ঢাকা ১১:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অন্য মামলার নিজেই বাদী!

Reporter Name

বিশেষ প্রতিনিধিঃ

যিনি হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবার তিনি নিজেই অন্য মামলার বাদী। ঘটনাটি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায়। ঘটনার বিবরণে জানা যায়।

গত নভেম্বর মাসের ৩০ তারিখে বাড়ির পাশে ওয়াজ শুনতে গিয়ে নিখোঁজ হয় মাদ্রাসা ছাত্র আলামিন (১৩)। এরপর নিখোঁজের ৫ দিন পর গত ৪ ডিসেম্বর আড়পাড়া এলাকার একটি ৪তলা ভবনের পিছনের কচুবাগান থেকে অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় নিহতের পিতা আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে ৫ ডিসেম্বর রাতে অজ্ঞাত আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন কালীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ মতলেবুর রহমান। এরপর হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে র‌্যাব এবং পিবিআই দুই দফা সাব্বির ও হৃদয় নামে দুই কিশোরকে নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আবার তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। গত ২২ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ থানা পুলিশ সাব্বির ও হৃদয় নামে দুই কিশোরকে হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে আটক করে। আদালত তাদের কারাগারে প্রেরণ করেন। একই সাথে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তাদের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। গত ২ জানুয়ারি আদালত তাদের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়। তদন্তের দায়িত্ব পায় ঝিনাইদহ পিবিআইয়ের এসআই সোহেল রানা।

সর্বশেষ ৮ তারিখে আটক দুই কিশোর সাব্বির ও হৃদয়কে নিয়ে আড়পাড়া এলাকার একটি পুকুরে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধারের চেষ্টা করে। দিনব্যাপী ডুবুরি ও পানি সেচে ছুরি উদ্ধারের চেষ্টা করে। এরপর বুধবার রাত ১০ টার দিকে সাব্বিরের কাছ থেকে ব্যবহৃত ছুরি ও হত্যাকান্ডের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিতে গেলে আসামির স্বজনরা তাদের উপর হামলা করে।

সেই সাথে আসামির স্বজনেরা দাবি করেন, দুই দিনের রিমান্ড শেষে আসামিদের কারাগারে প্রেরণ করার কথা। একজন আসামি হৃদয়কে যশোর কিশোর উন্নয়নে পাঠালেও সাব্বিরকে পাঠায়নি। সাব্বিরকে নিজেদের হেফাজতে রেখে তদন্তকারী কর্মকর্তা দিনভর তাদের নিয়ে হত্যাকান্ডের আলামত উদ্ধারের নাটক করেন।

এদিকে সাব্বিরের মা রহিমা পারভীন অভিযোগ করেন, বিভিন্ন সময় পিবিআই সদস্যরা তাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তার ছেলেকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করে।

পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, বুধবার রাত ১০ টার দিকে আসামি সাব্বিরের সাথে নিয়ে উদ্ধারকৃত ছুরি নিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়ার প্রস্তুতি চলছিল। এসময় মোস্তাফিজুর রহমান বিজুর নেতৃত্ব ১০/১৫ জনের একটি দল আমাদের উপর অতর্কিত হামলা করে। এসময় আমরা আসামি সাব্বিরকে নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করলেও তারা পিবিআইয়ের এসআই হাফিজুর রহমানকে আটকে মারধর করে। এ সময় আহত হয় পিবিআইয়ের আরো ৪ কর্মকর্তা।

পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে পিবিআইয়ের এসআই ও হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সোহেল রানা বাদী হয়ে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৩৫/৪০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

তবে এ বিষয়ে আইনের কতটুকু যৌক্তিক ব্যাখ্যা রয়েছে জানতে চাইলে ঝিনাইদহ আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া মিলন জানান, মহামান্য হাইকোর্ট এ সংক্রান্ত বিষয়ে ২০১০ সালের ৩০ বিএলডির ৪৯০ পৃষ্ঠায় বলেছে এজাহারকারী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি একই ব্যক্তি হন তাহলে ন্যায়বিচারে বাঁধা সৃষ্টি হয়। সে কারণে মহামান্য হাইকোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি নির্দেশনা দেন। ২০১১ সালে ১৬ বিএলসি পৃষ্ঠা নং ৩২ মহামান্য হাইকোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভাগকে অনুরুপ ব্যাখ্যা প্রদান করেন। এ বিষয়ে সরাসরি কোন বাঁধা না থাকলেও ন্যায় বিচার বিঘ্ন ঘটতে পারে। যে কারণে তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হতে পারে।

ভিডিও দেখুন…

About Author Information
আপডেট সময় : ০৮:৪২:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২০
৯০৭ Time View

হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অন্য মামলার নিজেই বাদী!

