২০-দলীয় জোটের নেতৃত্বে, জাতীয় ঐক্যের সঙ্গে
সবুজদেশ ডেক্সঃ ২০-দলীয় জোট অটুট রেখে এবং এই জোটের নেতৃত্বে থেকে বিএনপি ড. কামাল হোসেন ও বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে। আপাতত বৃহত্তর ঐক্যের একটি দল হিসেবে বিএনপি অন্যান্য দলের সঙ্গে যুগপৎভাবে ৫ দফা দাবিতে আন্দোলন করবে।
গত রোববার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বাসায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, নির্বাচনী দাবি আদায়ে সরকারের বিরুদ্ধে অভিন্ন আন্দোলন-কর্মসূচি পালন করবে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া, এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর (বি চৌধুরী) নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট ও বিএনপি।
বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের দুজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াতের সঙ্গ ছাড়া নিয়ে যুক্তফ্রন্ট যে শর্ত দিয়েছিল, সেখানে দলটি অনড় থাকলে ঐক্য প্রক্রিয়া ভেস্তে যেতে পারত। কারণ বিএনপি ভোটের অঙ্কের হিসাব কষে জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নামতে চায়। ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের আলোচনা অনুযায়ী, এখন থেকে বিএনপি এককভাবে বৃহত্তর জোটে থাকবে। তাদের নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট বৃহত্তর জোটের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে না। নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামী ২০-দলীয় জোটের শরিক হিসেবে বিএনপির সঙ্গে থাকবে।
গতকালের বৈঠকে ছিলেন বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নান। তিনি আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবে তো ঐক্য প্রক্রিয়ার যাত্রা শুরু হয়েছে। এখনো অনেক পথ বাকি আছে। আমরা নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছি, বিএনপি আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করবে। নির্বাচনের হিসাব-নিকাশের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।’
বৃহত্তর ঐক্যে জামায়াতকে নিয়ে বিতর্ক সম্পর্কে আবদুল মান্নান বলেন, ‘বিএনপি বলেছে এই আন্দোলনে তাদের সঙ্গে জামায়াত থাকবে না। তাদের সঙ্গে আলাদাভাবে কারা আছে সেটা আপাতত আমাদের বিবেচ্য নয়।’
গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গত ২২ সেপ্টেম্বর সমাবেশের মাধ্যমে বৃহত্তর সরকারবিরোধী এই জোটের যাত্রা শুরু হয়। সেখানে বিকল্পধারার চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি বি চৌধুরী এবং বিএনপি ও অন্যান্য শরিক দলের শীর্ষ নেতারা ছিলেন। ওই সমাবেশে বলা হয়েছিল, যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনকে ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে রাখা হবে না। বি চৌধুরীর বিকল্পধারা থেকে বলা হয়েছিল, ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে হলে বিএনপিকে জামায়াত ছেড়ে আসতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যের সম্পর্ক থাকবে না। থাকবে বিএনপির সঙ্গে। জাতীয় ঐক্য, যুক্তফ্রন্ট ও বিএনপির দাবি অভিন্ন হওয়ায় তারা একসঙ্গে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, গত শনিবার রাতে গুলশানের একটি বাড়িতে বি চৌধুরী ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টি নিয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক করেন। তারই ধারাবাহিকতায় রোববার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফের গুলশানের বাসায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বাসায় বিএনপি ও দুই জোটের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তবে এ সময় ড. কামাল হোসেন ও বি চৌধুরী ছিলেন না।
বৈঠকে বিকল্পধারার প্রস্তাব ছিল, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে কোনো জোটের অস্তিত্ব থাকবে না। জোটের ভেতরে থাকা দল নিয়ে জাতীয় ঐক্য হবে। সে ক্ষেত্রে ২০-দলীয় জোট বা যুক্তফ্রন্ট বলে কিছু থাকবে না। জামায়াতকে বাদ দিয়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের বাকি দলগুলোকে ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে হবে।
কিন্তু বিএনপি এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। বিএনপি বলেছে, তারা এককভাবে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে। তাদের নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট আলাদা থাকবে এবং আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করবে। শেষ পর্যন্ত ঐক্য প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্ট বিষয়টি মেনে নিয়েছে।
রোববার রাতের বৈঠককে বিএনপির কোনো কোনো নেতা নিজেদের কৌশলগত জয় বলে মনে করছেন। তাঁদের মতে, নির্বাচনের মাঠে তাঁরা জামায়াতকে হাতছাড়া করতে চান না। কারণ নিবন্ধন বাতিল হওয়ার আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জামায়াত ৩৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দুটি আসনে (চট্টগ্রাম-১৪ ও কক্সবাজার-২) জিতেছিল। সব মিলিয়ে তারা ভোট পেয়েছিল ৩২ লাখ ৮৯ হাজার ৯৬৭। ভোট পাওয়ার হার ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। বিএনপি মনে করে, নির্বাচনের মাঠে জয়-পরাজয় নির্ধারণে এই ভোট ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
বিএনপি আরও আশঙ্কা করে, জামায়াতকে অবহেলা করলে তারা অন্য কোনো দল বা জোটের সঙ্গে নতুন জোট গঠন করতে পারে। দলটির একাধিক শীর্ষ নেতা মনে করেন, সরকারের দিক থেকে এমন একটি তৎপরতা আছে। সেটা হলে ভোটের মাঠে বিএনপিকে বড় ধরনের ধাক্কা খেতে হবে।