হিজবুল্লাহর তীব্র হামলার মুখে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিচ্ছে ইসরায়েল
সবুজদেশ ডেস্কঃ
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সাথে ইসরায়েলের এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে ইরান-সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামাসের হামলা শুরুর পর থেকে এই গোষ্ঠীর সমর্থনে ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে আসছে হিজবুল্লাহ। লেবানন থেকে হিজবুল্লাহর হামলা বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্তের কাছের গ্রামগুলোর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ বাসিন্দাকে ইতিমধ্যে সরিয়ে নিয়েছে ইসরায়েল।
সোমবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিনিধি আন্না ফসটার লেবানন-ইসরায়েল সীমান্ত থেকে বলেছেন, আমরা গত কয়েকদিন ধরে লেবাননের সাথে ইসরায়েলের সীমান্তের কাছাকাছি কয়েকটি গ্রামের কিছু মানুষের সাথে কথা বলেছি। তাদের বেশিরভাগই ইতিমধ্যে সরে গেছেন। সোমবার সকালের দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করেননি তারা।
তিনি বলেন, আমরা এমন কিছু পরিবারের সাথে কথা বলেছি যারা তাদের জিনিসপত্র গুছিয়ে, সন্তানদের নিয়ে নিরাপদে দক্ষিণের দিকে চলে গেছেন। সীমান্তের কিছু গ্রাম ইতিমধ্যে তিন-চতুর্থাংশ বা তারও বেশি খালি রয়েছে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখন কেবল সামরিক বাহিনীর সদস্য এবং স্থানীয় নিরাপত্তা দলের সদস্যরা রয়েছেন। আন্না ফসটার বলেন, গতকাল যখন আমরা সীমান্তে ছিলাম তখন এক পর্যায়ে সীমান্তের ওপারে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে পাল্টাপাল্টি গুলি চলেছিল। সীমান্তের লেবাননের অংশের কিছু কিছু গ্রামে হিজবুল্লাহর পর্যবেক্ষণ পোস্ট রয়েছে।
এর আগে, হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধের মাঝেই রোববার ইসরায়েলি একটি গ্রামে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় হিজবুল্লাহ। এতে ইসরায়েলের অন্তত এক নাগরিক নিহত ও আরও তিনজন আহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, উত্তরাঞ্চলে লেবানন সীমান্তের কাছে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে চার কিলোমিটার এলাকায় ‘নিরাপদ অঞ্চল’ ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে ওই এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। একই সাথে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে বেসামরিক নাগরিকদের চলাচল সীমিত থাকবে।
আইডিএফ বলছে, উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে ক্রমাগত রকেট হামলা, অনুপ্রবেশের চেষ্টা এবং উত্তেজনার পর নিরাপদ অঞ্চল ঘোষণা করাটা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল। সীমান্তের দুই কিলোমিটারের মধ্যে যারা বসবাস করেন, তাদের বোমা হামলা থেকে বাঁচতে আশ্রয়কেন্দ্র ও নিরাপদ কক্ষে অবস্থান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
লেবানন সীমান্তের কাছের বাসিন্দাদের কেন সরিয়ে নিচ্ছে ইসরায়েল?
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা ইসরায়েলের উত্তরে লেবানিজ সীমান্ত থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। সোমবার ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, গত কয়েক দিনে হিজবুল্লাহ ও তার মিত্র গোষ্ঠীগুলোর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে একের পর এক রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাঝে লেবাননের সীমান্ত থেকে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত শহরে বসবাসকারী বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জাতীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনইএমএ) বলেছে, সীমান্তের বাসিন্দাদের রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে গেস্টহাউসে নিয়ে যাওয়া হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলোকে জানানো হয়েছে।
আইডিএফ বলছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৮টি গ্রামের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এসব গ্রামের মধ্যে আছে গাজার, দিশোন, কেফার ইয়োভাল, মার্গালিওট, মেটুলা, আভিভিম, ডোভেভ, মা’আন বারুচ, বার’আম, মানারা, ইফতাহ, মালকিয়া, মিসগাভ আম, ইর’ন, ডাফনা, আরব আল-আরামশ, শ্লোমি, নেতুয়া, ইয়া’রা, এস্তুলা, মাতাত, জার’ত, শোমেরা, বেটজেট, আদমিত, রোশ হানিকরা, হানিতা এবং কেফার গিলিয়েড।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আক্রমণ অব্যাহত রাখলে ‘প্রাণঘাতী’ প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হবে হিজবুল্লাহ। তেল আবিবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, গাজা উপত্যকায় আমাদের চলমান অভিযানের উদ্দেশ্য বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে গত কয়েক দিন ধরে ইরানের নির্দেশনা ও সমর্থনে হামলা চালিয়ে আসছে হিজবুল্লাহ। তাদের হামলা লেবাননের ও এর নাগরিকদের জীবনকে বিপন্ন করে তুলছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা উত্তর সীমান্তে আমাদের সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করেছি এবং আমাদের বিরুদ্ধে যেকোনও ধরনের কার্যকলাপের আক্রমণাত্মক জবাব দেওয়া হবে। যদি হিজবুল্লাহ আমাদের শক্তি-সক্ষমতার পরীক্ষা নেওয়ার সাহস দেখায়, তাহলে এর প্রতিক্রিয়া হবে মারাত্মক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে।’
সূত্র: বিবিসি, টাইমস অব ইসরায়েল।