গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের দুটি প্রকল্প ছিল। প্রকল্প দুটির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ১৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা। কিন্তু সংসদ সচিবালয় সারা বছরে ওই দুটি প্রকল্পের মাত্র ৪২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা খরচ করতে পেরেছে। বাস্তবায়নের হার মাত্র আড়াই শতাংশ।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) পাঁচটি প্রকল্পে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। গোটা বছরে মাত্র ৬৩ কোটি টাকা খরচ করতে পেরেছেন আইআরডি ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা। সার্বিকভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের হার ২৫ শতাংশের কম।
অন্যদিকে সেতু বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগও গত অর্থবছরে তাদের জন্য বরাদ্দ হওয়া অর্থের ৬২ শতাংশ খরচ করতে পারেনি। এই বিভাগের আওতায় পদ্মা সেতুর মতো বিরাট প্রকল্পও আছে। সেতু বিভাগের অধীনে সব মিলিয়ে ৪৭টি প্রকল্পে ৬ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। এই বিভাগ শেষ পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা খরচ করতে সমর্থ হয়েছে।
গতবারের এডিপিতে বরাদ্দ করা টাকা খরচের এমন বেহাল দশা আরও আছে। যেমন ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সারা বছরে বরাদ্দের ৭৫ শতাংশ টাকা খরচ করতে পারেনি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এডিপিতে বরাদ্দ হওয়া অর্থ পুরোপুরি খরচ করতে না পারা নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর এমন হয়ে আসছে। গত অর্থবছরের এডিপিতে ৫৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতায় ১ হাজার ৭২৩টি প্রকল্প ছিল। এর মধ্যে ৫৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগই বরাদ্দের শতভাগ টাকা খরচ করতে পারেনি। এর মানে হলো, গত অর্থবছরে ৯৫ শতাংশ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বরাদ্দের শতভাগ অর্থ খরচ করতে পারেনি।
মাত্র তিনটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বরাদ্দের বেশি টাকা খরচ করেছে। ওই সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বাস্তবায়নের হার ১০০ শতাংশের বেশি। এগুলো হলো বিদ্যুৎ বিভাগ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।
এদিকে যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বরাদ্দের ৭৫ শতাংশ খরচ করতে পারেনি, সেগুলো হলো সেতু বিভাগ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, অর্থ বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন, জাতীয় সংসদ সচিবালয় এবং দুর্নীতি দমন কমিশন।
এডিপি বাস্তবায়ন ৯৪%
তবে গত দেড় যুগের মধ্যে গত অর্থবছরেই এডিপি সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন হয়েছে। বাস্তবায়নের হার ৯৪ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। তবে এটি মূল এডিপি নয়, সংশোধিত এডিপি। অর্থের হিসাবে গত অর্থবছরে মোট খরচ হয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত অর্থবছরে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয়সহ মূল এডিপির আকার ছিল ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫ কোটি টাকা। পরে সংশোধিত এডিপিতে তা কমিয়ে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা করা হয়।
আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প সাহায্য বাবদ পাওয়া অর্থের ৫২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। অন্যদিকে স্থানীয় অর্থায়ন থেকে খরচ হয়েছে ৮৯ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ৬ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
গত অর্থবছরের এডিপিতে শুরুতে ১ হাজার ২৭৪টি প্রকল্প ছিল। পরে সারা বছর ৪৪৪টি নতুন প্রকল্প পাস করা হয়। গত এডিপিতে বরাদ্দ করা অর্থ থেকে ওই সব প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বছরের শুরুতে যেসব প্রকল্পে যত বরাদ্দ ছিল, তা কমাতে হয়েছে। ফলে অনেক প্রকল্প সময়মতো শেষ কিংবা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
আলোচ্য অর্থবছরে গত দেড় যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ হারে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। ২০০১-০২ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মধ্যে এবারই মন্ত্রণালয়গুলো সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। বিগত ১৮টি এডিপির মধ্যে ৯০ শতাংশের কম বাস্তবায়ন হয়েছে ছয়বার। সবচেয়ে কম ৮২ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে। অন্য যেসব অর্থবছরে ৯০ শতাংশের কম বাস্তবায়ন হয়েছে, তা হলো ২০০১-০২, ২০০৩-০৪, ২০০৬-০৭, ২০০৮-০৯ ও ২০১৬-০৭। বাকি অর্থবছরগুলোতে ৯০ শতাংশ বা এর বেশি বাস্তবায়ন হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ লাখ ৮১ হাজার কোটি টাকার এডিপি নেওয়া হয়েছে। এই এডিপিতে ১ হাজার ৪৫২টি প্রকল্প রয়েছে।