সবুজদেম ডেক্সঃ রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন স্কুলশিক্ষক আজমত আলী। উচ্চ আদালতের রায়েও তিনি খালাস পান। কিন্তু মুক্তি পাওয়ার ১৩ বছর পর আবার সে মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। সেই থেকে ৯ বছর ধরে কারাগারে আছেন এই বৃদ্ধ।

খুনের মামলায় নিম্ন আদালত থেকে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আজমত আলীর পক্ষে যাবতীয় কাগজপত্রও আদালতে দাখিল করা হয়েছিল। শুরু হয়েছিল চিঠি চালাচালি। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি, তাই মুক্তিও মেলেনি। আজমত আলীর পরিবার এখন সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির দ্বারস্থ হয়েছে।

সাজা মওকুফ হওয়া আসামি একই মামলায় আবার কেন গ্রেপ্তার হলেন, এ দায় কার? এমন প্রশ্নের জবাবে জামালপুর আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি নির্মল কান্তি ভদ্র প্রথম আলোকে বলেন, এর জন্য দায়ী আসামিপক্ষ। তাদের অবহেলার কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। মুক্তির বিষয়টি আগেই তাদের অবহিত করার দরকার ছিল। কিন্তু তারা সেটা করেনি।

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দি এলাকার পাখিমারা গ্রামের ইজ্জত উল্ল্যা সর্দারের ছেলে আজমত আলী। টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ঘোড়ামারা এলাকার ভেঙ্গুলা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন তিনি। ১৯৮৭ সালের ১ এপ্রিল জমি নিয়ে বিরোধের জেরে এলাকার কলিম উদ্দিনের ছেলে রেজাউল করিম নিহত হন। এই ঘটনায় আজমত আলীকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। এ মামলায় ১৯৮৯ সালের ৮ মার্চ জামালপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালত তাঁকে যাবজ্জীবন সাজা দেন। বিচারিক আদালতের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আজমত আলী। একই সময় তিনি রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমার জন্যও আবেদন করেন। আপিল বহাল থাকার সময় রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় ১৯৯৬ সালের ২১ আগস্ট জামালপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। আবার ২০০৫ সালের ২ মার্চ হাইকোর্টের রায়েও তিনি খালাস পান। এভাবে ১৩ বছর কেটে যায়।

কিন্তু হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ, যার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ২০০৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আসামিকে (আজমত আলী) নিম্ন আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। ২০০৯ সালের ১৯ অক্টোবর গ্রামের বাড়ি থেকে আজমতকে গ্রেপ্তার করে নিম্ন আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। সেই থেকে কারাগারে আছেন তিনি। ২০১০ সালের ১১ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের আপিলে আসা রায়ে হাইকোর্টের রায় (খালাস) ও আদেশ রদ করে নিম্ন আদালতের রায় (যাবজ্জীবন) ও আদেশ বহাল রাখা হয়।

আজমতের আইনজীবী জয়ন্ত কুমার দেব প্রথম আলোকে বলেন, আজমত আলী মুক্তির পর ওই লিভ টু আপিলের বিষয়ে আর খোঁজখবর রাখেননি। ফলে বাদীপক্ষ রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়টি জানায়নি। অন্য কেউই আর রাষ্ট্রপতির আদেশের বিষয়টি উল্লেখ করেনি।

সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কার্যালয়ের সমন্বয়ক রিপন পৌ স্কু গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, আজমত আলীর মেয়ে বিউটি খাতুন তাঁর বাবার বিষয়ে আইনি সহায়তার জন্য আবেদন করেছেন। পর্যালোচনা সাপেক্ষে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যানের নির্দেশে আপিল বিভাগে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমার পরও ৯ বছর ধরে ওই ব্যক্তির কারাগারে থাকার বিষয়টি সরকারি পর্যায়ে সমন্বয়হীনতার অভাব বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি এখন আইন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত করে দেখা উচিত, কার বা কাদের সমন্বয়হীনতার অভাবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার পরও একজন ব্যক্তি দীর্ঘ ৯ বছর ধরে কারাগারে আছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here