মিলন মেলা: শীত পালিয়েছে বন্ধুদের উষ্ণতায়
শাহরিয়ার আলম সোহাগঃ
মনে পড়ে যায় বন্ধুদের আড্ডা মুখর প্রহর, তুমুল উল্লাসে ভরা প্রিয় শহর। সেখানে হয়তো সবাই, ব্যস্ত মেলেনা সময়, তবুও সেখানেই ফিরে যেতে চাই ফেরারী হৃদয়। এই গানটি হয়তো সবারই জানা। মাত্র দুই দিনের জন্য সেই ছেলেবেলায় ফিরে যেতে চাই তারা। কিন্তু আসলেই কি ফিরতে পেরেছে? সময়ের সাথে সাথে সবকিছুই পরিবর্তন হয়ে যায়। হারানো ছেলেবেলা এখন আর ফিরে পাওয়া সম্ভবও না। কিন্তু সেইসব হারানো বন্ধুরা যখন সবাই একই জায়গায়, তখন কিছুটা ছেলেবেলার দুষ্টামি হতেই পারে।
শীতের তীব্রতা একটু বেশিই এ অঞ্চলে। কিন্তু হারানো বন্ধুদের ভীড়ের উষ্ণতায় শীত যেন ভয় পেয়েছে। এক এক ব্যাচের এক এক রঙের পোশাক। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মোবারকগঞ্জ চিনিকল মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গন যেন উৎসবের রঙিন হয়ে উঠেছে। হারানো বন্ধুদের পেয়ে কেউ খোশ গল্প আবার কেউ সেলফি তুলতে ব্যস্ত। অনেকে আবার আবেগ আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।
সকালে আইডি কার্ড ঝুলিয়ে মাঠে প্রবেশ করে প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা। এরপর বেলুন উড়িয়ে শুভ উদ্বোধন করা হয়। ব্যাচের নিজস্ব টেন্টে বসে সবাই খোশ গল্পে মাতোয়ারা। এদিকে অনুষ্ঠান মঞ্চে অতিথি ও আয়োজকদের স্মৃতিচারণা। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সবাই যার যার মতো হারানো বন্ধুদের পেয়ে মাতোয়ারা। মঞ্চে ডেকে কয়েকজন রত্নগর্ভা মাকে দেওয়া হয় সম্মাননা। এরপর র্যালি শুরু হয় বিদ্যালয় চত্ত্বরে।
দুপুরের খাবারের সময় সবাই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে খাবার সংগ্রহ করে। এরপর একে অপর এক বন্ধুকে খাওয়ায় দিচ্ছে। এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি।
১৯৮২ সালের এসএসসি ব্যাচের এ্যাডভোকেট শারমিন আক্তার বলেন, এ যেন এক অন্যরকম ভালোলাগা। যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। অনেকের চিনতে পারছি না। আবার অনেকে আমাকে চিনতে পারছে না। বহু বছর পর আজ সবাই একত্রিত হলাম। আবার কবে হবো জানি না।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মোবারকগঞ্জ চিনিকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের দুই দিন ব্যাপী মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুক্রবার সকাল ১০টায় বেলুন উড়িয়ে ও পতাকা উত্তোলন করে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার।
প্রাক্ত ছাত্র মাসুদ করিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম,মোবারকগঞ্জ চিনিকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম, মোচিক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি গোলাম রসুল, সাবেক শিক্ষক লিয়াকত আলী, গোলাম রব্বনী প্রমুখ। এর পর একটি বণার্ঢ্য র্যালী বিদ্যালয় প্রাঙ্গন থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
মিলন মেলা বা পুর্ণ মিলনীতে দুই দিন ব্যাপী নানা কর্মসূচী হাতে নেওয়া হয়েছে। পুর্ণমিলনীতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বর্তমানে বিদ্যালয়ে একটি কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করে দেওয়া হয়। এছাড়াও দুই দিনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রত্যেক ব্যাচের স্মৃতিময় বক্তব্য প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠান শেষ হবে শনিবার সন্ধ্যায়। এবারের পুর্ণমিলনীতে ১৯৮১ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৫শ শিক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করছে।
ভিডিও দেখুন…