আপডেট সময় : ০৮:৪২:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২০

বিশেষ প্রতিনিধিঃ

যিনি হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবার তিনি নিজেই অন্য মামলার বাদী। ঘটনাটি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায়। ঘটনার বিবরণে জানা যায়।

গত নভেম্বর মাসের ৩০ তারিখে বাড়ির পাশে ওয়াজ শুনতে গিয়ে নিখোঁজ হয় মাদ্রাসা ছাত্র আলামিন (১৩)। এরপর নিখোঁজের ৫ দিন পর গত ৪ ডিসেম্বর আড়পাড়া এলাকার একটি ৪তলা ভবনের পিছনের কচুবাগান থেকে অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় নিহতের পিতা আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে ৫ ডিসেম্বর রাতে অজ্ঞাত আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন কালীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ মতলেবুর রহমান। এরপর হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে র‌্যাব এবং পিবিআই দুই দফা সাব্বির ও হৃদয় নামে দুই কিশোরকে নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আবার তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। গত ২২ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ থানা পুলিশ সাব্বির ও হৃদয় নামে দুই কিশোরকে হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে আটক করে। আদালত তাদের কারাগারে প্রেরণ করেন। একই সাথে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তাদের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। গত ২ জানুয়ারি আদালত তাদের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়। তদন্তের দায়িত্ব পায় ঝিনাইদহ পিবিআইয়ের এসআই সোহেল রানা।

সর্বশেষ ৮ তারিখে আটক দুই কিশোর সাব্বির ও হৃদয়কে নিয়ে আড়পাড়া এলাকার একটি পুকুরে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধারের চেষ্টা করে। দিনব্যাপী ডুবুরি ও পানি সেচে ছুরি উদ্ধারের চেষ্টা করে। এরপর বুধবার রাত ১০ টার দিকে সাব্বিরের কাছ থেকে ব্যবহৃত ছুরি ও হত্যাকান্ডের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিতে গেলে আসামির স্বজনরা তাদের উপর হামলা করে।

সেই সাথে আসামির স্বজনেরা দাবি করেন, দুই দিনের রিমান্ড শেষে আসামিদের কারাগারে প্রেরণ করার কথা। একজন আসামি হৃদয়কে যশোর কিশোর উন্নয়নে পাঠালেও সাব্বিরকে পাঠায়নি। সাব্বিরকে নিজেদের হেফাজতে রেখে তদন্তকারী কর্মকর্তা দিনভর তাদের নিয়ে হত্যাকান্ডের আলামত উদ্ধারের নাটক করেন।

এদিকে সাব্বিরের মা রহিমা পারভীন অভিযোগ করেন, বিভিন্ন সময় পিবিআই সদস্যরা তাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তার ছেলেকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করে।

পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, বুধবার রাত ১০ টার দিকে আসামি সাব্বিরের সাথে নিয়ে উদ্ধারকৃত ছুরি নিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়ার প্রস্তুতি চলছিল। এসময় মোস্তাফিজুর রহমান বিজুর নেতৃত্ব ১০/১৫ জনের একটি দল আমাদের উপর অতর্কিত হামলা করে। এসময় আমরা আসামি সাব্বিরকে নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করলেও তারা পিবিআইয়ের এসআই হাফিজুর রহমানকে আটকে মারধর করে। এ সময় আহত হয় পিবিআইয়ের আরো ৪ কর্মকর্তা।

পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে পিবিআইয়ের এসআই ও হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সোহেল রানা বাদী হয়ে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৩৫/৪০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

তবে এ বিষয়ে আইনের কতটুকু যৌক্তিক ব্যাখ্যা রয়েছে জানতে চাইলে ঝিনাইদহ আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া মিলন জানান, মহামান্য হাইকোর্ট এ সংক্রান্ত বিষয়ে ২০১০ সালের ৩০ বিএলডির ৪৯০ পৃষ্ঠায় বলেছে এজাহারকারী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি একই ব্যক্তি হন তাহলে ন্যায়বিচারে বাঁধা সৃষ্টি হয়। সে কারণে মহামান্য হাইকোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি নির্দেশনা দেন। ২০১১ সালে ১৬ বিএলসি পৃষ্ঠা নং ৩২ মহামান্য হাইকোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভাগকে অনুরুপ ব্যাখ্যা প্রদান করেন। এ বিষয়ে সরাসরি কোন বাঁধা না থাকলেও ন্যায় বিচার বিঘ্ন ঘটতে পারে। যে কারণে তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হতে পারে।

ভিডিও দেখুন…