ঢাকা ০৭:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হেলেনার ফোনালাপ ফাঁস: ‘৫ লাখে ব্যুরো চিফ’

Reporter Name

সবুজদেশ ডেস্ক:

‘পরবর্তীতে এমপি ফাইনাল। তবে টাকাটুকা দেবে? আর টাকা না দিলে একেবারে ভাইরাল করে দেব। একদম। জানোই তো, আমি ভাইরাল করার ওস্তাদ।’ ফোনের অন্য প্রান্তে অচেনা একজনকে এভাবেই বলছিলেন জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা হেলেনা জাহাঙ্গীর। গ্রেপ্তার হওয়া হেলেনার কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। তাঁর এই কথোপকথনের তথ্য ধরে তদন্ত করছে পুলিশ ও র‌্যাব।

সেই কথোপকথন : মালয়েশিয়াপ্রবাসী মেহেদী নামে একজনের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নেওয়ার বিষয়ে সেই অডিও ক্লিপে হেলেনা জাহাঙ্গীর তাঁর ব্যক্তিগত সহকারীকে বলেছিলেন, ‘বিএনপির এক নেতা আছে তো! হেলেনার প্রশ্ন ছিল, ‘বিএনপি না আওয়ামী লীগ?’ অন্য প্রান্ত থেকে বলা হচ্ছিল, ‘আরে বিএনপির, মোংলার রামপাল আছে না? ওখানের এমপি ইলেকশন করেছিল।’ হেলেনা বলছিলেন, ‘টাকাটুকা দেবে? তাহলে তাকে মালয়েশিয়ার ব্যুরো চিফ বানিয়ে দেব।’ অন্য প্রান্তের অচেনা ব্যক্তি হেলেনাকে বলছিলেন, ‘কাল-পরশু নতুন একটা গেস্ট পাঠাব।’

অচেনা সেই লোক বলছিলেন, ‘আরে নাহ। এমনি যাবে।’ হেলেনার উত্তর ছিল, ‘টাকা না দিলে একেবারে ভাইরাল করে দেব। একদম। পরবর্তীতে এমপি ফাইনাল। আমি তো ভাইরাল করার ওস্তাদ।’ অন্য প্রান্ত থেকে ওই ব্যক্তি বলছিলেন, ‘প্রাথমিক স্টেজে তো চাওয়া যায় না! আগে ইনভলব করি। এদেরকে তো পরে মুরগি বানাব।’

অন্য একটি ক্লিপে হেলেনা জাহাঙ্গীর ও তাঁর ব্যক্তিগত সহকারীর মধ্যকার কথোপকথনে হেলেনা বলছিলেন, ‘মালয়েশিয়ার মেহেদী আছে না? ও বারবার আমাকে ডিস্টার্ব করতেছে। এসএমএসে। বিভিন্ন মানুষকে দিয়ে কল করাচ্ছে। তুমি তাকে বলবা ঠিক আছে, আপনি পাঁচ লাখ টাকা দেন। ম্যাডামকে আমি রাজি করাই। ইউ মেক পলিসি অ্যাপ্লাই। বুঝছ? পলিসি মেক না করলে মেকার হতে পারবে না।’

অন্য প্রান্ত থেকে পিএস বলছিলেন, ‘আজকে কি কল করেছিল ম্যাম?’ হেলেনা বলছিলেন, ‘নানা মানুষকে দিয়ে আমাকে ফোন করাচ্ছে। পুলিশ আছে না একটা?’

