ঢাকা ০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অভিশাপে যেন ধ্বংস হয়ে যায় এই অসুস্থ সমাজ: শাওন

Reporter Name

সবুজদেশ ডেস্কঃ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন দেশ-বিদেশের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

কেউ রাজপথে নেমে, আমার কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে লোমহর্ষক এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করছেন।

ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন আবরার। এর জের ধরে রোববার রাতে আবরারকে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা।

আবরারের ক্ষত-বিক্ষত পিঠের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ছবি দেখে চোখের পানি ফেলছেন দল-মত নির্বিশেষে সবাই। অনেকেই ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাসের পাশাপাশি জানাচ্ছেন তীব্র প্রতিবাদ।

এবার সেই প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন। আবরার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন মেহের আফরোজ শাওন।

তিনি লিখেছেন, বুয়েটের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগেরই ‘৬৯ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন আমার বাবা। সারা জীবন তার মুখে গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হওয়া এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার স্বপ্ন ছিল আমারও। ভর্তি পরীক্ষার ফরম তোলার সময় ঢাকার বাইরে থাকায় পরীক্ষাই দিতে পারিনি আমি! সেই দুঃখ ভোলার জন্য প্রায়ই ভেবেছি পুত্রদ্বয়ের যে কোনো একজন যেন এই মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অংশীদার হতে পারে।

এ প্রতিষ্ঠানের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগেরই ছাত্র ছিল আবরার। আবরারের কথা ভাবি আর আমার পুত্রদ্বয়ের মুখের দিকে তাকাই। আমার বুক কাঁপে। বাচ্চা দুটোর পিঠ হাত-পা’র ওপর হাত বুলিয়ে দেই। ছোটবেলায় এরকম ছোট ছোট হাত পা-ই তো ছিল আবরারের! তার মা কত রাত পিঠে হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে তাকে!

একেকটা আঘাতে ছেলেটা কি ‘মা গো’ বলে চিৎকার দিয়েছিল? ‘মা গো’ ডাক শুনে খুনি ছেলেগুলোর কি একটুও নিজের মার কথা মনে পড়েনি। ঠিক কতবার। কতক্ষণ ধরে, কতটুকু আঘাত করলে ২০-২১ বছরের একটা তরুণ ছেলে মরেই যায়। আমি আর ভাবতে পারি না।

ফেসবুকে আবরারের পিঠটার ছবি দেখলাম। কি ভয়ংকর। কি নৃশংস। কি কষ্ট। এ ছবিটা যেন তার বাবা-মা’র চোখে না পড়ে। ভুল বলেছি। আবরারের বাবা, আবরারের মা তাদের বাবুটার ক্ষতবিক্ষত পিঠে হাত বুলিয়ে যেন অভিশাপ দেন মানুষের মতো দেখতে খুনি অমানুষগুলোকে। তাদের অভিশাপে যেন ধ্বংস হয়ে যায় এই অসুস্থ সমাজ।

নুসরাতকে ভুলে গিয়েছি। আবরারকেও ভুলে যাব বিচার চাই বলে লাভ আছে কিনা জানি না- তবুও বিচার চাই।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৭:৩৩:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০১৯
৩৫৪ Time View

অভিশাপে যেন ধ্বংস হয়ে যায় এই অসুস্থ সমাজ: শাওন

আপডেট সময় : ০৭:৩৩:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০১৯

সবুজদেশ ডেস্কঃ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন দেশ-বিদেশের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

কেউ রাজপথে নেমে, আমার কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে লোমহর্ষক এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করছেন।

ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন আবরার। এর জের ধরে রোববার রাতে আবরারকে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা।

আবরারের ক্ষত-বিক্ষত পিঠের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ছবি দেখে চোখের পানি ফেলছেন দল-মত নির্বিশেষে সবাই। অনেকেই ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাসের পাশাপাশি জানাচ্ছেন তীব্র প্রতিবাদ।

এবার সেই প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন। আবরার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন মেহের আফরোজ শাওন।

তিনি লিখেছেন, বুয়েটের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগেরই ‘৬৯ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন আমার বাবা। সারা জীবন তার মুখে গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হওয়া এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার স্বপ্ন ছিল আমারও। ভর্তি পরীক্ষার ফরম তোলার সময় ঢাকার বাইরে থাকায় পরীক্ষাই দিতে পারিনি আমি! সেই দুঃখ ভোলার জন্য প্রায়ই ভেবেছি পুত্রদ্বয়ের যে কোনো একজন যেন এই মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অংশীদার হতে পারে।

এ প্রতিষ্ঠানের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগেরই ছাত্র ছিল আবরার। আবরারের কথা ভাবি আর আমার পুত্রদ্বয়ের মুখের দিকে তাকাই। আমার বুক কাঁপে। বাচ্চা দুটোর পিঠ হাত-পা’র ওপর হাত বুলিয়ে দেই। ছোটবেলায় এরকম ছোট ছোট হাত পা-ই তো ছিল আবরারের! তার মা কত রাত পিঠে হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে তাকে!

একেকটা আঘাতে ছেলেটা কি ‘মা গো’ বলে চিৎকার দিয়েছিল? ‘মা গো’ ডাক শুনে খুনি ছেলেগুলোর কি একটুও নিজের মার কথা মনে পড়েনি। ঠিক কতবার। কতক্ষণ ধরে, কতটুকু আঘাত করলে ২০-২১ বছরের একটা তরুণ ছেলে মরেই যায়। আমি আর ভাবতে পারি না।

ফেসবুকে আবরারের পিঠটার ছবি দেখলাম। কি ভয়ংকর। কি নৃশংস। কি কষ্ট। এ ছবিটা যেন তার বাবা-মা’র চোখে না পড়ে। ভুল বলেছি। আবরারের বাবা, আবরারের মা তাদের বাবুটার ক্ষতবিক্ষত পিঠে হাত বুলিয়ে যেন অভিশাপ দেন মানুষের মতো দেখতে খুনি অমানুষগুলোকে। তাদের অভিশাপে যেন ধ্বংস হয়ে যায় এই অসুস্থ সমাজ।

নুসরাতকে ভুলে গিয়েছি। আবরারকেও ভুলে যাব বিচার চাই বলে লাভ আছে কিনা জানি না- তবুও বিচার চাই।