১২,৩৯৮ কোটি টাকায় বিক্রি
তামাকজাত পণ্য উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান জাপান টোব্যাকো বাংলাদেশের আকিজ গ্রুপের তামাক ব্যবসা কিনে নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে জাপানের কোম্পানিটি বিনিয়োগ করছে ১৪৭ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১২ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা হিসাবে)।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, আর্থিক মূল্যে এটি একটি অন্যতম বড় আন্তসীমান্ত অধিগ্রহণ চুক্তি, যেখানে বাংলাদেশি কোনো কোম্পানির নাম যুক্ত।
তামাক ব্যবসা বিক্রির বিষয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই জাপান টোব্যাকোর সঙ্গে আকিজের আলোচনা চলছিল। আকিজের ঢাকার তেজগাঁও কার্যালয়ে গতকাল সোমবার দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় দুই প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জাপান টোব্যাকো জানিয়েছে, অনুমোদনপ্রক্রিয়া শেষে দুই কোম্পানির মধ্যে লেনদেন চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে শেষ হবে।
রয়টার্স বলছে, বাংলাদেশ বিশ্বে সিগারেটের অষ্টম বৃহত্তম বাজার। এই বাজারে আকিজের হিস্যা ২০ শতাংশ। আকিজের ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে নেভি, শেখসহ অন্যান্য তামাক ব্যবসা লাভজনক। জাপান টোব্যাকো বলছে, বাংলাদেশি কোম্পানির ব্যবসা অধিগ্রহণের ফলে তাদের মোট বিক্রির পরিমাণ ১ হাজার ৭০০ ইউনিট বাড়বে। নতুন চুক্তির বিষয়টি ঘোষণার আগে গতকাল জাপানের পুঁজিবাজারে জাপান টোব্যাকোর শেয়ারের দাম শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে।
জাপান টোব্যাকো এক বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছে, বিশ্বে ১৩০টি দেশে তাদের কার্যক্রম আছে। প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করে প্রায় ৬০ হাজার কর্মী। তারা উইনস্টন, ক্যামেল, মেভিয়াস ও এলডি ব্র্যান্ডের সিগারেট বাজারজাত করে, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিচিত ব্র্যান্ড। তামাকের পাশাপাশি জাপান টোব্যাকো ই-সিগারেট বাজারজাত করে। তাদের ওষুধ ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ব্যবসাও আছে। রয়টার্স বলছে, জাপান টোব্যাকো বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ তামাক কোম্পানি।
কোম্পানিটি বলছে, সম্প্রসারণশীল বাজারগুলোতে ব্যবসা বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট মুতসও ইওয়াই বলেন, ‘এই বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা উদীয়মান বাজারগুলোতে আমাদের ব্যবসা সম্প্রসারণকে এগিয়ে নিলাম। এটা প্রতিষ্ঠানের প্রবৃদ্ধি কৌশলের অংশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের বাজারে আকিজের হিস্যা জাপান টোব্যাকোকে দ্বিতীয় অবস্থানে নিয়ে আসবে। এটা আমাদের মুনাফা বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখবে।’
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলাম, জাপান টোব্যাকোর সহযোগী প্রতিষ্ঠান জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এডি পিরার্ড, একই প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ কার্যক্রমের মহাব্যবস্থাপক ম্যাক্স লোবাশেভ, আকিজ গ্রুপের চেয়ারম্যান শেখ নাসির উদ্দিন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ বশির উদ্দিন, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা শামসুদ্দিন আহমেদ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এডি পিরার্ড বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ। এ দেশের নীতিও ব্যবসা সহায়ক। এ কারণেই আমরা বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণের আগ্রহ দেখিয়েছি।’
জাপান টোব্যাকোর বিনিয়োগ বাংলাদেশে জাপানি কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক আগ্রহের প্রতিফলন। গত ফেব্রুয়ারিতে জাপান ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) প্রকাশিত এক জরিপ অনুযায়ী, এ দেশে কর্মরত ৬৮ শতাংশ জাপানি কোম্পানি মনে করে, ২০১৭ সালের চেয়ে চলতি বছর বাংলাদেশে মুনাফা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়।
জেট্রোর জরিপে জাপানি কোম্পানিগুলোকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আগামী ১-২ বছরে তারা বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণে যাবে কি না। এর জবাবে ইতিবাচক উত্তর দিয়েছে ৬৯ শতাংশ কোম্পানি। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান, মিয়ানমার, ভারত ও ভিয়েতনাম অবশ্য বাংলাদেশের ওপরে আছে।
জেট্রোর হিসাবে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে কর্মরত জাপানি কোম্পানির সংখ্যা ছিল ২৪৫টি।