অন্য প্রান্ত থেকে বলছে, ‘পারভেজের কথা কি বলে?’ হেলেনা বলেন, ‘ওর কথা বাদ। তুমি বলো মাসে এক লাখ করে টাকা দেন। পাঁচ থেকে ছয় মাস পর আপনাকে ব্যুরো চিফ বানাইয়া দেব মালয়েশিয়ার। আমাদের তো এখন টাকা দরকার। আমাকে দিয়েন না। অফিসকে দেন।’

মামলা ডিবিতে : এদিকে হেলেনার বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানায় দায়ের করা দুটি মামলার মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) স্থানান্তর করা হয়েছে। গতকাল রবিবার বিকেলে গুলশান থানা থেকে মামলার তদন্তভার ডিবির স্পেশাল সাইবার ক্রাইম বিভাগে দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

এ ব্যাপারে ডিএমপির গুলশান থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, গুলশান থানায় দায়ের করা দুটি মামলার একটির তদন্ত করবে গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ।

এর আগে র‌্যাব বাদী হয়ে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় গুলশান থানায় মামলা দুটি করে। ওই মামলায় হেলেনাকে তিন দিনের রিমান্ডে এনে গুলশান থানায় জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। গুলশান থানার পুলিশ এ তথ্য নিশ্চিত করে জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসা থেকে উদ্ধার করা মদ, ওয়াকিটকি, ক্যাসিনো সরঞ্জাম ও হরিণের চামড়ার বিষয়ে বন্য প্রাণী আইন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের ধারায় আরেকটি মামলা করা হয়। তা ছাড়া অনুমোদন ও বৈধ কাগজপত্র ছাড়া জয়যাত্রা টিভির সম্প্রচারের অভিযোগে হেলেনার নামে পল্লবী থানায় আরেকটি মামলা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন আইনে র‌্যাব-৪-এর একজন উপপরিদর্শক (এসআই) গত শুক্রবার রাতে ওই মামলা করেন।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে হেলেনা জাহাঙ্গীর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মানহানি ও সুনাম নষ্ট করেছেন। তিনি মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচার করে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছেন। খ্যাতি লাভের আশায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে সম্মানিত ব্যক্তিদের বিব্রত করতেন। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তিনি তৈরি করেছেন একটি সংঘবদ্ধ চক্র। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ফেসবুক লাইভে এসে অযাচিত ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিতেন। এভাবে তদন্তে এরই মধ্যে তাঁর সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।

About Author Information
আপডেট সময় : ১২:৩৫:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ অগাস্ট ২০২১
১৩৮ Time View

হেলেনার ফোনালাপ ফাঁস: ‘৫ লাখে ব্যুরো চিফ’

আপডেট সময় : ১২:৩৫:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ অগাস্ট ২০২১

সবুজদেশ ডেস্ক:

‘পরবর্তীতে এমপি ফাইনাল। তবে টাকাটুকা দেবে? আর টাকা না দিলে একেবারে ভাইরাল করে দেব। একদম। জানোই তো, আমি ভাইরাল করার ওস্তাদ।’ ফোনের অন্য প্রান্তে অচেনা একজনকে এভাবেই বলছিলেন জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা হেলেনা জাহাঙ্গীর। গ্রেপ্তার হওয়া হেলেনার কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। তাঁর এই কথোপকথনের তথ্য ধরে তদন্ত করছে পুলিশ ও র‌্যাব।

সেই কথোপকথন : মালয়েশিয়াপ্রবাসী মেহেদী নামে একজনের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নেওয়ার বিষয়ে সেই অডিও ক্লিপে হেলেনা জাহাঙ্গীর তাঁর ব্যক্তিগত সহকারীকে বলেছিলেন, ‘বিএনপির এক নেতা আছে তো! হেলেনার প্রশ্ন ছিল, ‘বিএনপি না আওয়ামী লীগ?’ অন্য প্রান্ত থেকে বলা হচ্ছিল, ‘আরে বিএনপির, মোংলার রামপাল আছে না? ওখানের এমপি ইলেকশন করেছিল।’ হেলেনা বলছিলেন, ‘টাকাটুকা দেবে? তাহলে তাকে মালয়েশিয়ার ব্যুরো চিফ বানিয়ে দেব।’ অন্য প্রান্তের অচেনা ব্যক্তি হেলেনাকে বলছিলেন, ‘কাল-পরশু নতুন একটা গেস্ট পাঠাব।’

