৭০০ মিলিয়নের বার্সাকে হারাল ৭ মিলিয়নের গ্রানাডা
সবুজদেশ ডেস্কঃ
নিজের দিনে লিওনেল মেসি একাই প্রতিপক্ষকে দুমড়ে-মুষড়ে দিতে যথেষ্ট। সেখানে কাল রাতে দলের হার এড়াতে বার্সেলোনা কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দে একসঙ্গে মাঠে নামিয়েছিলেন ‘দুই মেসি’কে। সেই ‘দুই মেসি’ মিলেও বার্সেলোনার হার এড়াতে পারলেন না। গ্রানাডার মাঠ থেকে কাতালন জায়ান্টদের ফিরতে হয়েছে ২-০ গোলের হার নিয়ে।
পুঁচকে গ্রানাডার কাছে দৈত্য বার্সেলোনার হারটা ঠিক যেন গ্যালিভার-লিলিপুটের রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। কাড়ি কাড়ি টাকা ঢেলে দলে তারার মেলা বসিয়েছে বার্সেলোনা। বাইরে থেকে কিনে আনা খেলোয়াড়দের মোট মূল্যই ৭০০ মিলিয়ন ইউরো। নিজেদের একাডেমী ‘লা মাসিয়া’র পণ্য অধিনায়ক মেসি, জেরার্ড পিকেদের আর্থিক মূল নিরুপণ করলে নিশ্চিতভাবেই বার্সার বর্তমান স্কোয়াডের মূল্য বিলিয়ন ইউরোর সীমা ছাড়িয়ে যাবে।
সেখানে গ্রানাডা পুরো স্কোয়াড গঠন করেছে মাত্র ৭ মিলিয়ন ইউরো খরচা করে। মাসের পর মাস বার্সেলোনার রিজার্ভ বেঞ্চে কাটানো এক খেলোয়াড়ের মূল্যও এর কয়েকগুণ! দুই দলের স্কোয়াডের এই মূল্য স্পষ্ট করেই বলে দিচ্ছে দৈত্য বার্সেলোনার সামনে পুঁচকে গ্রানাডা কিছুই না!
কিন্তু নিয়তির ফেরে কাল সেই লিলিপুট গ্রানাডার কাছেই কুপোকাত গ্যালিভার বার্সেলোনা। নিজেদের মাঠে ম্যাচের প্রথম মিনিটেই এগিয়ে যায় গ্রানাডা। দুরূহ কোণ থেকে দুর্দান্ত এক হেডে গ্রানাডাকে এগিয়ে দেন রেমন আজিজ। আতোইন গ্রিজমান, লুইস সুয়ারেজরা শত চেষ্টা করেও এই গোল শোধ করতে না পারায় দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই একসঙ্গে ‘দুই মেসি’কে মাঠে নামান বার্সা কোচ।
এই দুই মেসির এক মেসিকে সারা দুনিয়াই চেনে। বার্সায় আরেক মেসি হলেন আনসু ফাতি। গিনিয়ান এই তরুণকে বার্সেলোনার সমর্থকেরা ভালোবেসে ‘নতুন মেসি’ নাম দিয়েছে। তো এই নতুন মেসি এবারের মৌসুমের প্রায় শুরু থেকেই চমক দেখাচ্ছেন। এরই মধ্যে গড়ে ফেলেছেন চার চারটি ইতিহাস। তবে আসল মেসি এবারের লিগে মাঠে নামেন কালই প্রথম। চোটের কারণে লা লিগায় বার্সেলোনার আগের ৪টি ম্যাচ তিনি খেলতে পারেননি।
কাল এক রকম বাধ্য হয়েই ৪৬ মিনিটে অধিনায়ক মেসিকে বদলি হিসেবে মাঠে নামান বার্সা কোচ। সঙ্গে ‘নতুন মেসি’ আনসু ফাতিও নামান ভালভার্দে। তারা দুজন নামায় বার্সেলোনার আক্রমণভাগে তখন মেসি, সুয়ারেজ, গ্রিজমান, আনসু ফাতি। কিন্তু এই আক্রমণ চতুষ্টয় মিলেও গ্রানাডার রক্ষণ দেয়াল ভাঙতে পারেনি।
উল্টো ম্যাচের ৬৬ মিনিটে আরও একটি গোল হজম করে বসে বার্সেলোনা। নিজেদের বিপদ সীমায় আরতুরো ভিদালের হ্যান্ডবল হওয়ায় পেনাল্টি পায় গ্রানাডা। তা থেকে গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করেন ভাদিলো। ম্যাচের বাকি সময়টুকুতে বার্সার চতুষ্টয় প্রানপণ চেষ্টা করেছে গোল আদায়ের জন্য। কিন্তু গ্রানাডার রক্ষণবর্ম ভেদ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি।
শুধু বার্সেলোনার বিপক্ষে জয় নয়। গানাডা বিস্ময় লা লিগার পয়েন্ট তালিকাতেও। বার্সেলোনা, রিয়াল মা্দ্রিদ, অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদের মতো বিশ্বসেরা ক্লাবগুলোকে পেছনে গ্রানাডাই পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। কালকের জয়ে ৫ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট হয়েছে ১০। গ্রানাডার সমান ১০ পয়েন্ট করে সেভিয়া এবং অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদেরও। তবে গোল ব্যবধানে গ্রানাডাই সবার উপরে।
গ্রানাডা বিস্ময়ের পাশে বার্সেলোনার দুর্দশার চিত্রটাও পয়েন্ট তালিকাতেই লুকায়িত। কালকের হারে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা নেমে গেছে পয়েন্ট তালিকার ৭ নম্বরে। কে জানে, আজ রাতের পর হয়তো বার্সাকে আরও নিচেই নেমে যেতে হবে! ৫ ম্যাচে মাত্র ৭ পয়েন্ট তাদের। মানে মৌসুমের প্রথম ৫ ম্যাচেই বার্সা খুইয়ে বসল ৮ পয়েন্ট। লিগে ৫ ম্যাচে এটা তাদের দ্বিতীয় হার।
বার্সেলোনার মতো হার লজ্জা হয়তো নয়। তবে কাল হতাশায় পুড়তে হয়েছে লা লিগার আরেক দৈত্য অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদকেও। নিজেদের মাঠ ওয়ান্ডা মেট্রোপলিতানোতে অ্যাতলেতিকো গোলশূন্য ড্র করেছে সেল্টা ভিগোর বিপক্ষে।