ভালবেসে বিয়ে এরপর সেই স্বামীর হাতেই জখম হয়ে হাসপাতালে স্ত্রী
কুষ্টিয়াঃ
কুষ্টিয়া শহরের মিলপাড়া এলাকার লিখন খাতুন (২২) গত ২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে বাবা মাকে কিছু না জানিয়ে ভালোবেসে কয়া ইউনিয়নের গোট্টীয়া গ্রামের সুমন হোসেন (২৮) কে বিয়ে করেন। লিখন খাতুন শহরের মিলপাড়া এলাকার রখির শেখের মেয়ে ও সুমন হোসেন কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের গোট্টীয়া গ্রামের ইসলাম শেখের ছেলে।
বিয়ের পর সুমনের পরিবার তাদের বিয়ে না মানায় বাড়ি ছাড়তে হয় সুমনকে। কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে সুমন ও লিখন খাতুন ঢাকাতে গিয়ে গার্মেন্টসে চাকরি শুরু করেন। তারপর শুরু হয় সংসার। বেশ কিছুদিনের অভাব অনাটনের সংসারে গত বছরে সুখ আসে। কিন্তু সেই সুখ বেশি দিন কপালে টিকে নি গার্মেন্টসে চাকুরীজীবি গৃহবধূ লিখন খাতুনের। বিয়ের পর কামার বাবা ও শহরের একটি ঔষুধের দোকানে কর্মরত মায়ের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ হয়নি লিখন খাতুনের।
অন্যদিকে অল্প অল্প করে সুমনের পরিবারের সাথে যোগাযোগ হয় সুমনের। এরপর শুরু হয় বিভিন্ন ঝামেলা। সুমনের পরিবারের ঋণ-দেনা থাকায় সব সময় সুমনের উপর তার টেনশন গিয়ে পড়ে। এমন টেনশন হলেই সুমন তার রাগ আমার উপর তুলে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্নভাবে নরপশুর মত নির্যাতন চালিয়ে আসছে সুমন। আমি ভেবেছিলাম এই বুঝি সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তা আর হয়নি প্রতিমূহুর্তে নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। আমার বাবার কাছ থেকে যৌতুকের দুই লক্ষ টাকা এনে দিতে বলে। আমি তো জানি এত টাকা আমার বাবা মায়ের পক্ষে দেওয়াটা সম্ভব না। ওই দিন বুঝতে পারি আমার ভালোবাসার ঘরেও আগুন লেগেছে। টাকা দিতে অপারগতা জানালে প্রায় প্রতিদিনি আমার উপর শারিরীক নির্যাতন চালায় সুমন।
কিন্তু এর মাত্রা ছাড়িয়ে যায় গত, ১৬ সেপ্টেম্বর সোমবার সকালে আমার উপর নির্যাতনের মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করে চাপাতি দিয়ে শরীর বিভিন্ন অংশে নৃসংশভাবে কুপিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে। এখন প্রতিদিন নেশাসহ খুব জঘন্য কিছু কাজ করে সুমন।
আক্ষেপ করে এভাবেই কথা বলছিলেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় বান্দার বেড এ সুয়ে থাকা নরপশু স্বামী সুমনের নির্যাতনের শিকার হওয়া লিখন খাতুন। লিখন খাতুন আরো বলেন, এমন স্বামীর ঘর করা সম্ভব? যে আমাকে হত্যা করার কথা বলে। হত্যা করার সব চেষ্টা করেছিলো সুমন। একটুর জন্য আমি প্রাণে বেঁচে গেছি। যে বাসায় থাকতাম ওই বাসার ভাড়াটিয়া ভাবি যদি হাসপাতালে না নিয়ে যেত আজ আমি হয়তো পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতাম। তবে আমার যে এত বড় ক্ষতি করলো ওর আমি কঠোর শাস্তি দাবি করছি।
এদিকে সুমন হোসেনের সাথে মুঠোই ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
নির্যাতনের শিকার হওয়া লিখন খাতুনের বাবা রখির শেখ বলেন, গরিব বলে কি আমার মেয়েকে এমন নিসংশভাবে যে কুপিয়েছে ঐ নড়পশুর বিচার পাবো না? মডেল থানায় মামলা করতে গেলে বলা হয় যে এলাকায় এঘটনা ঘটেছে ওই থানায় মামলা করতে বলছে। তাই মডেল থানার (ওসি) ও কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারের সহযোগীতা কামনা করছি।
কয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়ারুল হক স্বপন বলেন,এরকম ঘটনা ঘটেছিলো এর আগে আমি শুনেছি। ঐ নারীর শরীরে বিভিন্ন অংশে নিসংশ ভাবে কুপিয়ে ক্ষত বিক্ষত করেছে এটা আমার জানা ছিলো না। আমি এখন হাসপাতালে লোক পাঠিয়ে খোঁজ নিচ্ছি। সুমনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার (ওসি) নাসির উদ্দিন বলেন,ঢাকার যেই থানা এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে সেই থানায় অভিযোগ দিলে ঐ অভিযোগপত্রটি পেলেই তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।