৫০ হাজার টাকার নিচে ঘুষ নেন না বিদ্যুতের নির্বাহী প্রকৌশলী
সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ
দূর্ণীতি-অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতায় চলছে সাতক্ষীরা ওজোপাডিকো লিমিটেড। নিয়মনীতির তোয়াক্কা নেই। তবে ঘুষ আদায় যেন এ দপ্তরের নিয়মে পরিণত হয়েছে। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া আবার টাকা নিয়ে সেই সংযোগ লাগিয়ে দেওয়া এসব চলে হরহামেশা। হিসাবরক্ষক বসেছেন যেন মিটার বিক্রির দোকান খুলে। প্রতিটা মিটারের জন্য গ্রাহককে গুণতে হয় তিনশ টাকা।
অন্যদিকে, ৫০ হাজার টাকার নিচে ঘুষই নেন না নির্বাহী প্রকৌশলী (আবাসিক) জিয়াউল হক এমন অভিযোগ বিদ্যুতের গ্রাহকদের। গ্রাহকদের অভিযোগ, স্বেচ্ছাচারিতা আর অনিয়মের আখড়া সাতক্ষীরা ওজোপাডিকো অফিস। ঘুষের দোকান খুলে বসেছেন প্রকৌশলী। টাকাই তার কাছে মূখ্য, সেবা কোন বিষয় নয়।
সম্প্রতি শহরের কদমতলা এলাকায় হোমিওপ্যাথিক কলেজের ট্রান্সফরমার বদলানো হয়েছে। নিয়ম রয়েছে ট্রান্সফরমার বদলাতে যশোর ওজোপাডিকো লিমিটেডের চীফ ইজ্ঞিনিয়ারের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে হোমিওপ্যাথিক কলেজের ট্রান্সফরমার বদলাতে প্রয়োজন হয়নি সেই অনুমোদনের। দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে সাতক্ষীরার নির্বাহী প্রকৌশলী (আবাসিক) জিয়াউল হক সেটি বদলে দিয়েছেন।
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, শহরের সিটি মার্কেটের মিটার নেওয়ার জন্য প্রকৌশলীকে ঘুষ দিতে হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। ২০ দিন আগে শহরের কুকরালী এলাকায় ছ-মিলের ট্রান্সফরমার বদলানো হয়। বদলাতে গিয়ে এক শ্রমিক আহত হয়ে মৃত্যু মুখে পড়েন। কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়াই ট্রান্সফরমারটি ৮০ হাজার টাকা নিয়ে বদলে দেন প্রকৌশলী। শহরের রইচপুর গ্রামের লোকমান আলীর ছেলে নুর আলী অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে সেচ মিটার চালাচ্ছিলেন। নুর আলীর চুরি ধরেও ফেলে সাতক্ষীরা ওজোপাডিকো। অফিস থেকে গিয়ে নুর আলীর মিটার খুলে নিয়ে আসা হয়। এ ঘটনায় নুর আলীকে কোন প্রকার জরিমানা বা শাস্তির ব্যবস্থা ছাড়াই ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি দফারফা করেন প্রকৌশলী। আবারও লাগিয়ে দেওয়া হয় মিটার।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, শহরের কদমতলা এলাকায় একটি চক্ষু হাসপাতাল হচ্ছে। হাসপাতালে এসটি গ্রাহকের জন্য আবেদন করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে নিয়ম ছাড়াই হাসপাতালে এসটি গ্রাহকের তালিকায় নেওয়া হয়েছে। মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কাজটি সহজ করে দিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী। ঘুষ নিয়ে ৪৫ কি. লোড দিয়ে দিয়েছেন নিয়ম উপেক্ষা করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নিয়ম মাফিক সাড়ে ৭ লাখ টাকা জমা দেওয়ার প্রয়োজনই হয়নি।
শহরের বাঁকাল এলাকার এমদাদুল হকের ছেলে আবিদ হোসেন বিদ্যুৎ চুর করতে গিয়ে ধরা পড়েন ওজোপাডিকো সাতক্ষীরার হাতে। বিদ্যুৎ চুরির দায়ে তার মিটার খুলে আনা হয়। তবে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে আবারো লাগিয়ে দেওয়া হয় তার মিটারটি।
মিটার প্রতি সাতক্ষীরা ওজোপাডিকো অফিসের হিসাবরক্ষক লুৎফার রহমান ফিরোজকে দিতে হয় ৩০০ টাকা। অফিসে বসেই তিনি আদায় করেন এই টাকা। তবে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন হিসাবরক্ষক লুৎফর রহমান।
মিটারের জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে কত টাকা করে উত্তোলন করা হয় এমন প্রশ্নে হিসাবরক্ষক লুৎফার রহমান ফিরোজ বলেন, মিটার নিতে কোন টাকার প্রয়োজন হয় না। আমাদের এখানে মিটারের জন্য এক টাকাও নেওয়া হয় না।
অন্যদিকে, দূর্ণীতি-অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতার এসব বিষয়ে ফোনে কোন কথাই বলতে রাজি হননি সাতক্ষীরা ওজোপাডিকো লিমিটেডের নির্বাহী প্রকৌশলী (আবাসিক) জিয়াউল হক। এরপর তার দপ্তরে যাওয়া হয় অভিযোগের বিষয়গুলো জানতে। তবে সেখানে গেলেও তিনি কোন কথাই বলতে রাজি হননি।
তিনি বলেন, আপনি কি জানতে চান সেটি লিখিত আকারে আবেদন করেন। পরবর্তীতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিবেচনা করা হবে।