহলে বেশ ভালো লাভ হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার জাহিদ হোসেন বলেন, ভুট্টা একটি লাভজনক ফসল। অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষ করে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। রোগ বালাইয়ের উপদ্রব কম, স্বল্প খরচে, কম সময়ে অধিক লাভ পাওয়ায় এখানকার কৃষকরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছে।
সবুজদেশ/এসইউ