বরিশাল ও সিলেটের সঙ্গে সোমবার রাজশাহী সিটির ১৩৮টি কেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহণ হয়। গণনা শেষে
নগরীর লক্ষ্মীপুরে ল্যাবরেটরি স্কুলে স্থাপিত অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে মধ্য রাতে ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা সৈয়দ আমিরুল ইসলাম।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ১ লাখ ৬৫ হাজার ৯৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির বুলবুল ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৭৭ হাজার ৭০০ ভোট।
অনিয়মের অভিযোগ তুলে এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন বিদায়ী মেয়র বুলবুল; তিনি নিজের ভোটও দেননি। তবে তার এই আচরণকে অসুস্থ রাজনীতির প্রকাশ বলেছেন লিটন।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামিয়া কলেজ কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ তুলে কেন্দ্রের মাঠে অবস্থান নেন বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।
রাজশাহীতে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন এবং নারী ১ লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন।
একজন মেয়র, ৩০ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ১০ জন নারী কাউন্সিলর নির্বাচনে ভোট দেন এই ভোটাররা।
একই দিনে অনুষ্ঠিত সিলেট ও বরিশালে ১৫টি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত হলেও রাজশাহীর কোনো কেন্দ্রে স্থগিত হয়নি।
গত বার ভোট পড়েছিল ৭৬.০৯ %। এবার মোট দুই লাখ ৫০ হাজার ৮৮১ জন ভোট দিয়েছেন বলে রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান।
১৯৮৭ সালে যাত্রা শুরু করা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ২০১৩ সালের নির্বাচনে বুলবুল ৪৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছিলেন আগের বারের মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা লিটনকে। এবার তার শোধ নিলেন লিটন।
ভোটের ফল ঘোষণার আগে লক্ষ্মীপুর মোড়ে লিটন সাংবাদিকদের বলেন, “আজকের এ মুহূর্তটির জন্য রাজশাহীবাসীকে দীর্ঘ পাঁচটি বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। উন্নয়নের কথা বলে যিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তার কাছ থেকে না পাওয়ার বেদনা, দুঃখ ও জ্বালা যন্ত্রণা নিয়ে নগরবাসীকে প্রহর কাটাতে হয়েছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রাজশাহীর উপশহর স্যাটেলাইট টাউন প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিচ্ছে নৌকার প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
“আজকে অনেকদিন পরে নগরবাসী একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা উন্নয়নের পক্ষে, নৌকার পক্ষে এবং আওয়ামী লীগের পক্ষে তাদের রায় দিয়েছে।”জয় পেলেও শান্ত থাকার জন্য সমর্থকদের আহ্বান জানিয়ে লিটন বলেন, “পহেলা আগস্ট পরশু। এ দিনটিতে শোকের মাস শুরু হবে, সে কারণে আমরা কোনো বিজয় মিছিল করব না। তা সবাই মনে রাখবেন।”
প্রয়াত বাবা জাতীয় নেতা এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে স্মরণ করে তিনি বলেন, “এর আগে আমি পৌনে পাঁচ বছর মেয়র ছিলাম। কিছু কাজ করে রাজশাহীর মানুষকে দেখিয়েছিলাম। আমি সেই কাজের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে আরও অনেক কাজ করব।”
সবার সহযোগিতা চেয়ে লিটন বলেন, “আপনাদের বুদ্ধি, পরামর্শ ও সহযোগিতা চাই। আমার ভুল-ত্রুটি হলে আপনার সেটি ধরিয়ে দিবেন। আমি কিচ্ছু মনে করব না। আমি মনে করবো, আপনি আমার শুভাকাঙ্ক্ষী, তাই আমার ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন।”
তিনি বলেন, “পাঁচটি বছর দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে আমি আবার একটি দায়িত্ব পেয়ছি। এ দায়িত্ব গতবারের চেয়েও কঠিন। কারণ সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে এ বিজয় একটি ইতিবাচক সাড়া ফেলবে। এটা আমার বিশ্বাস।”
৫৯ বছর বয়সী লিটন এ নিয়ে তিন বার রাজশাহীর মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেন। তিনবারই তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন বুলবুল।
২০০৮ সালে যুবদলের তখনকার রাজশাহী মহানগর সভাপতি বুলবুলকে ১৩ হাজার ৮১০ ভোটে হারিয়ে মেয়র হয়েছিলেন লিটন। কিন্তু ২০১৩ সালে উল্টে যায় চিত্র। সেবার লিটন হারেন ৪৭ হাজার ভোটে।
তারপরও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি লিটনের উপরই ভরসা রাখে আওয়ামী লীগ। এবার ৮৭ হাজার ভোটে বুলবুলকে হারিয়ে মেয়রের চেয়ারে আবার বসতে চলছেন লিটন।
কামারুজ্জামানপুত্র লিটন ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীও হয়েছিলেন লিটন।