৩২ জনকে দুদকে তলব
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে দুর্নীতির মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) ৩২ কর্মকর্তাকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। চলতি মাসেই তাঁদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে সংস্থাটি।
আজ সোমবার দুদকের উপপরিচালক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সামছুল আলম ৩২ জনকে তলব করে দুটি আলাদা চিঠি পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানের কাছে পাঠিয়েছেন। চিঠিতে এসব কর্মকর্তা বরাবর নোটিশ জারি করে নির্দিষ্ট তারিখে দুদকে উপস্থিত থাকার ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
যাঁদের তলব করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে উপমহাব্যবস্থাপক (মেনটেন্যান্স অ্যান্ড কন্টাক্ট ম্যানেজমেন্ট) মো. নাজমুল হক; ব্যবস্থাপক (কোল হ্যান্ডলিং ম্যানেজমেন্ট) মো. শোয়েবুর রহমান; ব্যবস্থাপক (প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট) মো. সাইদ মাসুদ; উপব্যবস্থাপক (মেনেটেন্যান্স অ্যান্ড অপারেশন) মো.মাহাবুব হোসেন; সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট) মো. মনিরুজ্জামান; সহকারী ব্যবস্থাপক (কোল হ্যান্ডলিং ম্যানেজমেন্ট) মো. মাহাবুব রশিদ ও ব্যবস্থাপক (স্টোর) মো. দিদারুল কবিরকে ১৬ আগস্ট দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে।
মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) আবু তাহের মো. নুরুজ্জামান চৌধুরী; উপ-মহাব্যবস্থাপক এ কে এম খালেদুল ইসলাম; উপ-ব্যবস্থাপক (মেইনটেনেন্স এন্ড অপারেশন) মোরশেদুজ্জামান; উপ-ব্যবস্থাপক (প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট) হাবিবুর রহমান; উপ-ব্যবস্থাপক (মাইন ডেভেলপমেন্ট) জাহেদুর রহমান; উপ-ব্যবস্থাপক (ভেন্টিলেশন ম্যানেজমেন্ট) সত্যেন্দ৶ নাথ বর্মণ; ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) সৈয়দ ইমাম হাসান ও উপ-মহাব্যবস্থাপক (মাইন প্ল্যানিং অপারেশন) জোবায়ের আলীকে হাজির থাকতে বলা হয়েছে ২৮ আগস্ট।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিব উদ্দিন আহমদ; সাবেক মহাব্যবস্থাপক (এক্সপ্লোরেশন), কোম্পানি সেক্রেটারি আবুল কাশেম প্রধানিয়া ও মোশারফ হোসেন সরকার; মহাব্যবস্থাপক (জেনারেল সার্ভিস) মাসুদুর রহমান হাওলাদার; ব্যবস্থাপক (প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট) অশোক কুমার হালদার; ব্যবস্থাপক (মেইনটেনেন্স এন্ড অপারেশন) আরিফুর রহমান; ব্যবস্থাপক (ডিজাইন, কন্সট্রাকশন এন্ড মেইনটেনেন্স) জাহিদুল ইসলাম এবং উপ-ব্যবস্থাপক (সেফটি ম্যানেজমেন্ট) একরামুল হককে তলব করা হয়েছে ২৯ আগস্ট।
৩০ আগস্ট দুদকে হাজির থাকতে বলা হয়েছে উপ-ব্যবস্থাপক (কোল হ্যান্ডলিং এন্ড ম্যানেজমেন্ট) মো. খলিলুর রহমান; সাবেক মহাব্যবস্থাপক (ফাইন্যান্স) আব্দুল মান্নান পাটোয়ারি ও গোপাল চন্দ্র সাহা; ব্যবস্থাপক (হিসাব) সারোয়ার হোসেন; ব্যবস্থাপক (সেলস ও রেভিনিউ কালেকশন) মো. কামরুল হাসান; উপব্যবস্থাপক (মার্কেটিং ও কাস্টমার সার্ভিসেস) মোহাম্মদ নোমান প্রধানীয়া; সাবেক মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এ কে এম সিরাজুল ইসলাম ও শরিফুল আলম এবং সহকারী ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) আল আমিনকে।
মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ আজ গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির দুর্নীতির তদন্ত দ্রুত শেষ হবে। প্রকৃত দোষীদেরই আইনের আওতায় আনা হবে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কোনো বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে ১ আগস্ট বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম নুরুল আওরঙ্গজেবকে দুদকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জালিয়াতির মাধ্যমে খনির ২০০ কোটি টাকার কয়লা আত্মসাতের ঘটনায় করা মামলায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
কয়লা লোপাটের ঘটনায় গত ২৭ জুলাই রাত ১২টায় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আনিছুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় ১৯ জন আসামির বিরেুদ্ধে খনির ১ লাখ ৪৫ হাজার টন কয়লা গায়েবের অভিযোগ আনা হয়, যার তদন্তের ভার পড়ে দুদকে ওপর।
এরই ধারাবাহিকতায় মামলার ১৯ আসামিসহ পেট্রোবাংলার ২১ জন কর্মকর্তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞায় পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) চিঠি দেয় দুদক।
এর আগে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাগজে-কলমে বেশি কয়লার মজুত দেখিয়ে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খতিয়ে দেখতে ২৩ জুলাই তিন সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছিল দুদক ।
দুদকের উপপরিচালক শামসুল আলমের নেতৃত্বে গঠিত ওই কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন ও উপসহকারী পরিচালক তাজুল ইসলাম।
অভিযোগের বিষয়ে দুদক জানায়, ২০০৫ সালে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে বাণিজ্যিকভাবে কয়লা উত্তোলন শুরু করা হয়। দীর্ঘ ১৩ বছরে কয়লা উত্তোলন হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ টন। বর্তমানে কোল ইয়ার্ডে কয়লার মজুত থাকার কথা ১ লাখ ৩০ হাজার টন। কিন্তু বাস্তবে কয়লার মজুত পাওয়া গেছে ১৪ হাজার টনের মতো। ১ লাখ ১৬ হাজার টনের মতো কয়লার কোনো হদিস নেই, যার বাজারমূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, দীর্ঘদিন থেকে একটি চক্র চুরি করে খোলা বাজারে এসব কয়লা বিক্রি করে দিয়েছে।