ঢাকা ০১:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্কুলে অনুপস্থিত থেকেও বেতন-ভাতা নেন আ.লীগ নেতার স্ত্রী, বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ এমপির

Reporter Name

পটুয়াখালীঃ

বিদ্যালয়ে ক্লাস না নিয়ে শুধু হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা তুলছেন এক সিনিয়র সহকারী শিক্ষিকা। তিনি স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রী।

ওই শিক্ষিকার নাম সাজেদা বেগম। তিনি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার রাঙ্গাবালী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক।

বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ১৯২৭ সালে রাঙ্গাবালী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৫ সালে ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপীঠে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোদ দেন সাজেদা বেগম। পরবর্তীতে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক হন তিনি।

কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করেছেন সাজেদা বেগম। সাজেদার স্বামী সাইদুজ্জামান মামুন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা, সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি। একই সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডান হাত হিসেবে পরিচিত তিনি।

স্বামী আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে না এসেও বেতন-ভাতা নিচ্ছেন স্ত্রী সাজেদা বেগম। শিক্ষক হাজিরা খাতায় সহকারী শিক্ষক প্রবীর চন্দ্র রায় সাজেদার হয়ে প্রক্সি স্বাক্ষর দেন। তবে বিনা ছুটিতে এক মাস ধরে বর্তমানে ভারতে রয়েছেন প্রবীর চন্দ্র রায়ও। ফলে দুজনের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর নেই।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সাজেদা বেগমের ছেলে স্বর্গ ঢাকার আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। ছেলের লেখাপড়া ও দেখাশোনার জন্য ঢাকায় ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন সাজেদা বেগম। তিনি কখন এলাকায় বা বিদ্যালয় আসেন তার সঠিক তথ্য জানে না কেউ।

রাঙ্গাবালী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির একাধিক শিক্ষার্থী ও কয়েকজন অভিভাবক জানান, চলতি বছর একদিনও বিদ্যালয়ে আসেননি শিক্ষিকা সাজেদা বেগম। ক্লাস নেয়া তো দূরের কথা শিক্ষক হাজিরা খাতায়ও তার স্বাক্ষর নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিনিয়র সহকারী শিক্ষিকা সাজেদা বেগম মুঠোফোনে বলেন, আমিসহ আমার পরিবারের তিন সদস্য টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত। আমরা ঢাকায় চিকিৎসাধীন। বিদ্যালয় থেকে ছুটি নিয়ে ঢাকায় এসেছি আমি। তবে ছুটি শেষ হয়েছে এটি সত্য। এর আগে বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলাম। তবে কতদিন আগে বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি সাজেদা বেগম।

তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হওয়ায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে প্রতিপক্ষরা।

এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, সাজেদা বেগমের ছেলে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। তাই দেড় মাস ধরে ঢাকায় আছেন তিনি। ছুটি নিলেও তার ছুটির মেয়াদ শেষ।

শিক্ষিকা সাজেদা বেগম দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান বলেন, ঘটনাটি আমি জানি। ওই শিক্ষিকার স্বামী বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রভাবশালী হওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিষয়টি শুনেছি। তবে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তবে জেলা শিক্ষা অফিসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শিক্ষিকা সাজেদা বেগম দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত এই বিষয়টি সবাই জানেন। স্থানীয় এমপি এ ব্যাপারে কোনো ধরনের বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন। তাই ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৬:২৯:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯
৩৯৯ Time View

স্কুলে অনুপস্থিত থেকেও বেতন-ভাতা নেন আ.লীগ নেতার স্ত্রী, বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ এমপির

আপডেট সময় : ০৬:২৯:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

পটুয়াখালীঃ

বিদ্যালয়ে ক্লাস না নিয়ে শুধু হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা তুলছেন এক সিনিয়র সহকারী শিক্ষিকা। তিনি স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রী।

ওই শিক্ষিকার নাম সাজেদা বেগম। তিনি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার রাঙ্গাবালী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক।

বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ১৯২৭ সালে রাঙ্গাবালী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৫ সালে ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপীঠে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোদ দেন সাজেদা বেগম। পরবর্তীতে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক হন তিনি।

কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করেছেন সাজেদা বেগম। সাজেদার স্বামী সাইদুজ্জামান মামুন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা, সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি। একই সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডান হাত হিসেবে পরিচিত তিনি।

স্বামী আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে না এসেও বেতন-ভাতা নিচ্ছেন স্ত্রী সাজেদা বেগম। শিক্ষক হাজিরা খাতায় সহকারী শিক্ষক প্রবীর চন্দ্র রায় সাজেদার হয়ে প্রক্সি স্বাক্ষর দেন। তবে বিনা ছুটিতে এক মাস ধরে বর্তমানে ভারতে রয়েছেন প্রবীর চন্দ্র রায়ও। ফলে দুজনের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর নেই।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সাজেদা বেগমের ছেলে স্বর্গ ঢাকার আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। ছেলের লেখাপড়া ও দেখাশোনার জন্য ঢাকায় ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন সাজেদা বেগম। তিনি কখন এলাকায় বা বিদ্যালয় আসেন তার সঠিক তথ্য জানে না কেউ।

রাঙ্গাবালী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির একাধিক শিক্ষার্থী ও কয়েকজন অভিভাবক জানান, চলতি বছর একদিনও বিদ্যালয়ে আসেননি শিক্ষিকা সাজেদা বেগম। ক্লাস নেয়া তো দূরের কথা শিক্ষক হাজিরা খাতায়ও তার স্বাক্ষর নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিনিয়র সহকারী শিক্ষিকা সাজেদা বেগম মুঠোফোনে বলেন, আমিসহ আমার পরিবারের তিন সদস্য টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত। আমরা ঢাকায় চিকিৎসাধীন। বিদ্যালয় থেকে ছুটি নিয়ে ঢাকায় এসেছি আমি। তবে ছুটি শেষ হয়েছে এটি সত্য। এর আগে বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলাম। তবে কতদিন আগে বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি সাজেদা বেগম।

তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হওয়ায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে প্রতিপক্ষরা।

এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, সাজেদা বেগমের ছেলে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। তাই দেড় মাস ধরে ঢাকায় আছেন তিনি। ছুটি নিলেও তার ছুটির মেয়াদ শেষ।

শিক্ষিকা সাজেদা বেগম দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান বলেন, ঘটনাটি আমি জানি। ওই শিক্ষিকার স্বামী বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রভাবশালী হওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিষয়টি শুনেছি। তবে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তবে জেলা শিক্ষা অফিসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শিক্ষিকা সাজেদা বেগম দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত এই বিষয়টি সবাই জানেন। স্থানীয় এমপি এ ব্যাপারে কোনো ধরনের বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন। তাই ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা।