কুষ্টিয়াঃ

বর্তমানে কুষ্টিয়ায় রাজাকার ও স্বাধীনতা বিরোধীরা আছে বলে মনে হয় না। স্বাধীনতার এত বছর পরও বিচার না হওয়ায় তারা এখন ভালো মানুষে পরিণত হয়েছে। কোন কোন এলাকায় স্বাধীনতা বিরোধীরা এখনও ক্ষমতার দাপটের সাথে জীবন যাপন করছে।

কুষ্টিয়ার রাজাকার সদস্যদের যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা হয়নি একটিও। গত ১১ ডিসেম্বর ২০০৯ সালের শুক্রবার সকালে কুষ্টিয়ামুক্ত দিবসে শহরের মজমপুরে রাজাকার চত্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে ১২৯ জন রাজাকারের নামের তালিকা প্রকাশ করেন একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহরিয়ার কবির।

রাজাকারের নামের তালিকা প্রকাশের পর জেলাজুড়ে হৈচৈ পড়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা বিচারের আশায় বুক বাঁধে। কিন্তু সে স্বপ্ন আজও পূরণ হয়নি। ভবিষ্যতেও পূরণ হবে বলে মনে করেন না। আলোচিত এ তালিকায় জিয়া সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান (মৃত), এরশাদ সরকারের সাবেক খাদ্য প্রতিমন্ত্রী কোরবান আলী, খালেদা জিয়া সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী আহসানুল হক পচা মোল্লা (মৃত)সহ অনেক রথীমহারথীর নাম রয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকাররা এখনও এ দেশে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এই তালিকা ছাড়াও কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন গ্রাম গঞ্জে রয়েছে অসংখ্য রাজাকার ও স্বাধীনতা বিরোধীরা। সবার নাম হয়তো তালিকায় আসেনি।

এই বিষয়ে শিশু, তরুণ, মধ্য বয়সী ও জোষ্ঠ বসয়ী প্রায় ত্রিশজন মানুষের সাথে কথা হয় এই নিউজের প্রতিবেদকের।

আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে এটাই শুধু আমরা জানি। কুষ্টিয়ায় শিক্ষিত রাজাকার ও স্বাধীনতা বিরোধীরা আছে এটা মানুষ ভুলে যাচ্ছে দিন দিন। তরুণরা তো এখন অনেক কিছুই জানে না। নতুন প্রজন্মকে এ বিষয়ে শিক্ষা বা ধারণা দেওয়া হচ্ছে না। ফলে রাজাকারা সাধারণ মানুষের সাথে মিশে আছে। ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় তারা এখন এ দেশের নাগরিকের সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করছেন। কেউ রাজাকার থেকে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। কেউ হয়েছেন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, কেউ বা হয়েছেন শিক্ষিত রাজাকার । অন্যদিকে আবার নকলের ভিড়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ পড়ার ঘটনাও রয়েছে এই জেলায়।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কুষ্টিয়া জেলা ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডার রফিকুল আলম টুকু বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলকালীন সময়ে রাজাকার, আল-বদল বাহিনী তৈরী হয়েছিল এবং তারা আমাদের মা বোনদের উপর নির্যাতন অন্যায় অত্যাচার চালিয়েছিলো। বাড়িঘর লুটপাট করেছিলো। কুষ্টিয়ায় রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কুষ্টিয়ায় যারা মুক্তিযুদ্ধের বই লিখেছেন তারাও তাদের বইতে রাজাকারদের তালিকা স্পষ্ট করেছেন। ২০০৯ সালে ১১ডিসেম্বর কুষ্টিয়ামুক্ত দিবসে শহরের মজমপুরে রাজাকার চত্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে ১২৯ জন রাজাকারের নামের তালিকা প্রকাশ করেন একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তারপরও কেনো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালতে কুষ্টিয়ার রাজাকার একজনের বিরুদ্ধেও একটি মামলাও হলো না। এতে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, রাজাকারদের তালিকা স্পষ্ট হয়েছে এখন তাদের বিচারের মুখোমুখির করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।

মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও সাংবাদিক ইমাম মেহেদী জানান, স্বাধীনতার সুর্যোদ্বয়ের ইতিহাসখ্যাত জেলা কুষ্টিয়া। সারাদেশে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আন্দোলন তৈরি হয় তখন আমি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজর ছাত্র। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নাছিম উদ্দিন আহমেদ, মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও সাংবাদিক নেতা রাশেদুল ইসলাম বিপ্লবের সাথে আমিও সক্রিয়ভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আন্দোলন করেছি কিন্তু দুখের বিষয় দিন যত যাচ্ছে ততো স্বাধীনতা বিরোধীরা ভালো মানুষে পরিণত হচ্ছে। নতুন প্রজন্ম শুধু মুক্তিযুদ্ধের কথা জানে কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধী এবং তার পরিবারের সদস্যরা কোথায় কি করছে সেই বিষয়ে একদমই অজানা। বাংলাদেশই মনে হয় বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে স্বাধীনতা অর্জনের এত বছর পরও যুদ্ধাপরাধী আলবদর রাজাকার সদস্যরা আরাম আয়েশে জীবন যাপন করে যাচ্ছে। এখনও সময় আছে, রাষ্ট্রের উচিত দ্রুত বিচার কার্যক্রম শেষ করা।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here