অচেনা সেই লোক বলছিলেন, ‘আরে নাহ। এমনি যাবে।’ হেলেনার উত্তর ছিল, ‘টাকা না দিলে একেবারে ভাইরাল করে দেব। একদম। পরবর্তীতে এমপি ফাইনাল। আমি তো ভাইরাল করার ওস্তাদ।’ অন্য প্রান্ত থেকে ওই ব্যক্তি বলছিলেন, ‘প্রাথমিক স্টেজে তো চাওয়া যায় না! আগে ইনভলব করি। এদেরকে তো পরে মুরগি বানাব।’

অন্য একটি ক্লিপে হেলেনা জাহাঙ্গীর ও তাঁর ব্যক্তিগত সহকারীর মধ্যকার কথোপকথনে হেলেনা বলছিলেন, ‘মালয়েশিয়ার মেহেদী আছে না? ও বারবার আমাকে ডিস্টার্ব করতেছে। এসএমএসে। বিভিন্ন মানুষকে দিয়ে কল করাচ্ছে। তুমি তাকে বলবা ঠিক আছে, আপনি পাঁচ লাখ টাকা দেন। ম্যাডামকে আমি রাজি করাই। ইউ মেক পলিসি অ্যাপ্লাই। বুঝছ? পলিসি মেক না করলে মেকার হতে পারবে না।’

অন্য প্রান্ত থেকে পিএস বলছিলেন, ‘আজকে কি কল করেছিল ম্যাম?’ হেলেনা বলছিলেন, ‘নানা মানুষকে দিয়ে আমাকে ফোন করাচ্ছে। পুলিশ আছে না একটা?’

অন্য প্রান্ত থেকে বলছে, ‘পারভেজের কথা কি বলে?’ হেলেনা বলেন, ‘ওর কথা বাদ। তুমি বলো মাসে এক লাখ করে টাকা দেন। পাঁচ থেকে ছয় মাস পর আপনাকে ব্যুরো চিফ বানাইয়া দেব মালয়েশিয়ার। আমাদের তো এখন টাকা দরকার। আমাকে দিয়েন না। অফিসকে দেন।’

মামলা ডিবিতে : এদিকে হেলেনার বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানায় দায়ের করা দুটি মামলার মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) স্থানান্তর করা হয়েছে। গতকাল রবিবার বিকেলে গুলশান থানা থেকে মামলার তদন্তভার ডিবির স্পেশাল সাইবার ক্রাইম বিভাগে দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

এ ব্যাপারে ডিএমপির গুলশান থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, গুলশান থানায় দায়ের করা দুটি মামলার একটির তদন্ত করবে গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ।

এর আগে র‌্যাব বাদী হয়ে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় গুলশান থানায় মামলা দুটি করে। ওই মামলায় হেলেনাকে তিন দিনের রিমান্ডে এনে গুলশান থানায় জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। গুলশান থানার পুলিশ এ তথ্য নিশ্চিত করে জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসা থেকে উদ্ধার করা মদ, ওয়াকিটকি, ক্যাসিনো সরঞ্জাম ও হরিণের চামড়ার বিষয়ে বন্য প্রাণী আইন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের ধারায় আরেকটি মামলা করা হয়। তা ছাড়া অনুমোদন ও বৈধ কাগজপত্র ছাড়া জয়যাত্রা টিভির সম্প্রচারের অভিযোগে হেলেনার নামে পল্লবী থানায় আরেকটি মামলা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন আইনে র‌্যাব-৪-এর একজন উপপরিদর্শক (এসআই) গত শুক্রবার রাতে ওই মামলা করেন।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে হেলেনা জাহাঙ্গীর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মানহানি ও সুনাম নষ্ট করেছেন। তিনি মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচার করে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছেন। খ্যাতি লাভের আশায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে সম্মানিত ব্যক্তিদের বিব্রত করতেন। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তিনি তৈরি করেছেন একটি সংঘবদ্ধ চক্র। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ফেসবুক লাইভে এসে অযাচিত ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিতেন। এভাবে তদন্তে এরই মধ্যে তাঁর সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।